শিরোনাম
◈ চট্টগ্রাম বন্দরে সাইফ পাওয়ার টেকের যুগের অবসান, এনসিটির দায়িত্বে নৌবাহিনী ◈ ১ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজের খেলায় তালেবান, পেছনে চীন-রাশিয়া-ইরান-ভারত! ◈ পাকিস্তানকে ঠেকাতে গিয়ে ভারতে বন্যা, তোপের মুখে কঙ্গনা (ভিডিও) ◈ ৫ আগস্ট লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার জাতীয় সংসদ: নাহিদ ইসলাম (ভিডিও) ◈ গাজীপুরে মহানগর বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার ◈ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় জনগণ ঐক্যবদ্ধ : মির্জা ফখরুল ◈ রেস্ট হাউজে ‘নারীসহ’ ওসি, আটক করে ‘চাঁদা দাবি’ ছাত্রদল নেতার, সিসিটিভির ফুটেজ ফাঁস ◈ আর একটি হত্যাকাণ্ড ঘটলে সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ: হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের ◈ ধামরাইয়ে ঋণ দেওয়ার কথা বলে গৃহবধুকে ধর্ষণ, আসামী গ্রেফতার ◈ গাজীপুরে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার বিএনপি নেতা স্বপন

প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:১৮ দুপুর
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:১৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

টাকার বিনিময়ে কোটার চাকুরি পাচ্ছে অন্যরা, এক কক্ষে বাস অভিশপ্ত ১৫ হরিজনের

মৌরী সিদ্দিকা : শহরের প্রান্তে আগাসাদেক রোডে অচ্ছুত জনগোষ্ঠী হিসেবে বহু বছর আগে বসবাস শুরু করেছিলো হরিজন সম্প্রদায়। তারা এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছে। সমাজের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে হলে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে মৌলিক চাহিদা হিসেবে অন্তত বাসস্থানের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এমনি একটি অনগ্রসর জনগোষ্ঠী মিরনজিল্লা সিটি কলোনির (সুইপার কলোনি) বাসিন্দারা।

সুইপার (মেথর) হয়ে জন্ম নেয়াই যেন অভিশাপ। যাদের পাড়ার দোকানে টাকার বিনিময়ে চা পর্যন্ত পান করতে দেয়া হয় না। দলিত সম্প্রদায়ের হওয়ায় অনেক সেলুনেই নাপিতরা তাদের চুল কাটে না।

রাজধানী ঢাকায় অন্যের ফেলা আবর্জনা তুফান, ঝড়, বৃষ্টির উপেক্ষা করে কাক ডাকা ভোরে আযানের আগে বের হয় সুইপার কলোনির মানুষগুলো। শহরের বাসা বাড়ি প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার করে বহুকাল ধরে।

তারা ভাষ্য, বিশ^াস করেন আমাদের অনেক কষ্ট। আমাদের ছেলে-মেয়েরা এমবিএ, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনা শেষ করে চাকরি পায় না। যখন শোনে পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা হরিজন তখন আর চাকরি হয় না। এই পড়াশুনা শিখে আমরা কি করবো !

আমাদের জায়গা নেই, জনসংখ্যা বাড়ছে। এদিকে আমাদের চাকরি নেই। সিটি কর্পোরেশন আমাদের চাকরি দিচ্ছে না। হরিজনের পদে হরিজন নয় এমন লোকদের চাকরি হচ্ছে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন করতে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে দলিতরাও ছিলো। এর জন্য শুধু ঢাকাতেই ১০ জন হরিজন শহীদ হন। এতসবের পরও দলিত সম্প্রদায়ের লোকেরা পায়নি শহীদের মর্যাদা বা তাদের জন্য বরাদ্দ হয়নি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। এ বিষয়টি নিয়ে বহু দেন দরবার করেও কিছু করতে পারেনি। হরিজনদের স্বীকৃতি রাষ্ট্র যেমন দেয়নি তেমনি সামাজিকভাবেও কোন স্বীকৃতি পায়নি এই জনগোষ্ঠী।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলো মিরনজিল্লা সিটি কলোনির অনেকেই। স্বাধীনতা সংগ্রামে তারা যুদ্ধ করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার দিয়েছে, অস্ত্র রাখার মতোও কাজ করেছে। কলোনির প্রধান সামুন্দসহ ১০ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে ধরে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। তাদের অপরাধ ছিলো তারা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছিলেন।

