শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্র স্মার্ট প্রাণিসম্পদ প্রকল্পে ৩৪ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিবে ◈ সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে কাঁচাবাজারে দাম কমবে: সাঈদ খোকন ◈ নরসিংদীতে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় মা-ছেলেসহ চারজন নিহত ◈ রোববার থেকে আবার গাউন পরতে হবে আইনজীবীদের ◈ সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা নেই: ডেপুটি গভর্নর ◈ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কেউ যেন বৈষম্যের শিকার না হন: রাষ্ট্রপতি ◈ দেশের জিডিপির পূর্বাভাস কমালো জাতিসংঘ, চিন্তা মূল্যস্ফীতি নিয়ে ◈ আমি ইন্ডিয়া জোটেই আছি: মমতা  ◈ হিজবুল্লাহ’র হামলায় ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে: গ্যালান্ট ◈ কোন দেশে সেন্ট্রাল ব্যাংকে অবাধে সাংবাদিকরা ঢুকতে পারে, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:১৮ দুপুর
আপডেট : ০৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:১৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মায়ের এফডিআর হাতিয়ে নিতে অপহরণ নাটক

ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর খিলগাঁও থেকে গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি অপহরণ হন উল্লেখ করে থানায় ১লা মার্চ মামলা করেন রেক্সিমার্ক রোজারিও (৩২) নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী। সেদিন প্রায় এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান বলেও এজাহারে জানান তিনি। তবে, মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চমকে যান পুলিশ। মানবজমিন ।

গাজীপুর ও ঢাকায় প্রায় পাঁচ দিনের অনুসন্ধানে নেমে খিলগাঁও থানা পুলিশ টের পায় অপহরণের শিকার হননি রেক্সিমার্ক রোজারিও। বরং নিজে থেকে অপহরণের নাটক সাজিয়ে থানায় মামলা করেন। পুুলিশ সাজানো মামলার বিষয়টি টের পাওয়ার পর নিজে থেকে মামলা ফাঁদার বিষয়টি স্বীকার করেছেন রেক্সিমার্ক। জুয়া খেলে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলায় নিজের মায়ের নামে ব্যাংকে এককালীন আমানত রাখা ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতে এমন অপহরণের নাটক সাজান তিনি।

এদিকে, অপহরণের নাটক ও ভুয়া মামলা দিয়ে পুলিশকে হয়রানির করায় তার বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির খিলগাঁও জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম।

মামলার এজাহারে রেক্সিমার্ক রোজারিও অভিযোগ করেন, ২৬শে ফেব্রুয়ারি সকাল আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে নিজের মোটরসাইকেলে(ঢাকা মেট্রো-ল-৩৭-৯০২৫) করে মুন্সিগঞ্জের মার্চলাইন অফিসের উদ্দেশ্যে রাজধানীর শাহজাদপুরের বাসা থেকে বের হন।

সকাল সোয়া নয়টার দিকে খিলগাঁওয়ের শেখের জায়গা আমিন গ্রুপের অফিসের সামনে পৌঁছান। সেখানে একজন মোটরসাইকেলচালক রেক্সিমার্কের নম্বরপ্লেট পড়ে যাচ্ছে বলে সতর্ক করে। নিজের মোটরসাইকেল রাস্তার পাশে থামিয়ে নম্বরপ্লেট দেখতে গেলে আচমকা তিনটি মোটরসাইকেলে করে অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন তাকে জোরপূর্বক একটি মাইক্রোবাসে তুলে ফেলে। পরে অপহরণকারীরা তাকে চোখমুখ বেঁধে মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে করে গাজীপুরের দিকে নিয়ে যায়। এর মধ্যে মুঠোফোনে রেক্সিমার্কের স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনকে মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে হুমকি দেয়া হয়। স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা পাঠান তার স্বজনরা। টাকা পাঠানোর পর গাজীপুর শহরের যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথে রেক্সিমার্ককে দিয়ে নগদ এক লাখ টাকা তুলে নেয় অপহরণকারীরা। এর মধ্যে তাকে কয়েক বার মারধর করা হয় বলেও মামলায় অভিযোগ করেছেন তিনি। মুক্তিপণ হাতে পাওয়ার পর বিকাল আনুমানিক চারটার দিকে গাজীপুর সিটি করপোরশেনের ঝাঝরা এলাকায় রেক্সিমার্ককে রাস্তায় পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

পরে সেখান থেকে স্বজনদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে ফিরে আসেন। ঘটনার প্রায় তিন দিন পর ১লা মার্চ খিলগাঁও থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন রেক্সিমার্ক রোজারিও। হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ায় থানায় মামলা করতে বিলম্ব হয় বলেও এজাহারে উল্লেখ করেন তিনি। মামলা দায়েরের পর ঘটনার তদন্তে নামে খিঁলগাও থানা পুলিশ। টানা ৫ দিন ঢাকার খিলগাঁও ও গাজীপুরের উল্লেখ করা স্থানগুলোতে কাজ করতে থাকে পুলিশ। শুরুতেই খটকা লাগে মামলার এজাহারে। সেখানে রেক্সিমার্ক উল্লেখ করেছেন অপহরণকারীরা বিকাল চারটার দিকে তাকে গাজীপুরের ঝাঝরা এলাকায় নামিয়ে দেয়। তার কাঁধের ব্যাগ, মোবাইল ও মোটরসাইকেলের চাবি রাস্তায় ফেলে রেখে তারা মীরেরবাগ এলাকার দিকে চলে যায়। রেক্সিমার্ক এজাহারে উল্লেখ করেন, সে সময় প্রায় এক/দেড়শো গজ দুরত্বে নিজের মোটরসাইকেল দেখতে পান। এমন তথ্যে খটকা লাগে পুলিশের। অপহরণকারীরা এক লাখ টাকা মুক্তিপণ নিলেও কেন তার থেকে দামি মোটরসাইকেল নিয়ে যায়নি। পরে এজাহারে উল্লেখিত যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথ ও আশপাশের এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ। যেখানে রেক্সিমার্ককে দেখা গেলেও সঙ্গে বা আশেপাশে আর কাউকে দেখা যায়নি। এছাড়া, ব্যাংকের দেয়া তথ্যে গড়মিল পাওয়া যায়।

সবশেষ অপহরণের ঘটনাস্থল খিলগাঁওয়ের আমিন গ্রুপের অফিসের সামনের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে কেউ অপহরণের ঘটনার বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণ মামলার নাটক সাজানোর বিষয়টি স্বীকার করেন রেক্সিমার্ক রোজারিও। মূলত জুয়া খেলে টাকা-পয়সা খোয়ানোর পর রেক্সিমার্ক তার মায়ের ব্যাংকে থাকা এককালীন ডিপোজিটের দশ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার লোভে এমন কাজ করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির খিলগাঁও জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহিদুল ইসলাম বলেন, অপহরণ মামলার নাটক সাজিয়ে পুলিশের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন রেক্সিমার্ক। মামলা গ্রহণের পর তাকে সহায়তা করতে হন্যে হয়ে কাজ করেছে পুলিশ। গাজীপুর ও ঢাকায় কয়েক দিন তদন্তের পর মামলার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। পুলিশকে এভাবে হয়রানি করা এক ধরনের অপরাধ। আমরা তাকে আসামি করে ২১১ ধারায় প্রতিবেদন দিয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়