ডেস্ক রিপোর্ট : জামায়াত নিষিদ্ধের মামলা বিচারাধীন নেই আদালতে। একটি রিট মামলায় দলটির নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল হয়েছে হাইকোর্টের রায়ে। এ রায়ের বিরুদ্ধে দুটি আপিল করেছে দলটি। আপিল দুটি পাঁচ বছর ধরে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা হয়েছে হাইকোর্টে। এ রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ দুটি আপিল করেন। এরমধ্যে একটি নিয়মিত আপিল এবং অন্যটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন)। দুটি আপিলই বিচারাধীন আছে আপিল বিভাগে।
খুব শিগগিরই জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে করা আপিলের শুনানির জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মানবজমিনকে আইনমন্ত্রী বলেন, আপিলের শুনানির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। আশা করি তখন শুনানি হলে এটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে।
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায় বহাল থাকলে জামায়াত নিষিদ্ধ হবে কি না এমন প্রশ্নে জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, একটি দলের নিবন্ধন উচ্চ আদালতে বাতিল হয়েছে। নিবন্ধন বাতিল হলে কি কোনো দল রাজনীতি করতে পারে? নিবন্ধন না থাকলে নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্যতা থাকে না। আপিলে উচ্চ আদালতের রায় বহাল থাকলে জামায়াত নিষিদ্ধ হবে।
হাইকোর্টে নিবন্ধন বাতিলের পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ২৮শে অক্টোবর নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর আওতায় রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৪ঠা নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেয়া হয়। দলটির নিবন্ধন নম্বর ছিল ১৪। ২০০৯ সালে হাইকোর্টে দায়ের করা ৬৩০ নম্বর রিট পিটিশনের রায়ে আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০এইচ ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হলো।
পরে গত ৯ই নভেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর কোনো সদস্য নির্বাচনে প্রার্থিতা করতে চাইলে তাদের আটকানোর জন্য কোনো আইন নেই। জামায়াতের প্রার্থীরাও স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। শুধু জামায়াত নয়, অনিবন্ধিত যেকোনো দলের নেতারা একই সুযোগ পাবে।
এরপর গত ৩০শে ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জন নেতা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেন।
২০১৩ সালের ১লা আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ। রায় ঘোষণার পরপরই সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সার্টিফিকেট দেন হাইকোর্ট। তরীকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রোজউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফসহ ২৫ জনের করা রিট আবেদনের রুল নিষ্পত্তি করে এ রায় দেন হাইকোর্ট। ২০০৯ সালের ২৭শে জানুয়ারি বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাই সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট দ্বৈত বেঞ্চ ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি(১) (বি)(২) ও ৯০(সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন।
সংক্ষিপ্ত রায়ের দুদিন পর ৩রা আগস্ট হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল করা হয় চেম্বার জজ আদালতে। ওই বছরের ৫ই আগস্ট স্থগিতের আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের তখনকার চেম্বার জজ। ২০১৩ সালের ২রা নভেম্বর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়।