দেবদুলাল মুন্না : ১৯০০ সালের কুষ্টিয়ার এক গ্রামে মামা বাড়িতে বেড়াতে যান যতীন। সেসময় একটি বাঘ গ্রামে ঢুকে পড়েছিল।সবাই আতঙ্কিত।সেসময় যতীন সামান্য ভোজালি দিয়ে বাঘের সাথে লড়াই করে বাঘটিকে মেরে ফেলেছিলেন।সেই থেকে তার নামের আগে ‘বাঘা’শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কিশোর বয়স থেকেই বাঘা যতীনের মনে পরাধীনতার গ্লানি দাসত্বের অপমান গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। তিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।তিনি অনুশীলন সমিতিতে যোগ দেন।
১৯১০ সালে আলীপুর বোমা হামলা মামলার তদন্তকারী বিখ্যাত সিআইডি অফিসার মৌলভী শামসুল আলমকে গুলি করে হত্যা করে বীরেন্দ্র দত্ত গুপ্ত নামে এক যুবক। পরে বীরেন্দ্র ধরা পড়লে পুলিশ জানতে পারে এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য নায়ক আসলে যতীন।
যতীনকেও গ্রেফতার করা হয়। এ সময় যে মামলাটি হয় সেটি ‘হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে পরিচিত।১৯১২সালে প্রধান বিচারপতি জেঙ্কিন্সের বিচারে যতীনরা নিরপরাধী হিসেবে মুক্তি পান। হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলার সাথে জড়িত হওয়ার ফলে যতীনের নাম সরকারের বিরাগভাজন ব্যক্তিদের তালিকায় উঠে গেল। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জার্মানীতে ভারতীয় ছাত্রদের উদ্যোগে জার্মান থেকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রচারকার্য চালানোর জন্য “বার্লিন কমিটি” নামে একটি সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যতীন ১৯১৫ সালে চীনের নেতা সানইয়াং এর কাছ থেকে ৫০টি পিস্তল ৪৬ হাজার গুলি এবং বহু টাকা সাহায্য নেন। দেশের নানা বিপ্লবী সংগঠনের মধ্যে এই অস্ত্র ও টাকা বন্টন করে দেওয়া হয়।তিনি টাকা সংগ্রহের জন্য ডাকাতিও করেন।আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার স্যানপেড্রো বন্দর থেকে এস. এস. ম্যাভারিক নামে জাহাজে অস্ত্র আনার ব্যবস্থা করা হয়েছিলঅ আরেকটি জাহাজ ছিল ‘অ্যানলুই’ ।এদিকে এখবর পেয়ে যতীনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা প্রথম জাহাজটি ১৯১৫ সালের ১৭ই নভেম্বর ডুবিয়ে দেয়।দ্বিতীয় জাহাজটি ডুবিয়ে দেন পরদিনই।সেসময় বৃটিশ সেনাদের সঙ্গে বিপ্লবী যতীনদের লড়াই হয়।সেই লড়াইয়ে যতীনরা একশো আশিজন বৃটিশ সেনাকে নিহত করেন। ‘বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যতীনের নাম উজ্জ্বল তারা’এটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতার লাইন। তিনি যতীনকে নিয়ে দুটো কবিতা লেখেছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :