মানবজমিন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন মেয়াদে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দিল্লি সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বৃহস্পতিবার সকালে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে নরেন্দ্র মোদি বলেন, বিগত কয়েক বছর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক অনেক এগিয়েছে। ‘সম্পর্কের গতি ঊর্ধ্বমুুখী’ আখ্যা দিয়ে মোদি বলেন, এই মোমেনটাম ধরে রাখতে চাই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হওয়ায় ড. মোমেনকে অভিনন্দন জানান এবং প্রথম বিদেশ সফরের জন্য দিল্লিকে বাছাই করার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামপ্রতিক অগ্রগতির বিষয় অবহিত করেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের একাধিক টুইট বার্তা এবং দিল্লির বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের সচিত্র টুইট বার্তায় ওই বৈঠকের সারবেত্তা তুলে ধরা হয়। উল্লেখ্য, ৩ দিনের সফরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখন ভারতে। ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের কোনো জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর এটাই প্রথম ভারত সফর। দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতেই মন্ত্রীর ওই ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ সফর।
মন্ত্রী গতকাল প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ও কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন। মনমোহনের সঙ্গে আলোচনায় তিস্তাসহ দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন। মিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মতে, মনমোহন শিগগির তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ দুই পক্ষের অমীমাংসিত বিষয়াদির সুরাহা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। এদিকে আজ ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) ৫ম বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন ড. মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ওই বৈঠকে দুই দেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও অংশ নিচ্ছেন। কূটনৈতিক সূত্রে খবর বেরিয়েছে, ওই বৈঠকে বিনিয়োগ, নিরাপত্তা বোঝাপড়া, যোগাযোগ, সীমান্ত সুরক্ষা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, বিদ্যুৎ সংযোগ, শিপিং ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানো নিয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা করবেন।
দু’দেশের মধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমঝোতা চুক্তিও সই হতে পারে। জেসিসি বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আর বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। কলকাতার বহুল প্রচারিত দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, সম্পর্ক আরো নিবিড় করতে এগোচ্ছে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির সরকার। এজন্য শুক্রবার জেসিসি-র বৈঠক শুরুর আগে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন সুষমা। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের মধ্যাহ্নভোজেও আপ্যায়ন করবেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। ওই বৈঠকের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী। জাতিসংঘে ভারতের প্রাক্তন স্থায়ী প্রতিনিধি অশোক মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা হবে মন্ত্রী ড. মোমেনের। মন্ত্রী হওয়ার আগে ড. মোমেন বহু বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। শনিবার তার ঢাকা ফেরার কথা।
যে ৫টি সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি: সরকারি সূত্রগুলো বলছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরে ৫টি বিষয়ে নতুন করে সমঝোতা সই করতে যাচ্ছে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে। আজ সকালে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করবেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কর্মকর্তারা। সেখানে তারা একমত বিকালে সমঝোতাগুলো সই হবে। যার মধ্যে রয়েছে- দুর্নীতির তদন্ত, টেলিভিশন সমপ্রচার ও ওষুধ স্থাপনা ইত্যাদি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে এ নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলেননি। তবে ইঙ্গিত করেছেন আলোচনায় উভয় পক্ষ সম্মত হলে প্রস্তাবিত সমঝোতাগুলো সই হবে। অবশ্য তিনি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসসকে বলেছেন, ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দেশটির আরো সক্রিয় সহায়তা চাইবেন।