আল-আমিন : আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই ঋতুর পালাবদল ঘটে। প্রকৃতির আচরণ মানুষের অসহায়ত্বকে আরও প্রকট করে তোলে। হাড়কাঁপানো এই শীতেও অনেককে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে হয়। ছিন্নমূল অসহায় মানুষ খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত মোকাবিলার প্রয়াস চালায়। এমতাবস্থায় শীতার্ত মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানো বেশ দরকার হয়ে পড়েছে। ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী, সকল মানুষ তথা মুমিনগণ এক দেহ বিশিষ্ট। সুতরাং আমার শরীরে শীতের কাপড় না থাকলে যেমন কষ্ট অনুভব করি, অনুরূপভাবে অসহায়রারাও কষ্ট করছে। তাদের প্রতি সহায়তার গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বনবী (সা.) হাদিস শরীফে ইরশাদ করেন-‘সব মুমিন এক অখণ্ড ব্যক্তির মতো। যদি কোনো ব্যক্তির চক্ষু ব্যথা হয়, তবে তার সর্বাঙ্গ ব্যথিত হয়, যদি তার মাথায় ব্যথা হয় তখন সর্বাঙ্গ ব্যথিত হয়।’ (সহিহ বোখারি ও মুসলিম)
সব সৃষ্টিজীবই হলো আল্লাহর পরিবারের সদস্য। আর এ সব সদস্যদের মধ্যে মানুষ হলো শ্রেষ্ঠ। তাই অসহায় মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য জীবদের প্রতি সহায়তার জন্য আল্লাহর নবী (সা.) পার্থিব জগতে আল্লাহর করুণা লাভ ও পরকালে বেহেশত লাভের আশ্বাস দিয়েছেন। বর্ণিত আছে, সমস্ত সৃষ্টি জগৎ হলো আল্লাহর পরিবার। আর এ পরিবারের সদস্যদের যে যত বেশি উপকার করবে সে তত বেশি আল্লাহ তায়ালার প্রিয় পাত্র হবে। (সহিহ তিরমিজি)
তীব্র শীতের প্রকোপ নিদারুণ কষ্ট ও দুঃসহ অবস্থায় পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে দেশের অগণিত দুস্থ, নিঃস্ব, ছিন্নমূল, গরিব, দুঃখী বস্ত্রহীন শিশু, বৃদ্ধ নারী ও পুরুষ। শীত জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন সু-চিকিৎসা ও ওষুধপথ্য এবং শীত মোকাবিলায় সরকারী-বেসরকারী কার্যকর উদ্যোগ। জাতি-ধর্ম-বর্ণ দলমত নির্বিশেষে শীতার্ত অসহায় মানুষদের পাশে বিত্তবানদের দাঁড়ানো অবশ্যই প্রয়োজন। বিত্তবানদের প্রতি নবি করিম (সা.) পরকালীন পুরষ্কার প্রাপ্তির কথা ঘোষণা করে ইরশাদ করেন- 'এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করলে আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতের সু-স্বাদু ফলদান করবেন। কোন মুসলমানকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পান করালে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানি পান করাবেন।’ (আবু দাউদ)
দুর্যোগময় মুহুর্তে আর্তমানবতার সেবায় সাহায্যের হাত বাড়ানো খাদ্য, ওষুধপথ্য, শীতবস্ত্র এবং গরম কাপড়, প্রয়োজনে জরুরী ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বিপদগ্রস্থদের পাশে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। শৈত্যপ্রবাহ সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আল্লাহ তায়ালা ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানের দৃঢ়তা পরীক্ষা করেন, আর দেখেন বিপদগ্রস্থ অসহায়দের জন্য কারা সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়ায়। যাদের মাথা গোঁজার ঠাই নেই তাদের দুরাবস্থায় সর্বাধিক সে কথা বলাই বাহুল্য। হাড় কাঁপানো শীতে যে বিপুল জনগোষ্ঠী বর্ণনাতীত দুঃখ-কষ্টে দিনযাপন করে তাদের পাশে দাঁড়ানো ধর্মপ্রাণ মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব একটি মুসিবত দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তার মুসিবত সমূহ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোন অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দিবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ইহ ও পরকালে স্বচ্ছল করে দিবেন এবং আল্লাহ পাক বান্দার সাহায্য করবেন যদি বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে। (সহিহ মুসলিম)
আপনার মতামত লিখুন :