ইসমাঈল ইমু : আমদানি নিষিদ্ধ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনের মতো ঘটনা এখনো নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। সংশ্লিষ্ট কুরিয়ার কোম্পানিগুলোর নিজস্ব স্ক্যানার না থাকায় নিরাপদেই পাচার হচ্ছে অস্ত্র, মাদকসহ নিষিদ্ধ পন্য। প্রায়ই এসব পণ্য ধরা পড়লেও কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসায়ীদের এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। শুধু দেশি নয় দেশে কাজ করা বিদেশি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও দেশ-বিদেশে পণ্য পাচারের ঘটনা ঘটছে অহরহ। যার সামান্যই ধরা পড়ছে। কয়েক বছর আগেও ইন্টারপোলও এ বিষয়ে সতর্কবার্তাও পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তরে।
এদিকে বাংলাদেশে গত প্রায় ৩০ বছর ধরে কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা চলে আসছে। এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত যুগোপযোগী কোনো আইন প্রণয়ন হয়নি। শত বছরের পুরনো পোস্টাল আইন (১৮৯৮) দিয়েই চলছে কুরিয়ার সার্ভিস। যদিও ২০১১ সালে সরকার এ বিধিমালার কয়েকটি ধারা সংশোধন করে কুরিয়ার সার্ভিস বিধিমালা তৈরি করে। কিন্তু কয়েকজন ব্যবসায়ী ওই বিধিমালার বিরুদ্ধে আদালতে রিট করলে তাও স্থগিত হয়ে যায়।
কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্ক্যানিং মেশিনের দাম বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে কোনো কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান এ মেশিন ব্যবহার করে না। সবাই ফিজিক্যালিই চেক করে। তবে বুকিংদাতার ন্যাশনাল আইডি কার্ড অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি ছাড়া আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসে পার্সেল বুকিং নিয়ে থাকে।
কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসাসিয়েশনের নেতারা বলছেন, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কিছু অসাধু ব্যক্তি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে। এজন্য তারা বুকিং অফিসারদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের সংগঠনের সব সদস্যকে স্ক্যানিং মেশিন কেনার বিষয়ে তাগাদা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তারা।
গত রোববার রাজধানীর উত্তরা থেকে এস এ পরিবহনের পার্সেলে ১ লাখ পিস ইয়াবাসহ দই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র্যাব। এর আগেও এরা কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসে ইয়াবা পাচার করে আসছিল। কুরিয়ার সার্ভিস নিরাপদ মনে করে মাঝেমধ্যে ফেনসিডিলও পাচার করতো তারা। তবে ইয়াবা বহনে হালকা ও বেশি ব্যবসার আশায় তারা এ পদ্ধতি বেছে নিয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধি পাওয়ায় চোরাকারবারিরা ইয়াবা, বিদেশি বিয়ার ও ফেনসিডিলের পাশাপাশি জঙ্গি অর্থায়ন, মানি লন্ডারিং ও অস্ত্রসহ অবৈধ পণ্য পরিবহনে কুরিয়ার সার্ভিসকে টার্গেট করেছে। দেশীয় কোনো কুরিয়ার সার্ভিসে পণ্য গ্রহণ বা প্রাপকের হাতে তুলে দেয়ার আগে স্ক্যান করে দেখা হয় না। কারণ কোনো প্রতিষ্ঠানে স্ক্যানার নেই। তাছাড়া টাকার লোভে কুরিয়ারের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ক্ষেত্রে অপরাধীদের সহযোগিতা করছেন। ফলে এ মাধ্যমে সহজেই অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে চোরাকারবারিরা। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেয়া হলেও কেউ তা মানছে না।