রাশিদ রিয়াজ : শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. এএফএম আবদুল আলীম চৌধুরী (১৯২৮-১৯৭১)। কিশোরগঞ্জ জেলার খয়েরপুর গ্রামে জন্ম। তিনি ১৯৪৫ সালে কিশোরগঞ্জ হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৮ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করে চলে যান লন্ডনে। ১৯৬১ সালে রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনস থেকে ডিপ্লোমা ইন অপথালমোলজি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী কর্মজীবন শুরু করেন লন্ডনের সেন্ট জেমস হাসপাতালের রেজিস্ট্রার (১৯৬১-১৯৬৩) হিসেবে। এরপর দেশে ফিরে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালের প্রধান চক্ষু চিকিৎসক (১৯৬৩-১৯৬৫) হিসেবে যোগ দেন। পরে পর্যায়ক্রমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। পরিচিত ছিলেন লেখক হিসেবেও। ছাত্রাবস্থায়ই বের করেছিলেন ‘যাত্রিক’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সহযোগী আল-বদর বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং হত্যা করে।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল। কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা পেয়ে ভোর থেকে হাজারো মানুষ শহরের রাস্তায় বেরিয়ে পরেন। বিজয়ের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে নিজেকে শামিল করতে ছুটছে এদিক ওদিক। অনেকের হাতে বিজয়ের পতাকা। সেই মিছিলে অনেকের শামিল হওয়ার ছিলো। মুক্তিযুদ্ধে বাঙ্গালীর বিজয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা জাতিকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবীদের রাতের আধাঁরে ধরে নিয়ে যায়। তারা বুঝতে পেরেছিলো জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করলে এদেশ কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৪ ডিসেম্বর তারা ইতিহাসের এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়। বুদ্বিজীবী হত্যায় নেতৃত্ব দেয় রাজাকার, আলবদর, আল শামস।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর যাদের ধরে নেওয়া হয়েছিলো তাদের মধ্যে শহীদ ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী অন্যতম। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর চিকিৎসকও ছিলেন।
১৬ ডিসেম্বরের বিজয় মিছিলে ডা. আবদুল আলিমকে খু্ঁজতে ছুটে যান তার সহধর্মিনী শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী ও দুই মেয়ে ফারজানা চৌধুরী ও নুজহাত চৌধুরী। কিন্তু কোনো মিছিলেই ডা. আলীমের দেখা মিলেনি আর। কখনোই ফিরবেন না তিনি। স্বাধীনতার পর থেকে তাঁর স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে আছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী আলীম চৌধুরীর পরিবার। আপনজনকে হারানোর এই ব্যথা আজীবন বয়ে বেরাতে হবে তাদের।