বিভুরঞ্জন সরকার : ঘটনাটি প্রায় বছরখানেক আগের। তখনই ফেসবুকে দিয়েছিলাম। প্রাসঙ্গিক মনে করেই আবার তুলে ধরছি।
একজন অসম্ভব ভালো মানুষ, যাকে বলে সাদা মনের মানুষের সঙ্গে আকস্মিকভাবেই পরিচয় হলো। তিনি একজন রিকশাচালক। টাঙ্গাইলে বাড়ি। বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালান। মিরপুরে থাকেন। রিকশা চালিয়ে দুই ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। বড় ছেলে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিকৌশল বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ছোট ছেলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। অদ্ভুত হাসখুশি মানুষ। শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলেন। লেখাপড়া কতোদূর করেছেন জানতে চাইলে বললেন, বাংলা ও ইংরেজি পড়তে পারেন, বোঝেন। জানতে চাইলাম, কেমন চলছে দেশ, সংসার।
বললেন, দেশ চলছে দেশের মতো। খালেদার পেছনে লেগে আছেন হাসিনা। হাসিনার পেছনে খালেদা। এর শেষ নেই। তবে ওসব নিয়ে আমি ভাবি না। আমি ভাবি আমার সন্তানদের নিয়ে। নিজের রোজগার নিয়ে। যদি কোনোদিন একশো টাকা বেশি রোজগার হয়, তাহলেই আল্লাহর কাছে শোকর আদায় করি।
প্রচ- যানজটের কারণে কাঁটাবন থেকে মালিবাগ মোড় আসতে সময় লেগে যায় প্রায় দেড় ঘণ্টা। এই সময়জুড়ে অনেক বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। বাদ যায় না খালেদা জিয়ার বিচার এবং আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গও।
তিনি মনে করেন, খালেদা জিয়ার শাস্তি হবে। বিএনপি কিছু করতে পারবে না। কিছু করার ক্ষমতা বিএনপির নেই।
আইন সবার জন্য সমান - এটা তিনি বিশ্বাস করেন না। রিকশাচালক এবং শিল্পপতির সঙ্গে কেউ এক আচরণ করে না। আমি কী আমার দুই ছেলেকে সমান ভালোবাসি? একজনের প্রতি একটু পক্ষপাত তো আছেই। স্পষ্ট কথা। কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। ভোট দেবেন কাকে জানতে চাইলে একটুও সময় না নিয়ে বললেন, শেখ হাসিনাকে, নৌকাকে।
কেন?
তার জবাব : মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় তার জীবন এবং সম্পদ। কিন্তু খালেদা জিয়া মানুষের এই জীবন ও সম্পদ নিয়েই রাজনীতির নামে ছিনিমিনি করছেন। অন্যকে কষ্ট দিয়ে তিনি ক্ষমতায় যেতে চান নিজের, পরিবারের এবং দলীয় লোকদের সুখের জন্য। আমি আবাক হয়ে তার কথা শুনি।
আশি টাকায় ভাড়া ঠিক করেছিলাম। গন্তব্যে পৌঁছে তাকে একশো টাকার একটি নোট দিয়ে বললাম, বাকিটা ফেরত দিতে হবে না। তিনি হেসে বললেন, না তিনি বাড়তি টাকা কারো কাছে নেন না। যা ভাড়া ঠিক হয়েছে সেটাই তার প্রাপ্য। হ্যাঁ, এমন মানুষ এখনও দেশে আছেন। সংখ্যায় হয়তো কম, কিন্তু আছেন। আর আছেন বলেই দেশটা এখনও চলছে।