আহমেদ শাহেদ : এর আগে ডাকসুর সবশেষ নির্বাচনটি হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৬ জুন। তারপর বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র রাজনীতির সর্বোচ্চ এ মঞ্চের নির্বাচনের উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন অজুহাতে ভেস্তে যায় সব উদ্যোগই। নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা, আন্দোলন-সংঘর্ষের পর অবশেষে চলতি বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত হয় ডাকসু নির্বাচন।
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে ছয় মাস। ডাকসুর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ভোটে বেশিরভাগ পদে নির্বাচিত হয়েছে। নানা ঘটন-অঘটনে পার হওয়া ডাকসুর অর্ধমেয়াদ কেমন ছিল? প্রত্যাশা-প্রাপ্তি, সফলতা-ব্যর্থতার পাল্লা কোন দিকে ভারী? ডাকসুতে নির্বাচিত ছাত্রনেতারা নিজের কাজের কী মূল্যায়ন করছেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে শুরুতেই ডাকসুর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। প্রশাসন তাদের যোগ্যতা বা দক্ষতার চেয়ে রাজনৈতিক আনুগত্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের চারশো ভাগের এক ভাগ ডাকসুর বাজেট। ছয় মাসে আমরা মোট বাজেটের মাত্র ১৪% খরচ করেছি। ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষে প্রেস রিলিজ আকারে এ খরচের খাত আমরা প্রকাশ করব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সঙ্কট কাটানোর একমাত্র উপায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন হল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া।’
সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ডাকসু নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন, গণরুম-গেস্টরুম প্রথা উচ্ছেদ, গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ ইশতেহারের বড় প্রতিশ্রুতিগুলোর বিষয়ে নির্বাচনে বিজয়ীদের কোনো পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয় বলে দাবি করছেন অনেক শিক্ষার্থী। তাদের দাবি, ডাকসুতে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় নেতাদের চেয়ে বরং হল সংসদগুলো সক্রিয় বেশি।
নির্বাচনের অর্ধবছর পার হলেও এখনও অভিষেক অনুষ্ঠান করতে পারেনি ডাকসু। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়টিও বিভিন্ন সময় সামনে এসেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ডাকসুর নির্বাচিতরা কাজ করছেন ব্যক্তি মন্ত্রণালয়ের মতো। আর নেতারা দুষছেন একে অপরকে।
নুরুল হক নুর বলেন, ‘ছাত্রীদের হলে আমার প্যানেল থেকে নির্বাচিত আখতার হোসেনের সাইবার সিকিউরিটি সচেতনতার প্রোগ্রামটি করতে দেয়া হয়নি। সলিমুল্লাহ হলে আমি এবং শামসুন্নাহার হলের ভিপির লাঞ্ছনার ন্যূনতম বিচার করা হয়নি।’
গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ভিপি নূর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার ডাকসুর পরিচয়কে ব্যবহার করে নানা রকম অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত।’
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ভিপি পদকে ব্যবহার করে নূর মৌলবাদী রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন বিদেশি অ্যাম্বাসিগুলোতে যোগাযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন।’
ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অন্য প্রার্থীরাও হতাশ বর্তমান সংসদের কার্যক্রমে।
প্রগতিশীল ছাত্রজোট থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা লিটন নন্দী বলেন, ‘এখন ডাকসুকে দেখা যাচ্ছে স্বৈরতান্ত্রিক ভূমিকায়। তারা এখন ডাকসুর ক্ষমতাকে খাটিয়ে ছাত্রদের অধিকার খর্ব করছে।’
স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ থেকে এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আবু রায়হান খান বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়াতেই গলদ ছিল। এ অবৈধ ডাকসুর কাছ থেকে তেমন কোনো প্রত্যাশা আমাদের ছিল না।’
এএস/...