আক্তারুজ্জামান : ফুটবল মাঠে ২২জন খেললেও ২জন সবসময় পর্দার বাইরে থাকেন। যারা কখনো নায়কের রুপে আর্ভিূত হন আবারও কখনোবা ভিলেন। তারা হলেন দু’দলের গোলরক্ষক। ফুটবলের ইতিহাসে অনেক নায়ক-মহানায়কের কথা লেখা আছে। কিন্তু সেখানে গোলরক্ষকের সংখ্যা সবচেয়ে কম। তবে যার কথা প্রতিবছর লিখতে হয় তিনি হলেন রাশিয়ার লেভ ইয়াসিন। এবার যেনো তার পাশে নাম লেখানোর অপেক্ষায় আছেন ব্রাজিলের অ্যালিসন বেকার।
ব্রাজিল এবং লিভারপুলের হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম কাটাচ্ছেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ তো জিতেছেনই, ব্রাজিলের হয়ে কোপা আমেরিকাতেও স্বমহিমায় উজ্জ্বল তিনি। মেসি- রোনালদোদের সঙ্গে এবারের ব্যালন ডি’অর জেতার দৌড়েও আছেন বেকার। যিনি গোলবারের সামনে দাঁড়িয়ে সর্বশেষ গোল হজম করেছেন গত মে মাসের ৪ তারিখে।
এরপর প্রিমিয়ার লিগের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পেলেন। যৌথভাবে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেরা গোলদাতার পুরস্কার পেলেন। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলেন। ক্লাবের জার্সি নম্বর বদলে ১৩ থেকে ১ হলো। কোপা আমেরিকা খেলতে এলেন। কোপার ফাইনালে ওঠালেন ব্রাজিলকে। এমন অবস্থা যে কোপা আমেরিকার সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কারও পাবেন তিনি।
এতো কিছুর মধ্যেও একটা জিনিসের একটুও পরিবর্তন হয়নি। লিভারপুল বা ব্রাজিলের গোল সামলাতে মাঠে নেমে হয়ে গত দুই মাসে অ্যালিসনকে ভেদ করে একটা গোলও হয়নি!
কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে সেই অ্যালিসনই বাধা হয়ে গেলেন মেসিদের সামনে। দুর্দান্তভাবে রুখে দিলেন একের পর এক শট। অ্যালিসনের অসাধারণ পারফরম্যান্সের সঙ্গে জেসুস-ফিরমিনোর গোল, আর্জেন্টিনাকে হারানোর জন্য ব্রাজিলের রেসিপিটা একদম সোজাসাপ্টা ছিল। কোয়ার্টারেও এই অ্যালিসনের কাঁধে চড়ে প্যারাগুয়েকে হারিয়েছিল ব্রাজিল। যে প্যারাগুয়ের কাছে এর আগে দুই কোপায় পেনাল্টি শুটআউটে হেরে বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু সে দুইবার তো ব্রাজিলের গোলবারের নিচে অ্যালিসন ছিলেন না!
মে মাসের ৪ তারিখের পর থেকে অ্যালিসন খেলেছেন নয় ম্যাচ। তাঁর সামনে এসে একে একে খেলে গেছে বার্সেলোনা, উলভারহ্যাম্পটন, টটেনহাম, হন্ডুরাস, বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা, পেরু, প্যারাগুয়ে ও আর্জেন্টিনা। এই নয় ম্যাচে একটা গোলও হজম করেননি তিনি। সময়ের হিসাবে ৮৪৬ মিনিট তাকে পরাস্ত করতে পারেনি কেউ।
এবারের কোপা আমেরিকায় ৫ ম্যাচ খেলে ৫টাতেই গোলশূন্য থেকেছেন অ্যালিসন। ১৬ টি শটের মুখোমুখি হয়ে প্রত্যেকটা সেভ করেছেন। কোপার ফাইনাল এখনো খেলাই হয়নি, এর মধ্যেই পাঁচ ক্লিন শিটে নিশ্চিত করেছেন কোপার সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কারও তিনিই পাচ্ছেন। অ্যালিসনের ধারেকাছেও কেউ নেই যে!
যে খেলোয়াড় এমন দুর্দান্ত মৌসুম পার করছেন, তাকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার দেওয়া, না দেওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হবে, এটাই স্বাভাবিক। কয়েক মাস আগেও যে মেসির খেলা দেখে মনে করা হচ্ছিল এবার ব্যালন ডি'অর পুনরুদ্ধার করবেন তিনি, পর পর বেশ কিছু টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়ে মেসির সে আশা ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে উঠেছে। ওদিকে জুভেন্টাসের হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম কাটিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও। লিগ, কাপ জেতার পাশাপাশি জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন উয়েফা ন্যাশনস লিগ। মেসি-রোনালদোকে টপকে ব্যালন ডি অর জেতা কঠিন হবে অ্যালিসনের, তবে অসম্ভব নয়। আর সেটা হলে ৫৬ বছর পর প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাবেন অ্যালিসন। লেভ ইয়াসিনের পর সে কৃতিত্ব গড়তে পারবেন তো এই ব্রাজিল তারকা?