রক্ত পলাশ
ঠেলায় পড়ে বদলে যাওয়া আর নিজে নিজেকে বদলে দেয়া, দু’টোর মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সেই সত্যটিই আবার প্রমাণ করলেন সাক্ষাৎকারে। প্রথম আলোতে প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, একুশ আগস্টে কী ঘটেছিলো তা তার মনে নেই। তিনি আজও বিশ্বাস করেন জামায়াত সন্ত্রাসী রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, তার আরও বিশ্বাস জামায়াত গণতান্ত্রিক রাজনীতিতেই বিশ্বাস রাখে।
একজন মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই, কিন্তু একুশ আগস্টে কী ঘটেছিলো তা যার মনে নেই বা থাকে না তাকে আমরা কী করে একজন সভ্য বাঙালি মনে করবো? ওইদিন আজকের প্রধানমন্ত্রীর ওপর যে বর্বর হামলা হয়েছিলো জনসভায়, তাকে কে ভুলতে পারে? ভুলতে পারে তারাই যারা ওই বর্বরতাকে সমর্থন করে। সে হামলার সাথে জামায়াত-বিএনপির যে সমর্থন ছিলো তাকে অস্বীকার করার আদৌ কী কোনো বাস্তবতা আছে? আওয়ামী রাজনীতিতে কোনো রকম নমনীয়তা না রেখেও এটা নিশ্চিত বলা যায়, ওটা বর্বরতাই ছিলো এবং তার বিচার নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। জামায়াত থেকে বের হয়ে আসা এই লন্ডনি ব্যারিস্টারের সাহস হলো না এই সত্যকে স্বীকার করার। সেই তিনিই কিনা জামায়াত ত্যাগ করেছেন, জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকা এবং আজকের জামায়াতের জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে। গত ক’দিন দেশের পত্র-পত্রিকায় এটা বেশ আলোচ্য হয়ে উঠেছে। বিষয়টি ফেলনা নয় এই কারণে ব্যারিস্টার সাহেব জামায়াতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন এবং এই জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক স্থায়ী ক্যান্সার। এবার তার ভাঙন শুরু হয়েছে। এ কারণেই বিষয়টি একটি মাত্রা পেয়েছে। ব্যারিস্টার রাজ্জাকের গণতন্ত্রের দলটি তার জন্মলগ্ন থেকেই যে একটি নির্মম সন্ত্রাসী মৌলবাদী রাজনীতির দল, তা এদেশের সব মানুষই জানেন। সুযোগ পেলেই তারা যে সন্ত্রাস শুরু করবে, তা নিয়ে দ্বিধার কোনো কারণ দেখি না। এই জামায়াতকে নিয়ে গত পাঁচ দশক ধরেই এদেশের ক্ষমতার রাজনীতি অনেক খেলা খেলেছে, প্রধান দুই দলেই জামায়াতের বহু স্বজন আছে, সাথে তাদের মৌলবাদী দর্শন। এবার ভাঙনের পরে তাদের বহুজনই আবার এই দুই প্রধান দলের মধ্যেই বিলীন হবে। তারপরও রাজ্জাক সাহেবকে এই মিথ্যার আশ্রয় কেন নিতে হচ্ছে? এখানে এসেই প্রশ্নটা বড় হচ্ছে, আদৌ কী জামায়াত ভাঙছে? নীতিগত অবস্থান থেকে তিনি জামায়াত ছাড়লে তাকে ব্যক্তিগতভাবেই তো জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, তা কী তিনি করেছেন? শিবিরসহ জামায়াতের বহু অপকর্মের সময় তিনি দলের শক্ত দায়িত্বে ছিলেন।