আক্তারুজ্জামান : জীবনের শুরুর দিকে সোফিয়া দেখেছেন তার বাবা আলেকজান্ডার কেনিন জীবনধারনের জন্য নিউ ইয়র্কের রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছেন। সংসার চালিয়ে উদ্বৃত্ত থাকা সামান্য অর্থ দিয়ে কিনতেন মেয়ের টেনিস খেলার সরঞ্জাম। বাবা উৎসাহও দিতেন বড় হওয়ার। সে উৎসাহ কাজে লেগেছে সোফিয়া কেনিনের। জীবনে প্রথমবার কোনো গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালে উঠে জিতেছেন শিরোপাও। এরপরও পুরো কৃতিত্ব দিয়েছেন বাবাকে। যে বাবা ছিলেন তার জীবনের প্রথম প্রশিক্ষক।
শনিবার রাতে মেলবোর্নের রড লেভার আরিনায় প্রথম সেটে পিছিয়ে থেকেও পরের তিন সেটে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতে নিয়েছেন জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সোফিয়ার প্রথম প্রতিক্রিয়া, এতদিনে স্বপ্নপূরণ হলো। আগামী বছর আবার এখানে খেলতে আসবো। গত দু’সপ্তাহ আমার জীবনের সেরা সময় কাটালাম অস্ট্রেলিয়ায়। আর এর সবটুকু অবদান আমার বাবার। খুব ছোট থাকতেই যিনি আমাকে এতো বড় স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।
মেয়ে যখন চ্যাম্পিয়ন হয়ে দর্শকদের অভিবাদন কুড়োচ্ছেন, তখন তার বাবার চোখে আনন্দাশ্রু। আসলে কেনিনের জীবনের প্রথম কোচও যে তার বাবা! প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় আগে ১৯৮৭ সালে জন্মভূমি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ছেড়ে মার্কিন মুলুকে চলে এসেছিলেন আলেকজান্ডার। চরম জীবনসংগ্রামের দিন ছিল তার। সকালে ইংরেজি ও কম্পিউটার ক্লাসে শিক্ষাগ্রহণ। ইংরেজি না জেনেও রাতের বেলায় গাড়ি চালিয়ে উপার্জন করতেন। এই ছিল আলেকজান্ডারের সেই সময়ের দিনলিপি।
যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে কেনিন পরিবার ফিরেছিলো মস্কোতে। সেখানেই ১৯৯৮ সালে জন্ম সোফিয়ার। ফ্লোরিডাতে নিজেদের বাড়ির সামনে ফাঁকা রাস্তায় বল নিয়ে প্রায়ই খেলতে চলে যেত ছোট্ট সোফিয়া। সেখানেই বাবার কাছে সোফিয়ার প্রথম টেনিসের পাঠ নেয়া। তিন বছর বয়সে তার চেয়ে আয়তনে বড় বাবার র্যাকেট নিয়েই প্রথম টেনিস খেলতে নেমেছিল এ বারের অস্ট্রেলিয়া ওপেন জয়ী।
যে প্রসঙ্গে আলেকজান্ডার বলছেন, অবসর সাময়ে বাড়ির সামনে রাস্তাতেই মেয়ের সঙ্গে টেনিস খেলতাম। মেয়ের যখন ১০ বছর বয়স, তখন দেখলাম ও খুব জোরে বল মারছে। পরেই স্থানীয় টেনিস কোচের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম মেয়েকে। সেখানে বয়সে বড় ছেলেমেয়েদের সঙ্গেই ভর্তি নেয়া হয় ওকে। ক্রমে ওদের ছাপিয়েই দারুণ খেলতে শুরু করে ও। তার পরে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তখন ফের গাড়ি চালাতে শুরু করেছিলাম।