শেখ সেকেন্দার আলী, মালয়েশিয়া প্রতিনিধি: মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের শ্রমিকদের চাহিদা কমতে শুরু করেছে। আর শ্রমবাজারে শ্রমিকদের চাহিদার কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের কারণে। বৈধভাবে একজন শ্রমিককে কাজে লাগাতে গেলে অনেক নিয়ম কানুন এর মধ্যে প্রচালিত হয়ে থাকে। বৈধ ভাবে একজন শ্রমিককে আনতে গেলে দীর্ঘ দিন অপেক্ষা আর জটিলতার কারণে রোহিঙ্গাদের দিকে ঝুঁকছে মালয়েশিয়ার ছোটখাটো ব্যবসায়ী মহল।
একজন বৈধ শ্রমিককে মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারে বেতন দিতে হয়। যদি ওই কোম্পানিতে কাজ নাও থাকে তাহলেও মালাই রিংগিত ১,১০০ অর্থাৎ বাংলাদেশি ২২ হাজার টাকা সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করছে মালয়শিয়া সরকার। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে অন্যান্য দেশের চাহিদা কম থাকায় দিন দিন কমে যাচ্ছে ওভারটাইম সহ নিম্নতম ৮ ঘণ্টা কাজ।
বৈধ শ্রমিকদের জন্য বছরে ভিসা,বাসস্থান, ইলেকট্রিক, পানির বিলসহ একজন শ্রমিকের পিছনে প্রায় বাংলাদেশী ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। তাই খরচ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের দিকেই ঝুঁকছে মালয়েশিয়ার মালিকগণ। একজন রোহিঙ্গাকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা দিলেই কাজে লেগে যায়। নেই কোন বাড়তি খরচ।
সকাল বেলায় এসে কাজে যোগ দিয়ে সন্ধ্যা হলেই যার যার মতো বাসায় চলে যায়।
ইউএনএইচসিআর থেকে মালয়েশিয়ায় রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী বসবাসের জন্য একটি কার্ড ইস্যু করা হয়।
শুধু মালয়েশিয়া নয় সারা বিশ্বেই রোহিঙ্গাদের জন্য এই প্রথাটি চালু আছে। আর এই কার্ড এর উপর ভিত্তি করেই মালয়েশিয়া জুড়ে তারা কাজ করে যাচ্ছে। প্রয়োজন হয়না কোন ভিসা এবং যেকোনো কাজ করতে নেই কোন বাধা।
যেখানে বৈধ একজন শ্রমিকের জন্য নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে সে কোথায় কাজ করতে পারবে। তার বাইরে কাজ করলেন তাকে অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হয়। গ্রেফতার হয়ে যেতে হয় জেলে। বৈধ শ্রমিকের জন্য বছরে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য এক টাকাও খরচ হয় হয়না। বরং বেতন আরো কোম দিয়ে দিব্বি চলে যাচ্ছে তাদের কাজকর্ম।
আগের দিনে রোহিঙ্গাদের দেখা কম মিললেও বর্তমানে মালয়েশিয়া জুড়ে সর্বস্তরে রোহিঙ্গাদের দেখা মেলে। ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে রোহিঙ্গা। আর বাংলাদেশিদের সঙ্গে চেহারার মিল থাকায় অনেকেই বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে সুবিধা লুটে নিচ্ছে। অনেকেই অবৈধ এবং সমাজ বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে ধরা পড়লেই বাংলাদেশী তকমা লাগিয়ে দিচ্ছে। যে কারণে মালাই নাগরিকরা ভাবে বাংলাদেশিরা অনেক খারাপ।বাংলাদেশীদের ব্যাপারে অধিকাংশ মালয়েশিয়ানদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গারা।
মালয়েশিয়ায় চুরি-ছিনতাইসহ সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেক রোহিঙ্গা। আবার বাংলাদেশিদের সঙ্গে মিলে অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। মালয়েশিয়া থেকে হুন্ডির মাধ্যমে সব থেকে বেশি টাকা যায় চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজারে। মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বিভিন্ন রোহিঙ্গাদের দোকান থেকে হুন্ডির ব্যবসা পরিচালিত হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে কথা হয় একাধিক বাংলাদেশির সঙ্গে। হোটেলে কর্মরত আব্দুল ওহাব এই প্রতিবেদককে জানান, বিগত দিনে আমাদের মালিকরা আমাদের অনেক আদর যত্ন ভালোবাসতো। কিন্তু বর্তমানে রোহিঙ্গারা সামান্য কিছু বেতনে চাকরি করছে আর যে কারণেই দিন দিন আমাদের কদর কমে যাচ্ছে। গত মাসে মালিক বলেছে, এখন কাজের সিজেন ভালো না, তাই যদি দেশে চলে যেতে চাও,যেতে পারো, কারন বেশি বেতন দিয়ে আমি আর ব্যবসা চালাতে পারবো না। যাই টুকটাক কাজ চলছে তা আমি রোহিঙ্গাদের দিয়ে করিয়ে নিতে পারবো, তাতে আমার সামান্য কিছু খরচ হবে।
মালয়েশিয়া জুড়ে এমনই সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে বহু বাংলাদেশি কে বলে জানা গেছে। অনেক মালিক টাকা বাচানোর জন্য নিজের ব্যবসা ভালো নয় বলে জানিয়ে দিয়ে রোহিঙ্গাদের দিয়ে কাজকর্ম পরিচালনা করছে। বৈধ শ্রমিকের জন্য প্রতিবছর নির্দিষ্ট হারে একটি খরচ হয়ে থাকে। তাই বাড়তি আর টাকা পয়সা খরচ না করে রোহিঙ্গাদের দিকে ঝুঁকছে মালয়েশিয়ার মালিকরা।
আবার অনেক মালিক আছে যারা বাংলাদেশিকে পাসপোর্ট দিয়ে অন্যত্র কাজ করতে বলছে এবং লম্বা ছুটিতে দেশে যাওয়ার কথা জানিয়ে দিচ্ছে।