অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : আবারও নির্বাচনী জ্বরে কাঁপছে বাংলাদেশ। নির্বাচন ঢাকাতে। কিন্তু রাজধানী বলে কথা। ঢাকার নির্বাচনী উত্তাপ তাই ছড়াচ্ছে ঢাকার গ-ি পেরিয়ে সাড়া বাংলাদেশে। এবারের নির্বাচনে সরগরম যে আমেজ তার আরেকটা কারণ বোধকরি দীর্ঘদিন পর বিএনপি আবারও রাজনীতিটা রাজনীতির মতো করে করার চেষ্টা করছে। এবার এখনো নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়নি দলটি। চেষ্টা করছে না ভাড়াটে নেতার ঘাড়ে ভর দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পেরনোরও। সবচেয়ে বড় কথা সাত-সমুদ্দুর তের নদীর ওপার থেকে নির্বাচনের কলকাঠি নাড়াচাড়ার বিষয়গুলোও এখন পর্যন্ত তেমন একটা শোনা যাচ্ছে না। কাজেই প্রায় ১১ বছর পর নির্বাচন করার সুযোগ পেয়ে দলে নেতাকর্মীরাও মাঠে নামছে ঠিকঠাক মতোই।
আমি ছাপোষা ডাক্তার। রাষ্ট্রের ক্ষমতার শীর্ষে কে এলো-গেলো তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা সামান্যই। আমি শুধু চাই সরকারে থাকুক বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া সংগঠন, ক্ষমতার শীর্ষে থাকুক বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার আর দেশটা চলুক বঙ্গবন্ধুর দেখিয়ে যাওয়া অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা আর একাত্তরের চেতনার পথে। এতেই আমি সুখী। ব্যস, এতোটুকু হলেই আমার চলে। কিন্তু মেয়র নির্বাচনের বিষয়টা একেবারেই অন্য রকম। সকাল বেলা ক’টার সময় ঘর থেকে বের হলে ঠিক সময় কাজে পৌঁছাতে পারবো, ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কায় আমাকে নিদ্রাহীন রাত্রিযাপন করতে হবে কিনা কিংবা বেপরোয়া ট্রাফিকের অত্যাচারে বেড়ে যাওয়া প্রেশারের কল্যাণে হাসপাতালে পৌঁছে রোগীর সঙ্গে আমি ভালো ব্যবহার করতে পারবো কী পারবো না অথবা দূষিত পরিবেশে শ্বাস নিতে গিয়ে আরেকদফা অসুস্থ হবো কী হবো না, ইত্যকার যাবতীয় বিষয়ের জন্যই আমরা এই শহরের মেয়রের ওপর নির্ভর করি। রাস্তায় জ্যাম থাকলে গালি দিই মেয়রকে, গাল খান মেয়র, ঢাকায় মশার উপদ্রব কিংবা ঢাকার বাতাসে ধোঁয়ার মাত্রাটা বেড়ে গেলেও। ঢাকায় যদি পান থেকে খসে চুন, তাতেই মেয়র মহোদয়কে শাপ-শাপান্ত করতে আমাদের এক সেকেন্ডও দেরি হয় না। কিন্তু একজন সাবেক পেশাজীবী আমলার সন্তান হিসেবে আমি জানি ঢাকার মেয়রদের ক্ষমতার দৌড় কতোখানি।
২. আমি চাই না যে ঢাকায় আমরা টোকিও সিটি গভর্নমেন্টের আদলে মেয়রের নেতৃত্বে একটি আলাদা প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করি।
আমি মনে করি না আমরা সবাই এখনো গণতন্ত্র চর্চার আর বোঝার সেই মার্গে পৌঁছাতে পেরেছি, যেখানে দেশের জন্য একটি সরকার আর কার্যত ঢাকার জন্য আরেকটি সরকার সফল হবে। কাজেই আমার চাওয়া এমন একজন মেয়র যিনি তার ক্ষমতা, ক্যারিশমা আর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুষ্ঠু কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে আমাকে একটা বাসযোগ্য শহর দেবেন। আমি জানি মেয়রের কাছে কোনো জাদুরবাক্স নেই। আগামী পাঁচটি বছর দিনকে তারা রাত বানাতে পারবেন না। আমি শুধু চাই পিতা হিসেবে আমার সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনে আমার যে সততা আর নিষ্ঠা, সেটুকু আমি আমার নগরের পিতার কাছ থেকে পাবো।
আমি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা। আমার মাথায় তাই উত্তরের নির্বাচন আর সামনে বেছে নেওয়ার মতো প্রার্থী বাস্তবে দুজন। আমি দলীয় রাজনীতির দোষে দুষ্ট হয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। সে কারণেই আমার পছন্দের তালিকার বাইরে যে মেয়র প্রার্থী তার ইতিহাস আর ভবিতব্য বিশ্লেষণেও আমি যাবো না। আমি দেখছি আমার সামনে অন্তত এমন একজন মেয়র প্রার্থী আছেন যিনি বিজিএমইএ সভাপতি হিসেবে রানাপ্লাজার ধসের মতো ধসে যাওয়ার হাত থেকে আমাদের গার্মেন্টস শিল্পকে রক্ষা করার যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আমি দেখেছি কী অসাধারণ মমত্ব নিয়ে তিনি সেদিন অসহায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তার কৃষ্টি ঘাটতে গিয়ে আমি জেনেছি তিনি একেবারেই নিজের চেষ্টায় আজকের অবস্থায় এসেছেন। জন্মের সময় তার মুখে অন্য চারজনের মতো সোনার কোনো চামচ ছিল না। আমি ঘেটেছি তার পরিবার পরিচিতিও। ৩. আমি কখনোই চাই না, কোনো কিছুর বিনিময়েই মেনে নিতে পারি না যে আমার নগরে এই সময় এমন একজন পিতা থাকবেন যার নেতৃত্ব রঞ্জিত নিরাপরাধের রক্তে, যার নেতৃত্বের হাতে পোড়া মানুষের গন্ধ, যার নেতৃত্ব দুর্নীতির রায়ে কারাগারে কিংবা দেশছাড়া আর যার নেতৃত্বের সূর্য উদিত হয় পাকিস্তানে আর ডোবেও সেখানেই। আগামী এক তারিখে আমার সিদ্ধান্ত তাই খুবই স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার। ঈষৎ সংক্ষেপিত। ফেসবুক থেকে। লেখক : চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :