আব্দুল হাই সঞ্জু : অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, ‘সর্বশেষ নির্বাচনে হয়তো ৩০ শতাংশেরও কম ভোট পড়েছিলো এবং পরে আরও ৫০ শতাংশ বেশি করে তা দেখানো হয়েছে’। ‘যখন ইউনিয়ন পরিষদ অথবা নগর পর্যায়ে নির্বাচন হয় তখন স্থানীয় প্রার্থীরা অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। তারা তাদের আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাক্সক্ষী সবাইকেই ভোট দিতে উৎসাহিত করে। তাই কোনোভাবেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার জাতীয় নির্বাচনের থেকে বেশি হতে পারে না’। আমিও ক’দিন আগে এক স্ট্যাটাসে বলেছি, সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আরও বেশি হওয়ার কথা ছিলো, এলাকাভিত্তিক জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের কারণে। আকবর আলি অবশ্য বলেননি, বাকি পঞ্চাশ শতাংশ এবার কেন ম্যানেজ করা সম্ভব হয়নি। তিনি হয়তো ইভিএম মেশিনকে এই অগ্রগতির জন্য ধন্যবাদ দেবেন। আমি অবশ্য ভিন্ন থিওরি দিয়ে বলেছি, ‘কমিশনার প্রার্থীরা সাধারণত এলাকার প্রভাবশালী, পরিচিত মুখগুলোই হয়। এসব প্রার্থীদের মধ্যে আবার দা-কুমড়া সম্পর্ক। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলেই ছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থী। এলাকায় নিরাপদে-শান্তিতে থাকতে হলে কমিশনার প্রার্থীদের খুশি রাখতেই হবে, খুশি রাখতে না পারলে অন্তত রাগানো যাবে না। মেয়র প্রার্থী আপনার ঘর চেনে না, আপনার পরিবারের হাঁড়ির খবর জানে না, যে রকম জানে কমিশনার প্রার্থী। এ রকম লোককে কে না ভয় পায়।
এখন ভোটকেন্দ্রে গেলে তো মেয়র পদে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি কমিশনার প্রার্থীকেও ভোট দিতে হবে। ভোট না দিলেও কমিশনার প্রার্থীরা ধরে নেবে আপনি একজনকে তো ভোট দিয়েছেনই। তখন আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ভোটকেন্দ্রেই যাওয়ার দরকার নেই, অসুস্থ ছিলাম, ব্যস্ত ছিলাম ইত্যাদি বলে চালিয়ে দেবো। থিওরেটিক্যালি এ কারণেই ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছিলো’। এখন যতোক্ষণ পর্যন্ত কম ভোটার উপস্থিতির কারণ ফরেঞ্জিক্যালি প্রমাণ করা যাবে না ততোক্ষণ সবই থিওরি। একটা স্বচ্ছ ভোট প্রক্রিয়ার অন্যতম শর্ত হলো পরবর্তীতে ভোট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা প্রমাণ করার প্রতিটি ধাপ রিপ্লে করে দেখা সম্ভব হতে হবে। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে মানবিক এবং যান্ত্রিক দুই ধরনের মিশ্রণে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। গোপন ব্যালট হওয়ার কারণে বুথের উপর সিসিটিভি না থাকলেও ভোট কক্ষে সিসিটিভি থাকলে সেটি পরবর্তীতে ফরেঞ্জিক পরীক্ষায় সহায়ক হতে পারে। আর ভোটারের নিজ আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোট দেওয়ার পর ইভিএম মেশিন থেকে একটা প্রিন্টেড রিসিট দেওয়া হলে সেটিও অনেক বেশি সহায়ক হতে পারে, অনেকটা শপিংয়ের রিসিটের মতো। হাজার কোটি টাকা ইভিএম মেশিনে বিনিয়োগের পর এখন আরও হাজার কোটি টাকা ইভিএম মেশিনের ইম্প্রুভাইজেশনে বিনিয়োগ করার পাশাপাশি ভোট কক্ষগুলোতে সিসিটিভি স্থাপনে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। কিন্তু সব কথার শেষ কথা হলো ইচ্ছা থাকলে এতো সব না করেও স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। ফেসবুক থেকে