নূর মাজিদ : একদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেমন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বায়ুদূষণ কমানোর অঙ্গীকার করছে, তারই সমান্তরালে ইউরোপীয় জোটটি গবাদিপশু পালন খামারশিল্পে হাজার হাজার কোটি ইউরো ভর্তুকি দেয়া অব্যাহত রাখছে। ফলে মিথেন নিঃসরণ কমানোর কোন ল²ণ দেখা যাচ্ছে না, ইইউয়ের তরফ থেকে। সা¤প্রতিক সময়ে পরিবেশবাদি সংস্থা গ্রিনপিস প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে, জলবায়ু পরিবর্তন বিরোধীরা জোটটির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে গ্রিনপিস জানায়, ইইউ করদাতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের এক-পঞ্চমাংশ গবাদিপশুর খামারশিল্পে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ দিচ্ছে। বার্ষিক পরিমাণ ২ হাজার ৪শ কোটি ইউরো। সংস্থাটি অভিযোগ করে, পরিবেশ বিজ্ঞানীরা যখন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর আহ্বান জানাচ্ছেন, তার মাঝেই এমন প্রণোদনা অব্যাহত দেয়া হচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, মিথেন নিঃসরণ কমাতে হলে ইইউ দেশগুলোকে দানাদার খাদ্যে পালিত গবাদিপশু খামারগুলোকে দেয়া আর্থিক প্রণোদনা বন্ধ করতে হবে।
এদিকে মাংস ও দুধ উৎপাদনে দেয়া এই সকল খামারি ভর্তুকি প্যারিস জলবায়ু চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘণ। কারণ, ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ইউরোপের অধিকাংশ দেশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা বর্তমানের তুলনায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছে। তবে এই অঙ্গীকার একটি আনুষ্ঠানিকতার পর্যায়েই রয়ে গেছে, কারণ ২০১০ থেকে এখন পর্যন্ত একবারও গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমায়নি। সমগ্র ইউরোপে যে পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপন্ন হয়, তার ১২ থেকে ১৭ শতাংশের জন্য দায়ী অতি-উচ্চ উৎপাদন সক্ষমতার গবাদি পশুর খামারগুলো।
এই বিষয়ে গ্রিনপিসের কৃষিনীতি পরিচালক মার্কো কন্টেইরো বলেন, ‘ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ফার্মিংয়ের মতো দূষণযুক্ত শিল্পে হাজার হাজার কোটি ডলার ভর্তুকি না দিয়ে ইইউ করদাতাদের অর্থ অন্যভাবে ব্যয় করতে পারে। বিশেষ করে, কৃষকদের স্বল্প পরিমাণে অথচ উচ্চ মানের মাংস ও দুধ উৎপাদনে সহায়তা দেয়া হলে, দূষণ মোকাবেলা এবং পুষ্টিচাহিদাপূরণ দুটি লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।’
এদিকে আগামী বছর ইইউ ফের কৃষকদের দেয়া ভর্তুকি নিয়ে আলোচনায় বসবে। আগামী বছরের জন্য খসরা প্রস্তাবনায় কৃষিনীতি সংশোধনের বেশ কিছু দিক আলচিত হয়েছে। তবে সেখানে গবাদিপশুর সংখ্যা সীমিত রাখার কোন সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। ইতোপূর্বে, ইইউ কৃষি কমিশনের প্রধান ফিল হোগান ইউরোপের খামারশিল্পের নিঃসরণের মাত্রা নিয়ে গ্রিনপিস যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা অস্বীকার করেন।