অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায় : ভারতে ৯০ কোটি ভোটার। তার মধ্যে ২৩ কোটি ভোটার বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলো ২০১৯ সালে। আচ্ছা এখুনি যদি একটা স্বচ্ছ লোকসভা ভোট হয়ে যায়, তখন কী এই ২৩ কোটি মানুষের ভোট থাকবে? ভক্তরা বলতে পারেন, ‘আরও বাড়বে’। মোটেই বাড়বে না। বরং তলানিতে চলে আসবে। কারণ সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এই সরকার। এই ২৩ কোটি ভোটারের সবাই তো ভক্তদের নয়, সাধারণ মানুষও আছেন, যারা নরেন্দ্র মোদীকে বিশ্বাস করেছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন নতুন ভারতবর্ষের। মিথ্যাচারকে সত্যাচার ভেবে ফেলেছিলেন। সর্পকে রজ্জু ভেবেছিলেন। নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখিয়ে বাকি ৬৭ কোটি মানুষের ভাবনাকে হরণ করে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছে বিজেপি।
বেশিরভাগ হিন্দু নাগরিকদের রক্তে মুসলিম-বিদ্বেষ ঢুকিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তাই বিজেপি সংসদ সদস্য দিল্লির বিধানসভার নির্বাচনেও প্রচার করছে, ‘ক্ষমতায় এলে দিল্লির সব মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবো’। ভাবতে খারাপ লাগছে, এমন ভয়ংকর প্রতিশ্রুতিতে দিল্লির মানুষ বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনবে? নাকি বুমেরাং হবে?
আক্ষেপের কথা নরেন্দ্র মোদী বিজেপি তথা আরএসএসের প্রতিনিধি হয়েই থেকে গেলেন, দেশের ১৩০ কোটি মানুষের প্রধানমন্ত্রী হয়ে উঠতে পারলেন না। এমন প্রধানমন্ত্রী স্বাধীন ভারতের অতীতে একটিও এসেছিলো কিনা মনে পড়ছে না। তবে ব্রিটিশ আমলে এমন শাসক প্রচুর ছিলো বৈকি। বিজেপি ভক্তদের এটা মনে রাখা দরকার যে, যে ৩১ শতাংশ মানুষ ২০১৪ সালে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলো, আমি তাদের মধ্যে ছিলাম না। যে ৩৭ শতাংশ মানুষ ২০১৯ সালে ভোট দিয়েছিলো বিজেপিকে, আমি সেই দলেও ছিলাম না। তা সত্ত্বেও এটা তো সত্য, শুধু হিন্দু ভোটের জোরে বিজেপি ক্ষমতায় আসেননি। ক্ষমতায় এসেছেন সাধারণ মানুষের ভোটে। সেটা ২৩ কোটি হলেও একটা সংখ্যা তো বটে।
৯০ কোটি ভোটারের মধ্যে এই ২৩ কোটি ভোটার তথা মানুষ বিজেপির সঙ্গে আছে, যারা বিজেপি দেশসহ দেশের সব কিছু বিক্রি করার অধিকার দিয়েছে। বিজেপি তো সেই আশ্বাসেই এগিয়ে চলেছে। সারা দেশজুড়ে বিরোধিতা চলছে। ধারাবাহিকভাবে বিরোধিতা চলছে। সে সবই পতাকাহীন সাধারণ মানুষ করছে। এখনো পর্যন্ত কোনো জাতীয় রাজনৈতিক দল সর্বভারতীয়ভাবে আন্দোলন করে উঠতে পারেনি। কোনো বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলের উত্থান হচ্ছে না। অনাস্থায় সরকার ফেলে দেওয়ার মতো শক্তি কোনো দলই অর্জন করতে পারছে না। সবাই লুকিয়ে লুকিয়ে বিজেপির হাতে তামুক খাচ্ছে না তো। মাৎস্যন্যায় চলছে খোলা হাওয়ায়। আশ্চর্য। ফেসবুক থেকে