শিরোনাম
◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি ◈ বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স: কীভাবে পাবেন, কী কী শর্ত মানতে হবে?

প্রকাশিত : ১১ মে, ২০১৯, ০১:১৪ রাত
আপডেট : ১১ মে, ২০১৯, ০১:১৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দুঃসাহসী বৈমানিক শামীমের আঘাত স্পাইনাল কর্ডে, সিএমএইচে অস্ত্রোপচার আজ

সালেহ্ বিপ্লব ও তানজিনা তানিন : মৃত্যুর ঘণ্টা বাজলো, এই বোধ হয় সব শেষ। ৩৪ জন মানুষ চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন নরক গুলজার। আর এই ৩৪ জনের মধ্যে মাত্র একজন নির্বিকার, শান্ত। যাত্রী ও ক্রুরা কমবেশি ব্যথা পেয়েছেন, কাতড়াচ্ছেন। কিন্তু একজন মাত্র ব্যক্তি রক্তাক্ত মুখে শান্ত, নির্বিকার। তার রক্তক্ষরণ ও আঘাতের নমুনা দেখে কোপাইলট দ্রুত তাকে ভূপাতিত বিমান থেকে বের করার উদ্যোগ নিলেন। প্রচণ্ড চিৎকার করে কো-পাইলটকে থামালেন তিনি। আগে যাত্রীদের নিরাপত্তা, এই নির্দেশ দিয়ে তাকে ককপিট ছেড়ে যেতে বাধ্য করলেন।

কো-পাইলট ক্রুদের নিয়ে ইমারজেন্সি এক্সিট খুলতে শুরু করলেন। উদ্ধারকারী দল আসতেও বেশি সময় নেয়নি। পাইলটকে উদ্ধার করতে এলে রেসকিউ টিমের অফিসারদের তিনি সেই কথাটাই বললেন, যেটা অ্যাক্সিডেন্টের সঙ্গে সঙ্গেই বলেছিলেন কো-পাইলট, পার্সার, ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট এবং অন্য ক্রুদের। ‘আমার কথা ভাবতে হবে না। নিজেরা নিরাপদ থেকে সব যাত্রীকে নিরাপদে বের করে নিয়ে যান।’

তিনি ক্যাপ্টেন, তার কথাই শিরোধার্য। একে একে ৩৩ জনকে বের করে নেয়া হলো চাকা ভেঙ্গে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়া বাংলাদেশী বিমানটির ভেতর থেকে। সবশেষে ক্যাপ্টেন, ক্যাপ্টেন শামীম। মাথা, কপাল থেকে তখনও রক্ত পড়া থামেনি, সোজা হয়ে হাঁটতে পারছিলেন না। তবুও ট্রলিতে ওঠতে রাজি নন। পায়ে হেঁটেই বের হয়ে এলেন ড্যাশ-৮ বিমান থেকে। তারপর জ্ঞান হারালেন। বিমানের ক্যাপ্টেন হিসেবে নিজেকে যোগ্যতম নেতা প্রমাণ করলেন। তিনি স্কোয়াড্রন লিডার (অবসরপ্রাপ্ত) নজরুল শামীম।

বিমান বাহিনী থেকে অবসর নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে সিনিয়র পাইলট হিসেবে যোগদেন। এখানেও সেরা অবস্থানটি করে নেন, যেমনটি জীবনের শুরু থেকেই। নেত্রকোনার ছেলে শামীম স্কুল থেকেই সব পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। নেত্রকোণার স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে রংপুর ক্যাডেট কলেজ। তারপর সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দেন, কর্মজীবন শুরু হলো বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে। অফিসার হিসেবে পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পদক। মেধার পাশাপাশি দুর্দান্ত সাহস তার অসাধারণ বৈশিষ্ট্য।

ইয়াঙ্গুন বিমান বন্দরে নিজেকে আবার প্রমাণ করলেন অসমসাহসী যোদ্ধা হিসেবে, যোগ্য নেতা হিসেবে। সহকর্মী ও যাত্রীদের জরুরি চিকিৎসা আগে নিশ্চিত করে নিজে গেলেন সবার পরে। অথচ ৩৪ জনের মধ্যে তার আঘাতই ছিলো সবচেয়ে গুরুতর।
গত রাতে পৌণে  এগারোটার দিকে ক্যাপ্টেন শামীম, বিমানের তিন কর্মী ও ছয় যাত্রীকে ঢাকা আনা হয়েছে বিশেষ ফ্লাইটে। ৯ জনকে এপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, সবচেয়ে আহত ক্যাপ্টেন শামীমকে ঢাকার সম্মিলিত হাসপাতালে।

সিএমএইচে নেয়ার পর তার বড় ভাই, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন শফিকুল ইসলামের স্ত্রী রুম্মান আরা হাজারিকা আমাদেরসময়ডটকমকে জানান, শামীম মাথা, পিঠ, কোমরসহ বেশ কিছু স্থানে শক্ত আঘাত পেয়েছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেছে স্পাইনাল কর্ডের আঘাতটা গুরুতর। ডাক্তারদের পরীক্ষানিরীক্ষা শেষ হওয়ার পর গভীর রাতে ক্যাপ্টেন (অব.) শফিকুল ইসলাম জানান, সকালে শামীমের স্পাইনাল কর্ডে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ক্যাপ্টেন শামীমের স্ত্রী ও কন্যা থাকেন কানাডায়। কন্যা একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার

শামীমের জন্য উদ্বিগ্ন তার বেদনাহত পরিবার, বন্ধু-স্বজনরা। নিরাপদে বিপদমুক্ত হয়ে ফিরে আসায় তারা খুশি, যদিও রয়ে গেছে সুস্থতা নিয়ে শঙ্কা। আবার ডঙ্কাও বেজে উঠেছে আনন্দের, গৌরবের। এই অকুতোভয়ী যোদ্ধার দুঃসাহসিক নেতৃত্ব দেখে তার পরিবার শুধু নয়, দেশের মানুষও অভিভূত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়