সুজন কৈরী : বাংলাদেশ ও ভারতের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নোডাল এজেন্সীর মহাপরিচালক পর্যায়ের ৬ষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সভা বৃহস্পতিবার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ। ভারতের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা।
সভায় উভয় দেশের মাদক সংক্রান্ত সমস্যা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা ও তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়ে এজেন্ডা ভিত্তিক ফলপ্রসু আলোচনা হয়। প্রধান আলোচ্য বিষয়সমূহ হচ্ছে- ৫ম মহাপরিচালক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্তের উপর গৃহীত কার্যক্রম বিষয়ে আলোচনা। রিয়েল টাইম গোয়েন্দা তথ্য আদান প্রদান। মাদক চোরাচালান রুট সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়। এনপিএস (নিউ সাইকো এ্যাকটিভ সাবসটেনসেস), সিনথেটিক ওপিয়ডস ও অন্যান্য সিনথেটিক ড্রাগস নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আপডেট অবস্থা সম্পর্কে এবং বি টু বি (বিজনেস টু বিজনেস) ইন্টারনেট কোম্পানীর তথ্য বিনিময়। কন্ট্রোল ডেলিভারী অপারেশনসের বিষয়ে সম্ভাব্যতা অনুসন্ধান। মহাপরিচালক পর্যায়ের গত বৈঠকের পর থেকে বাংলাদেশে আটক ভারতীয় নাগরিক এবং ভারতে আটক বাংলাদেশী নাগরিকদের মাদক অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদান। দক্ষতা বৃদ্ধিতে পারস্পরিক সহযোগীতা। মাদক অপরাধ সংক্রান্ত আর্থিক তদন্তে তথ্য বিনিময়। সীমান্তবর্তী এলাকায় অবৈধ পপি ও গাঁজা চাষ বন্ধ করা এবং বিবিধ।
আলোচ্য সূচি অনুযায়ি উভয় পক্ষের মধ্যে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিস্তারিত আলোচনা শেষে উভয় দেশের মধ্যে যৌথ ঘোষনাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। ঘোষণায় উভয় দেশের মহাপরিচালক মাদক নিয়ন্ত্রণে একসঙ্গে কাজ করাতে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সভায় ভারতের পক্ষ থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ, ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে ত্রি-পাক্ষিক বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মতি জানানো হয়। এক্ষেত্রে ভারত উদ্যোগ নিলে সভার ভেন্যু বাংলাদেশে হলেও আপত্তি নেই বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান।
বৈঠক শেষে ডিএনসির ডিজি জামাল উদ্দিন বলেন, ভারত থেকে দীর্ঘদিন ধরে ফেন্সিডিল আসছে। পাশাপাশি ভারতের বিশাল অংশে গাঁজা চাষ হচ্ছে। সম্প্রতি সময়ে ইয়াবাও আসছে। আমরা এ বিষয়গুলি ভারতকে জানিয়েছি। তারা এগুলো বন্ধ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিবে বলে আশ্বস্ত করেছে। সেইসঙ্গে জানিয়েছে, ভারতে ইয়াবা তৈরি হয় না। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ভারতে যায়। পরে ভারতকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। ইয়াবার ছোবল থেকে ভারত ও বাংলাদেশকে বাঁচাতে মিয়ানমারের সঙ্গে ত্রিদেশীয় বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়। বাংলাদেশ এ আহ্বানকে স্বাগত জানিয়ে প্রয়োজনে আয়োজক হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে। তিনি আরো বলেন, ২০১৬ সালে ৫ম ডিজি পর্যায়ের বৈঠকের পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতে গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্য আদানপ্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে দুদেশে যে মাদক কারবারি গ্রেপ্তার হবে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক আলাপ আলোচনা করা হবে।
ভারতের এনসিবির ডিজি রাকেশ আস্থানা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পরের সমস্যা সমাধানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ভারতের বিশাল অংশ দিয়ে মাদক প্রবেশ করছে। পাশাপাশি ভারতের অনেক জমিতে গাঁজা ও পপি চাষ হচ্ছে। আমরা এটি বন্ধ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি।
মাদক নিয়ন্ত্রণে উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে পারষ্পরিক সহযোগিতা স্থাপনের জন্য ২০০৬ সালের ২১ মার্চ একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশের মহাপরিচালক পর্যায়ে এ পর্যন্ত মোট ৫টি সভা অনু্ষ্িঠত হয়েছে। সর্বশেষ সভাটি ২০১৬ সালের ২১ ও ২২ ডিসেম্বর ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
আপনার মতামত লিখুন :