মুসবা তিন্নি : মোবাইল অ্যাপে চলার কথা থাকলেও সিএনজি অটোরিকশার ‘রোগ’ ভর করেছে মোটরগাড়ি বা মোটরসাইকেলে। এতে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে রাষ্ট্রের। অ্যাপ কোম্পানির আয় থেকে যে রাজস্ব যাওয়ার কথা সরকারি কোষাগারে, সেটি যাচ্ছে না। ঢাকা টাইমস
রাজধানীতে তিন বছর আগে মোবাইল অ্যাপে যানবাহন চলা শুরুর বিষয়টি আশীর্বাদ হয়েছিলো। যদিও মাস তিনেক ধরে জানা যাচ্ছে, যাত্রীদের চুক্তিতে যেতে বাধ্য করছেন চালকরা। অনলাইনে রিকুয়েস্ট পাঠালে বিশেষ করে বাইকাররা বলছেন, ‘অ্যাপে নয়, খ্যাপে যাব।’
অ্যাপ কোম্পানিগুলো বাইকারদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। এতে যাত্রীরা ঠকছে, কারণ অ্যাপে যে ভাড়া দেখায়, তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে তাদের। অ্যাপে বাহন ভাড়া করলে যাত্রী ও বাইকারদের নিরাপত্তা থাকে। তবে ‘খ্যাপে’ গেলে অনিরাপদ হয়ে যেতে পারে যাত্রা। ছিনতাই বা অন্য অপরাধের শিকার হতে পারে দুই পক্ষই। কিন্তু সিএনজি চালকদের মতোই ‘পোষায় না’ ‘রোগ’পেয়েছে বাইকারদের। আর ‘জিম্মি’যাত্রীরা গন্তব্যে যাওয়ার তাড়নায় বাড়তি পয়সা দিতে ‘বাধ্য’হচ্ছেন।
এমনিতে অ্যাপের যে ভাড়া আসে, তার ওপর কোম্পানি যে কমিশন পায়, তার পাঁচ শতাংশ পায় সরকার। এই অর্থ অ্যাপ চালানো কোম্পানির কাছ থেকে বুঝে নেয় রাজস্ব বোর্ড। কিন্তু বাহনগুলো ‘খ্যাপে’চললে কে কতোবার চলেছে, কতো টাকা ভাড়া এসেছে, তা জানার সুযোগ থাকে না। ফলে রাজস্ব পায় না সরকার। অর্থাৎ বাইকাররা ‘জিতলেও’ঠকছে যাত্রী আর সরকার।
পুলিশ বলছে, বাইকারদের এই প্রবণতার বিষয়ে তাদের কাছেও অভিযোগ আসছে। আর নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে ট্রাফিক পুলিশ মোটরসাইকেলের কাগজপত্র পরীক্ষার সময় অ্যাপে যাচ্ছে কি-না সে বিষয়ে নজরও রাখছে। তবে এটি ব্যাপক হারে করা হচ্ছে না বলেও স্বীকার করেছেন একজন কর্মকর্তা।
অন্যদিকে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ পুরোপুরি হাত গুটিয়ে বসে। তারা বলছে, অ্যাপে গাড়ির চলার নীতিমালা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় চালকদেরকে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে ,ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আগে সিএনজির ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ প্রতিনিয়ত পাওয়া যেত। এখন অ্যাপভিত্তিক শেয়ার রাইডিংয়ের ক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে। মোটরসাইকেলের কাগজপত্র পরীক্ষার সময় অ্যাপে যাচ্ছে কি-না সেটা জিজ্ঞাসা করা হয়।’
‘তবে এটা ঠিক, নানাভাবে শুনলেও আমাদের কাছে এই খ্যাপে চলার বিষয়ে যাত্রীরা খুব একটা অভিযোগ করেন না। এই পুলিশ কর্মকর্তা যাত্রীদেরকে চুক্তিতে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘এটাতে যাত্রী ও চালক দুজনেরই ঝুঁকি সমান। নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে আমরা এমন চলাচল বন্ধ করতে চাই।
বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘রাইড শেয়ারিংয়ের কোন নীতিমালা নেই, একটা খসড়া আছে। নীতিমালা না থাকলে আমরা কোনো কিছুর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারি না। কারণ তাদের কোন আইনের আওতায় আনবে? তাই এটা নিয়ে কাজ করার সুযোগ হচ্ছে না। অ্যাপ চালানো রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকে অবশ্য সরকার নিবন্ধনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ জন্য আবেদন করেছে ১৬টি প্রতিষ্ঠান। যদিও এখনো লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়াটি শেষ হয়নি। সম্পাদনা : আহসান/রাশিদ