গৌতম চক্রবর্তী : ভারতবর্ষ সারা পৃথিবীর সামনে এক উদাহরণ। ভারতবর্ষ আসলে এক কনসেপ্ট। ভারতবর্ষ আসলে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। নানা জাতি, নানা ধর্ম, নানা সংস্কৃতি আমাদের। সংবিধান আমাদের প্রতিটি জাতি, ধর্ম, সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দেয়। আমরা বাঙালির বিহারি, পাঞ্জাবী, মাড়োয়ারি, মণিপুরী, উড়িয়া, তামিল, তেলেগু ইত্যাদি আরও নানা ভাগে বিভক্ত। কিন্তু ভারতবর্ষের কথা উঠলে সবাই একাট্টা। এ এক অদ্ভুত ম্যাজিক। সারা পৃথিবীতে এমন দেশের উদাহরণ আর দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না। আমাদের মধ্যে প্রচুর ঝগড়াঝাঁটি মারামারি। একান্নবর্তী পরিবার, তাই ঠোকাঠুকিও কম নেই। তবে বিপদে-আপদে বোঝা যায়, জাত, বর্ণ, ধর্ম, সংস্কৃতি নির্বিশেষে সবাই ভারতীয়। এক তামিল সহযোদ্ধার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক পাঞ্জাবী, বা এক বাঙালি সহযোদ্ধার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে যায় এক মণিপুরী। তা সে যুদ্ধের ময়দান হোক, কিংবা দেশের বৈজ্ঞানিক রিসার্চ। দেশ গঠন হোক, কিংবা ইসরোর চন্দ্রাভিযান। দেশের কথা উঠলেই ধর্ম, জাত বা কালচার, সব তখন পেছনে। তখন একটাই পরিচয় আমরা ভারতীয়। এটাই ভারতবর্ষ। এটাই আমার দেশ। এটাকেই চিনে এসেছি ছোটবেলা থেকে। ভারতবর্ষ আসলে কি? ভারতবর্ষ আসলে উদাহরণ গোটা বিশ্বের সামনে। নানা ভাষা, নানা জাতি, নানা ধর্ম, নানা সংস্কৃতি নিয়ে একসঙ্গে থাকার এক আশ্চর্য রূপকথা এই ভারতবর্ষ। সব ভারতীয়ের চোখের মণি আমাদের দেশ ভারতবর্ষ, এতো ভিন্নতা সত্ত্বেও।
আগামী পৃথিবীর সামনে উদাহরণ আমাদের ভারতবর্ষ। ভবিষ্যতের কাঁটাতারহীন পৃথিবীর ক্ষুদ্র সংস্করণ আমাদের ভারতবর্ষ। এই আত্মপরিচয় আমরা সযতেœ রক্ষা করি। আমাদের সংবিধান আমাদের সেই অধিকার দিয়েছে। কোনো দল বা কোনো ভুঁইফোঁড় নেতা সেটা বদলে ফেলতে পারে না। সেটা বদলানোর চেষ্টা মানে ভারতবর্ষের মূলে কুঠারের আঘাত। আপনি যদি ভারতীয় হন, যদি বিশ্বাস করেন দেশটা কারও বাপের সম্পত্তি নয় তবে রুখে দাঁড়ান। আমাদের এই বৈচিত্র্য রক্ষা করুন। এটাই আমাদের সৌন্দর্য। এটাই আমাদের একত্রে রেখেছে হাজার ভিন্নতা সত্ত্বেও। আজকের নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগে এর জন্যই সারা পৃথিবীর সামনে আমরা এক অন্যন্য উদাহরণ। এই উদাহরণ ৭২ বছর ধরে অটুট, নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়েও। বহু বহিঃশত্রু বারবার চেষ্টা করেও যা ভাঙতে পারেনি আমাদের দেশ, বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বন্ধন আরও মজবুত হয়েছে। আজ তাই ভেতর থেকে ভাঙার চেষ্টা শুরু হয়েছে আমার দেশকে। বন্ধু দেশপ্রেমীর ছদ্মবেশে হায়নার দল আমাদের ঐক্যের মূলে কুঠারাঘাত করতে চাইছে। প্রমাণ করার সময় এসেছে, আপনি আদৌ কতোটা ভারতীয়। প্রমাণ করার সময় এসেছে এই বহুত্ববাদকে বুক দিয়ে আগলানোর। আমি সব ভাষা, ধর্ম, জাতি, সংস্কৃতির সহাবস্থানের পক্ষে, আমাদের ভারতবর্ষের পক্ষে। আপনারও কিন্তু পক্ষ নেবার সময় এসেছে। পক্ষ নিন, ভারতবর্ষের অখ-তার পক্ষে দাঁড়ান। হিন্দির আগ্রাসন রুখে দিন। এটা আমাদের আত্মপরিচয়ের লড়াই, ভারতবর্ষের অস্তিত্বের লড়াই। ফেসবুক থেকে