জহিরুল ইসলাম : লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নিরব হোসেন নামে (১৬) এক কিশোরকে মারধর করাসহ ঝাড়ু ও জুতার মালা গলায় পরিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
বর্তমানে দোকানের কর্মচারী ওই কিশোরকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ভিকটিমের শ্রমের টাকা না দিয়ে তাকে নির্যাতন করে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীসহ পরিবার। এ ঘটনায় সোমবার ভুক্তভোগীর নানী বাদী হয়ে সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে দোকান মালিক রাশেদ ও ইসমাইল হোসেনকে আটক করে।
এদিকে ঝাড়ু ও জুতার মালা গলায় পরিয়ে কিশোরকে এলাকায় ঘুরানোর ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণসহ এ ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
শনিবার বিকালে নিজ কর্মরত দোকান থেকে টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে এ ভাবেই বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয় ১৬ বছর বয়সী এই কিশোরকে। শুধু তাই নয় তার গলায় ঝাড়ু ও জুতার মালা পরিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। সেই নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও তুলে ছেড়ে দেয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যা এখন ভাইরাল। নির্যাতনের পর তাকে থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের ২ নং ওয়ার্ডের জালালিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায়।
পরে পুলিশের কাছ থেকে তাকে ছাড়িয়ে এনে দোকান (চামড়ার দোকান) মালিক শালিশি বৈঠকের আয়োজন করেন। এতে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ মাতব্বররা ওই কিশোরকে দোষী সাব্যস্ত করে তার (কিশোরের) জরিমানা করেন ৩০ হাজার টাকা।
কিন্তু এতিম ওই কিশোরের দায়িত্ব নিতে রাজি হননি নানা ও নানী। এতেই হট্টগোল শুরু হয়ে আবারো মারধর করা হয় তাকে। রোববার রাত ৯ টায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় ল²ীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ভুক্তভোগী কিশোরকে। সোমবার সকালে ভুক্তভোগীর নানী আলেয়া বেগম থানায় অভিযোগ করেন।
জানা যায়, ৬ মাস ধরে স্থানীয় রাশেদের চামড়ার দোকানে কাজ করতেন মৃত কিরন হোসেনের ছেলে নিরব হোসেন। এরই মধ্যে তার মাকেও হারাণ সে। দোকানে মাসিক শ্রমের টাকা পাননা বলে অভিযোগ তার। খোঁজাখুজির পরও দোকান মালিক রাশেদের কাছ থেকে মিলেনা পারিশ্রমিক। তাই বাধ্য হয়ে মালিকের অগোচরে নিজের পাওনা টাকাই নেন বলে দাবি করেন ওই কিশোর।
পরে শালিসি বৈঠকে স্থানীয় কাউন্সিলর ও মাতাব্বররা তার ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। তবে কাউন্সিলর শিপন ও সালিশদার ইসমাইল ঝাড়ু ও জুতার মালা পরিয়ে দেয়ার ঘটনা সম্পর্কে অবহিত নন বলে দায় এড়াতে চান।
সদর থানার ওসি (তদন্ত) মোছলেহ উদ্দিন জানান, নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় দুই জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। সম্পাদনা : মুরাদ/ জেরিন