আহমেদ শাহেদ : প্রচন্ড তাপদাহ, খাদ্য, মেডিসিন ও উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, উৎপাদন খরচ ও বাজার মূল্যের বিরাট ফারাক, শিল্প হিসেবে বিন্দুমাত্র সুযোগ সুবিধা না থাকাসহ নানা সঙ্কট ও সমস্যায় সম্ভাবনাময় রেণুপোনা উৎপাদনে ধস নেমেছে।
দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ রেণুপোনা উৎপাদনকারি যশোরের চাঁচড়া মৎস্যপল্লীতে গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, হ্যাচারী ও নার্সারীগুলো খাঁ খাঁ করছে। এলাকাবাসীদের কথা, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা কর্মচাঞ্চল্যের হ্যাচারী ও নার্সারীর বর্তমান দৃশ্য দেখলেই স্পষ্ট প্রমাণ মিলবে কী দৈন্যদশা। কয়েকদিনের সীমাহীন তাপমাত্রার তপ্তদুপুরে গোটা এলাকা থাকে জনমানবশূন্য।
যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারী মালিক সমিতির সম্পাদক জাহিদুর রহমান গোলদার জানান, চরম দুর্দিন যাচ্ছে হ্যাচারী ও নার্সারী মালিকদের। প্রচন্ড তাপদাহে রেণুপোনা মারা যাচ্ছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত যেখানে দেশের বিভিন্নস্থানের ক্রেতাদের ভিড় হতো মৎস্যপল্লীতে। এখন সেই দৃশ্য নেই। নেই কোন ক্রেতা। শুধু তাপদাহ নয়, নানামুখি সমস্যায় জর্জরিত হ্যাচারী ও নার্সারীগুলো।
তিনি আরও বলেন, নার্সারী ও হ্যাচারীতে রেণুপোনা উৎপাদন না হলে মাছ হবে দুস্প্রাপ্য। কারণ নদ-নদী, খাল বিল পানিশূন্য, প্রাকৃতিকভাবে রেণুপোনা আহরণ হচ্ছে না বললেই চলে। মাছের উৎপাদন ধরে রাখার জন্য বিকল্পপন্থায় শূন্যস্থান পূরণ করে থাকে হ্যাচারী ও নার্সারী। রেণুপোনা উৎপাদনের সূতিকাগার যশোর থেকে বছরের বারো মাস পোনা সরবরাহ করা হয়।
রেণুপোনা উৎপাদনকারিরা বলেন, গত দু’দিন রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল যশোরে। এজন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়েছে। মাছচাষি অহিদুল্লাহ জানান, তাপদাহে হ্যাচারী ও নার্সারী থেকে পোনা মরে ভেসে উঠছে। তাপদাহের আগে ধরা পোনা চাহিদানুযায়ী বিভিন্ন জেলায় সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েও হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন থেকেই গুরুত্বপুর্ণ খাতটি নানাভাবে অবহেলিত। আমিষের চাহিদা পূরণ ও জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখা যশোরের মৎস্যপল্লীর নার্সারী ও হ্যাচারী দিনে দিনে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বছর তিনেকের ব্যবধানে হ্যাচারীর সংখ্যা ৮৪টি থেকে ৩২টিতে নেমে এসেছে। আর নার্সারির সংখ্যাও ৩১৫টি থেকে কমে হয়েছে ১৪৫টি। চালু নার্সারী ও হ্যাচারীগুলোও টিকে থাকতে পারছে না। সূত্র : ইনকিলাব।