ডেস্ক রিপোর্ট : পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, মহানগর পুলিশ ও জেলা পুলিশ সমন্বিতভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়ক পথকে সচল রাখতে ওইসব পদক্ষেপ নিয়েছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন ও বিআরটি কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার সড়কে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় চার লেনের এ মহাসড়কটি বিভিন্ন স্থানে এক লেন বা দুই লেন হয়ে গেছে।
এছাড়া ঢাকা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পার হলে টঙ্গীর আনারকলি রোডের সামনে মহাসড়কের উভয় পাশে রাস্তা গর্ত সৃষ্টি হয়ে গেছে। পিচঢালা পথে ইটের সলিং দিয়ে সড়ক সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের স্টেশন রোড, গাজীপুরা, সাইনবোর্ড ও চান্দনা চৌরাস্তায় ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় রাস্তা সরু হয়ে গেছে। চান্দনা চৌরাস্তাসহ মহাসড়কের উভয় পাশে ড্রেন নির্মাণ কাজ করায় রাস্তায় যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এতে মাঝে-মধ্যেই এ এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।
মহনগরীর চান্দনা চৌরাস্তার তিন দিকে ফ্লাইওভার ও ড্রেন নির্মাণের কারণে ব্যস্ততম এ এলাকাটিতে নিত্যই যানজট লেগেই থাকে। আর বৃষ্টি হলেই ওই এলাকার সড়কে পানি জমে যানবাহন চলাচল ব্যহত হয় এবং দীর্ঘ সৃষ্টি হয়।
তবে ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে বিআরটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকার কথা জানিয়েছে প্রকল্প পরিচালক মো. সানাউল হক। তবে রাস্তা সচল রাখতে রাস্তায় তাদের লোকবল নিয়োজিত থাকবে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলকারী সৌখিন পরিবহনের শ্রমিক জনি জানান, টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কের ফ্লাইভার ও বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলায় যে অবস্থা সৃষ্টি হয়ে তা সাময়িকভাবে হলেও দ্রুত সংস্কার না করা হলে এবারে ঈদ যাত্রায় এ সড়কে ঘরমুখো মানুষ এবং পরিবহন শ্রমিকদের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না।
এ দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার অংশে সম্ভাব্য দুর্ভোগের বিষয়টি গুরুত্ব বিবেচনা করে ২৪ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সড়ক ও জনপথ, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতি, বিআরটি কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে যৌথ সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়।
ওই বৈঠকে বিআরটি প্রকল্পে ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে গাজীপুর সিটি মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিআরটি প্রকল্পের যে কাজ ২০১৭ সালে শুরু হয়েছে দুই বছরেও বিআরটি কর্তৃপক্ষ এক কিলোমিটার সড়কও দৃশ্যমান করতে পারেননি।
তবে আসন্ন ঈদে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এ ১২ কিলোমিটার সড়কপথ যানজটমুক্ত রাখতে একটি বড় চ্যালেঞ্চ হিসেবে নিয়েছে গাজীপুর সিটি মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
বিআরটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সানাউল হক জানান, এক বছরে বিআরটিয়ের কাজ ২০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্পের দুটি প্যাকেজের কাজ বিদেশী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করছে। তারা এ দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে কাজ করে অভ্যস্ত নয়। ঈদে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সচেতন আছে।
তিনি জানান, রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে এলাকার ও বিভিন্ন কলকারখানার পানি সড়ক দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে। আর পানির কারণে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও বোর্ড বাজার অংশে ৪ কিলোমিটার সড়কের পাশে কোনো ড্রেন নেই। বৃষ্টি হলে পানি রাস্তা গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। ঈদকে সামনে রেখে এ অংশে অস্থায়ী ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। রাস্তায় পানি না থাকলে যানচলাচলে কোনো সমস্যা হবে না।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ঈদ যাত্রায় ফিটনেসবিহীন কোনো যানবাহন সড়কে চলতে পারবে না। মহাসড়কে অযান্ত্রিক ও ধীরগতি যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোনো রিকশা ভ্যান মহাসড়কে উঠতে দেয়া হচ্ছে না। রাস্তার পাশে হকার ও অবৈধ দোকানপাট নেই। ঈদের তিনদিন আগে মহাসড়কের পাশে কোনো যানবাহন থেকে মালামাল লোড-আনলোড করতে পারবে না। আশা করছি রাস্তার কোনো সমস্যা না হলে গাজীপুরের ওপর দিয়ে সব ধরনের যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।
ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের দিকে ২৭টি রোডের যানবাহন গাজীপুর চৌরাস্তার উপর দিয়ে যাতায়ত করে থাকে। এর মধ্যে যানজট প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা এলাকায় এবারের ঈদে কোনো যানজট থাকছে না। এ দুটি স্থানে দুটি ফ্লাইওভার এবং দুটি ব্রিজ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগুলোর উদ্বোধন করেন।
গাজীপুরে জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, ঈদের আগে মহাসড়ককে নির্বিঘ্নে গাড়ির চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। ঈদের কয়েকদিন আগেই মহাসড়কে অবৈধ দোকান-পাট, হাট বাজার উচ্ছদ করা হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে মহাসড়কে ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন চালক ও আনফিট গাড়ি মুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, ৭ দিন আগে থেকে ওই মহাসড়কে চলমান বিআরটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ কারা হবে এবং রাস্তায় যানজট সৃষ্টিকারী ওই প্রকল্পের মালপত্র সরিয়ে নেয়া হবে। ভাঙ্গা বা ক্ষতিগ্রস্থ মহাসড়ক জরুরিভাবে মেরামত করে দেয়া হবে। রাস্তার ওপর যাতে পানি জমতে না পারে তার জন্য তড়িৎ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
ডিস বলেন, মহাসড়কের পাশে নির্মাণাধীন ড্রেনে যাতে পথচারী ও গাড়ি পড়ে না যায় তারজন্য লাল ফিতা টানিয়ে দেয়া হবে। পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হবে। মহাসড়কগুলো সার্বক্ষণিক নজরদাড়িতে রাখা হবে। নির্ধারিত স্থান ছাড়া কোনো গাড়ি দাঁড়াতে দেয়া হবে না।
সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও গাজীপুর সিটির মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে পরিবহন মালিক সমিতি নিয়ে পৃথক দুইটি সভায় ওই সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঈদে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য করতে দেয়া হবে। কেউ অতিরিক্ত ভাড়া নিলে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হবে।
মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার ট্রাফিক (নর্থ) মো. নজরুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত গাজীপুরের মহাসড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতিমধ্যে বাইরে থেকে ২০০ এপিবিএন সদস্য আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে মহাসড়কে তারা কাজে নামবেন।
মহানগর পুলিশের সহকারি কমিশনার ট্রাফিক (সাউথ) থোয়াই অং প্রু মারমা জানান, যানজটপ্রবণ টঙ্গী থেকে চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকা পর্যন্ত মহাসড়ককে যানজটমুক্ত রাখতে সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আশা করছি ঘরমুখো মানুষ এ এলাকা নির্বিঘ্নে অতিক্রম করতে পারবে।
সূত্র : যুগান্তর