মিরনজিল্লা সিটি কলোনির কার্যকরী সভাপতি কৃষ্ণ বলেন, চাকরি ক্ষেত্রে আমাদের ৮০ শতাংশ কোটা থাকলেও তা দেয়া হচ্ছে না। এখন টাকার বিনিময়ে চাকরি দিচ্ছে। আমাদের টাকা দিয়ে চাকরি নেয়ার মতো সামর্থ্য না থাকায় আমাদের জায়গায় অন্যরা চাকরি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে দক্ষ, অদক্ষ সবই আছে। চাকরি না থাকায় আমাদের যুবকরা এখন নেশায় আসক্ত হচ্ছে।
মিরনজিল্লা সিটি কলোনির সভাপতি গগন লাল বলেন, আমাদের কোন বাসস্থান নেই, নিজস্ব কোন সম্পত্তি নেই। কচ্ছপের মতো ধরে রেখেছি মানুষগুলোকে। জায়গা বাড়ছে না, কিন্তু মানুষ তো বাড়ছেই।

হরিজন সম্প্রদায়ের মোট ৮টি গোত্র আছে। বৈষম্যের কথা বললে কৃষ্ণ বলেন, গ্রামাঞ্চলে এখনো বৈষম্য হয়। তবে এখানে আমরা অপেক্ষাকৃত কম বৈষম্যের স্বীকার হই।

তিনি বলেন, আমার মেয়ে আনোয়ারা বেগম মুসলিম গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশুনা করছে। এখন পড়াশুনায় খুব বেশি সমস্যা নেই।
তবে আমাদের সময় স্কুলে আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হতো। সহপাঠিরা আমাদের লালু, বাবু, দাস, সুইপারের বাচ্চা বলে ক্ষ্যাপাতো।
এখনো আমাদের বাচ্চারা কলোনির বাইরে রাস্তায় দাঁড়ালে পাঞ্জাবি গায়ে তারা বলে ‘যা ভিতরে যা’।

তেলের মাথায় সবাই তেল ঢালে। রোহিঙ্গারা দেশে আসার জন্য আমাদের পুজোর জন্য পাঁচ হাজার টাকাও দেয়া হয়নি।
জেলা প্রশাসক জানান, রোহিঙ্গাদের আসার জন্য আমাদের অনুদান বন্ধ। আমাদের অনুদান রোহিঙ্গাদের দেয়া হয়েছে।
কৃষ্ণ বলেন, আমাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই আন্তরিক। আমাদের ২০ লাখ হরিজনের হায়াত আল্লাহ তাঁকে যেন দেন।

আমাদের জন্য ৮০ শতাংশ কোটা রাখলেও ৮ শতাংশও কার্যকর হয় না। এখন সিটি কর্পোরেশনে টাকা ছাড়া চাকরি নেই। আবার নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।

আমরা খেয়ে, না খেয়ে যত কষ্টেই থাকি না কেন দেশদ্রোহী কোন কাজের সঙ্গে আমরা জড়িত নই। চাকরির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ‘যদি হরিজন না পাওয়া যায় তবে অহরিজন। কিন্তু বাংলাদেশে কেন হরিজন পাওয়া যাবে না।’ সরকারিভাবে যা দেয়া হচ্ছে তা পাচ্ছে হরিজন নয় এমন লোকেরা।

আমরা সুইপার, হরিজন, দলিত বলে আমাদের বাসা ভাড়া দেয়া হয় না। এক ঘরে আমরা ১০-১২ জন থাকি। পালা করে ২৪ ঘণ্টায় ৪-৫ ঘণ্টা ঘুমাই। রাতে ঘুমাই, সকালে ঘুম থেকে উঠে বালিশ সরিয়ে ঘরে বসতে হয়। সবাই একসঙ্গে ঘরে শোয়ার মত জায়গা নেই। আমরা বাবা-মা, দাদা- বৌদি, ছেলে-মেয়ে সবাই এক ঘরে থাকি।

রিকশাওয়ালাদের ফ্ল্যাট দেয়া হচ্ছে আমাদেরও ফ্ল্যাট দেয়া হোক। না হলে এখন থেকে আমরাও রিকশা চালানো শুরু করবো।
গগন লাল বলেন, বিশেষ অনুরোধ সরকারের কাছে চিড়িয়াখানায় বিশাল জায়গা আছে। ওখানে আমাদের রাখা হোক। চিড়িয়াখানায় গিয়ে বিশে^র মানুষ দেখবে মানুষও চিড়িয়াখানায় থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়