রাশিদ রিয়াজ : ট্রেনের টিকিট নয়, ইস্টবেঙ্গল-মোহনের খেলা নয়, আইপিএল-ও নয়। মাংস কিনতে লাইন। খাসির মাংস। বৃহস্পতিবার ভারতে দোল উৎসব হয়ে গেল। বাংলাদেশেও এ উৎসবে শামিল হয়েছেন অনেক হিন্দু অনুসারী। তারই অনিবার্য অনুষঙ্গে, অনেকের কাছেই, কব্জি ডুবিয়ে খাসির মাংস ভোজন ছিল মজাদার ব্যাপার। টাইমস অব ইন্ডিয়া
ভাররেত পশ্চিমবাংলায় গত সপ্তাহের মঙ্গলবার প্রবীণ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধকে সাফ বলেছিলেন, রেড মিট নৈব নৈব চ। কিন্তু বৃদ্ধ রোগীর কাতর উক্তি ছিল, ‘ডাক্তারবাবু, আগামিকাল দোল। খাসির মাংস না খেয়ে কী ভাবে থাকব!’ তাই গত বুধবার শেষ রাত থেকেই অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে যান পাঁঠার মাংস সংগ্রহের জন্যে। বাঙালির রোববার দুপুরের সঙ্গে খাসির মাংস যেমন সমার্থক, তেমনই দোলেও সে স্বাদ যেন আরও খোলতাই। চিকেন সেখানে ছিল অচল।
কলকাতার মাংস বিক্রেতাদের অধিকাংশই জানান, সব চেয়ে বেশি বিক্রি বছরের তিনটে দিন। দুর্গাপুজোর নবমী, ভাইফোঁটা এবং দোল। এবং এ বার দোলের মুখে খাসির মাংসের কেজি প্রতি দাম শহরে মোটামুটি সার্বিক ভাবে ৬০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। কোনও কোনও দোকান রোববার, আবার কোথাও কোথাও দোলের ঠিক দু’দিন আগে, মঙ্গলবার দাম চড়ে যায় ৬২০ টাকা। পাঁচ মাস আগে, দুর্গাপুজোর সময়ে দাম ৫৮০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছিল ৬০০ টাকা। খুচরো বিক্রেতারা বলছেন, গত দু’মাস পাইকারি বাজারে তারা জ্যান্ত খাসি কিনছেন ৭০০-৮০০ টাকায়। সেই হিসেবে খুচরো বিক্রেতাদের এখন ক্ষতিই হচ্ছে। কারণ যা-ই হোক, ক্রমশ চড়ছে খাসির দাম।
মুদিয়ালি এলাকার মুহম্মদ ইয়াসিন, হাজরা রোডের কামালউদ্দিন, খিদিরপুরের মহম্মদ সাহাবউদ্দিন ও টালিগঞ্জের অশোকনগর বাজারের রিয়াজুল হকের মতো মাংস বিক্রেতাদের দাবি, দু’বছর আগে যা ছিল, তার তুলনায় মাংসের বিক্রি এখন ২০-৩০ শতাংশ বেড়েছে। টালিগঞ্জের রিয়াজুল হকের হিসেব, সাধারণ দিনে তার দোকানের ৫০ কেজি মাংস বিক্রি রোববার দাঁড়ায় ৩০০ কেজিতে। দোলে সেটা ৬০০-৭০০ কেজি। তার কথায়, ‘ওই দিন খদ্দেরকে মাংস দিতে আমরা হিমসিম খাই।’
খাসির মাংসের দোকানে লম্বা লাইন নিয়ে চিকিৎসক অরিজিৎ রায়চৌধুরীর ব্যাখ্যা, ‘ক্ষতি হবে জেনেও খাসির মাংস তারিয়ে খাওয়ার মধ্যে অনেকটা নিষিদ্ধ সম্পর্কে জড়ানোর মতো আনন্দ আছে। তবে দশ দিনে এক দিন তিন টুকরো খাসির মাংস খেলে মহাভারত অশুদ্ধ হয় না।’
মুদিয়ালি মোড়ের মাংস বিক্রেতা মুহম্মদ ইয়াসিনের বক্তব্য, বহু চিকিৎসক তার দোকানের নিয়মিত খদ্দের এবং তাদের মধ্যে অনেকে আবার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ! নামজাদা কেটারিং সংস্থার কর্ণধার তপন বারিকের কথায়, ‘খাসির মাংস ছাড়া যেন শুভ সামাজিক অনুষ্ঠানের মেনু জমেই না। এবং সেই চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে।’
তবে শুধু স্বাদ নয়, ব্রয়লার মুরগির তুলনায় খাসির মাংসের একটি ভালো দিকের কথা বলছেন ডায়াটেশিয়ান রেশমী রায়চৌধুরী। তার কথায়, ‘খাসির মাংসে সরাসরি স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও অনেকটা ক্যালোরি শরীরে ঢোকে। তবে এতে কৃত্রিম কিছু নেই। ব্রয়লার মুরগি বড় করতে কিন্তু কৃত্রিম জিনিসপত্র ব্যবহার করা হয়। যার ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রভাব শরীরে পড়ে। এমনকী, কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে, সেটা অনেক সময়ে বোঝা যায় না।’
আপনার মতামত লিখুন :