ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে অংশ নিতে আগামী সপ্তাহেই আসছেন বিশ্ব নেতারা। আসবেন ব্যবসায়ী নেতৃত্বও। জানুয়ারির এই সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য জলবায়ু পরিবর্তন রোধ। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্যেই নয়, বরং এর পরিবর্তনে বিশ্বের অর্থনৈতিক অগ্রগতিও হুমকির মুখে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক নানা সংস্থার মতে এর ফলে পুরো পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি উৎপাদন প্রবৃদ্ধি হারিয়ে যেতে পারে।
নূর মাজিদ: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই হুমকির মুখে পৃথিবীর অর্ধেক জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ফলেই ধীরে ধীরে সকল খাতের ব্যবসা এবং উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব বাড়ছে। ছোট্ট একটি উদাহরণ দিলেই জলবায়ু হুমকির দিক স্পষ্ট হয়। গতবছর ছিলো বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির রেকর্ড বছর। একইসঙ্গে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার দ্বিতীয় উষ্ণতম বছর ছিলো এটি। তীব্র তাপমাত্রার কারণেই এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল এবং অস্ট্রেলিয়ায় সৃষ্ট দাবানল বিপুল ধবংসযজ্ঞ চালায়। শুধু প্রাকৃতিক বনভূমি নয় এসব দাবানলে প্রচুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এসব ব্যবসায় ঋণ দেয়া নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। খবর : সিএনবিসি।
ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম-ডব্লিউইএফ খ্যাতনামা হিসাব রক্ষণ সংস্থা প্রাইসওয়াটার্স কর্পের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে এসকল নেতিবাচক ঘটনায় বিশ্ব অর্থনীতির মোট ক্ষতি অনুমানের প্রয়াস করে। সংস্থাদুটির হিসেবে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির অর্ধেক বা ৪৪ লাখ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিকাশ সরাসরি প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যের উপর নির্ভরশীল। এছাড়াও, পর্যটন ও অন্যান্য সেবাভিত্তিক ব্যবসার জন্য প্রাকৃতিক স্থিতিশীলতার কোনো বিকল্প নেই। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের হিংস্র থাবা প্রথমেই একই অংকের ক্ষতির হুমকি তৈরি করেছে।
হুমকিতে থাকা প্রধান প্রধান খাত : প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল অন্যতম কয়েকটি খাতেই দেখা দেবে বিপুল অংকের বাণিজ্যিক লোকসান। এরত মাঝে নির্মাণশিল্পে ক্ষতি হবে ৪ লাখ কোটি মার্কিন ডলার। কৃষিতে আড়াই লাখ কোটি এবং পানীয় শিল্পে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার। এই তিনটি খাতকেই প্রকৃতির অবস্থা পরিবর্তনে সবচেয়ে প্রভাবিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সম্মিলিতভাবে এই তিনখাতের লোকসান ইউরোপের অর্থনৈতিক পরাশক্তি জার্মানির মোট অর্থনীতির দ্বিগুণ। এছাড়াও উর্বর মাটি, সুপেয় পানি এবং স্থির জলবায়ু আরো বহু শিল্পের জন্য অত্যাবশ্যক উপাদান। প্রকৃতি বিপন্ন হওয়া মানেই এসব সুবিধাও হারিয়ে যাওয়া। অথচ প্রকৃতির অবদান নির্ভর শিল্পের বৈশ্বিক জিডিপির ১৫ শতাংশে সরাসরি অবদান রাখে। যার পরিমাণ ১৩ লাখ কোটি ডলার। আর মোটামুটি নির্ভরশীল এমন শিল্পের অবদান ৩৭ শতাংশ বা ৩১ লাখ কোটি ডলার।
ডব্লিউইএফ প্রতিবেদনে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডমিনিক ওয়াওঘরে বলেন, প্রকৃতি এবং মানব সভ্যতার মাঝে যে সম্পর্ক তা আবার প্রথম শিল্প বিপ্লব পূর্ব অবস্থানে ফিরিয়ে আনতেই হবে।