দেবদুলাল মুন্না: আজ বিশ্ব জাদুঘর দিবস।বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেরই বিভিন্ন বিষয়ক একাধিক জাদুঘর রয়েছে।ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামসের (আইসিওএম) আহ্বানে ১৯৭৭ সাল থেকে পৃথিবীব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব জাদুঘর দিবস। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনের সঙ্গে বর্তমানে ১০৭ দেশের ২৮ হাজার জাদুঘর সদস্য হিসেবে যুক্ত রয়েছে।এ বছরও দিবসটি পালিত হচ্ছে।দেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘর সহ আরো দুটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক জাদুঘর,মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর ও ভুগর্ভস্থ জাদুঘর এখনও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। দর্শনার্থীদের টানতে পুরোপুরি সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘর অবস্থিত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে।সাদা রঙের তিনতলা মূল বাড়ি এবং এর পাশের সম্প্রসারিত আরেকটি ভবন নিয়েই এ জাদুঘর।জাদুঘরের গেইট দিয়ে ঢুকে নিয়মানুযায়ী অভ্যর্থনা কক্ষে ব্যাগ, মোবাইল এবং ক্যামেরা রেখে ঢুকতে হয়। বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের মূল বাড়ির প্রথম তলার শুরুতেই রয়েছে শেখ মুজিবর রহমান বিশাল একটি ছবি।প্রথমতলার রয়েছে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টে নিহত সবার ছবি এবং কিছু আসবাবপত্র।
এই ঘরটি আগে ছিল ড্রইং রুম, এখানে বসে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।দোতলায় যে ঘরটি রয়েছে সেটি ছিল বঙ্গবন্ধুর বাসকক্ষ। এরপরের প্রথম কক্ষটি ছিল বঙ্গবন্ধুর শোওয়ার ঘর, তার পরেরটি শেখ রেহানার শোওয়ার ঘর। বঙ্গবন্ধুর শোবার ঘরের দেয়ালে এখনও গুলির চিহ্নগুলো অবিকৃত অবস্থাতেই রাখা হয়েছে। তৃতীয় তলাটার এক পাশে পড়ার ঘর।এর আরেকপাশে বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামাল আর সুলতানা কামালে ঘর।এই ঘরের দেয়ালেও রয়েছে গুলির চিহ্ন, এছাড়া পিয়ানো, সেতার ইত্যাদি আগের মতো করেই সাজানো আছে।এছাড়া পাশের সম্প্রসারিত জাদুঘর ভবনে চারতলা বিশিষ্ট জাদুঘরটির প্রতিদেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ভূমিষ্ঠ হবার সংগ্রামী ইতিহাসের ছবি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় উঠতেই চোখে পড়বে ছাদের সঙ্গে টাঙানো একটি যুদ্ধ বিমান। নাম ‘হকার হান্টার’। আসন একটাই, চালকের। ভেতরে প্রস্তুত থাকত কামান, মিসাইল ও বোমা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এই হকার হান্টার যুদ্ধবিমানটি পাকিস্তানী বাহিনীর জন্য ত্রাস হয়ে উঠেছিল।একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত এ জাদুঘর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের অবস্থিত। ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ৫ সেগুন বাগিচার ছোট্ট দোতলা বাড়িটিতে এ জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরে আগারগাঁওয়ে নির্মিত এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তিনটি বেইসমেন্ট ও পাঁচটি ফ্লোর রয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ব্রোঞ্জের ম্যুরাল। দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ জাদুঘর হচ্ছে সোহরাওয়ার্দীতে নির্মিত একটি বিশাল পরিকল্পনার অন্যতম অংশ এ জাদুঘর। এই নকশায় রয়েছে একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার, তিনটি জলাধার, শিখা চিরন্তন, স্বাধীনতা সংগ্রামের চিত্রবিশিষ্ট একটি ম্যুরাল এবং ১৫৫ আসন বিশিষ্ট একটি অডিটোরিয়াম।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক উপ পরিচালক শামসুল আরেফিন বলেন, ‘জাতীয় উৎসবের আগে এসব জাদুঘরের সংস্কারে হাতদেওয়া হয়। এছাড়া দুর্লভ প্রত্নত্ত্বাতিক নিদর্শন সংগহের ব্যাপারে সারা বছর তেমন তোড়জোড় দেখা যায় না। মানুষের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধির উদ্যোগও নেওয়া হয় না। ’