শিরোনাম
◈ জুলাই অভ্যুত্থানের সেই ঐক্য কোথায়? ◈ ব্রিটিশদের ‘নাকানিচুবানি’ দিতে ইরানের এক দশকের ‘ছায়া যুদ্ধ’: যেভাবে চলছে যুক্তরাজ্যের ভেতরে গোপন তৎপরতা ◈ চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত, আরও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ◈ এবার অঝোরে কাঁদলেন মিসাইল ম্যান কিম জং উন (ভিডিও) ◈ জুলাই নিয়ে ‘আপত্তিকর’ ফেসবুক পোস্ট: পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অবরোধ-বিক্ষোভ ◈ নতুন উচ্চতায় রেমিট্যান্স: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের সর্বোচ্চ প্রবাহ ◈ ডলারের দরপতনে রেকর্ড, ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতনে বিশ্ববাজারে আস্থার সংকট ◈ “৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই চব্বিশের যোদ্ধাদেরও জাতি ভুলবে না” — তারেক রহমান ◈ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান খালেদা জিয়ার ◈ শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে বুধবার  সি‌রি‌জের প্রথম ওয়ানডে ম‌্যা‌চে  মু‌খোমু‌খি  বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৯:১৩ সকাল
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৯:১৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নির্ধারিত সময় থেকে অনেক পিছিয়ে বেশির ভাগ মেগা প্রকল্প

বণিক বার্তা : বিভিন্ন খাতের ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব প্রকল্পে দৃশ্যমান অগ্রগতির লক্ষ্য ধরা হলেও নির্ধারিত সময় থেকে অনেক পিছিয়ে আছে বাস্তবায়ন। চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সেতু বিভাগের দাবি অনুযায়ী নভেম্বর পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ৬১ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বাস্তবায়নকারী সংস্থার হিসাব মতে, ১৫ শতাংশের বেশি এগোয়নি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের কাজও। মেট্রোরেলের অগ্রগতি ১৬ শতাংশের মতো। যদিও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন তারা।

বৃহৎ প্রকল্পকে মেগা প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করে নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে সেগুলোকে ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং টাস্কফোর্সের আওয়ায় আনা হয়েছে। মেগা প্রকল্পগুলো হলো পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প, পদ্মা রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার প্রকল্প এবং মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। প্রকল্পগুলো তদারকিতে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং টাস্কফোর্স।

পদ্মা বহুমুখী সেতু: ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলোর অন্যতম পদ্মা সেতু। নানা জটিলতা পেরিয়ে ২০১৩ সালের অক্টোবরে জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সড়কের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সার্ভিস এরিয়া-২ ও মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সড়কের কাজ শুরু হয়। মূল সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২৬ নভেম্বর। ডিসেম্বরে শুরু হয় নদীশাসনের কাজ।

পদ্মা সেতু প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য বলছে, দুই প্রান্তের সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া-২-এর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৭ সালের জুনে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ীই এ তিন প্যাকেজের কাজ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে মূল সেতুর কাজ চলতি বছরের (২০১৮) ২৫ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত অগ্রগতি ৭১ শতাংশ। একইভাবে নদীশাসনের কাজ শেষ হওয়ার কথা ৩১ ডিসেম্বর। তবে এখন পর্যন্ত নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৪৭ শতাংশ। গত নভেম্বর পর্যন্ত সার্বিকভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি ৬১ শতাংশ।

৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুটির প্রধান দুই কাজে ধীরগতি সম্পর্কে সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মা বিশ্বের বড় ও শক্তিশালী নদীগুলোর অন্যতম। এর তলদেশের মাটির অবস্থাও অন্যরকম। একেক স্থানের মাটির ধরন একেক রকম। বলতে গেলে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে হচ্ছে। এটাই কাজে ধীরগতির প্রধান কারণ।

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ: পদ্মা সেতু চালুর দিন থেকেই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানোর লক্ষ্য সরকারের। এজন্য পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পকেও ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর সার্বিক কাজ যখন অর্ধেকের বেশি শেষ, তখন সবে শুরু হয়েছে রেলসংযোগের কাজ। ২০১৬ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের পর দুই বছর লেগেছে শুধু প্রকল্পের অর্থায়ন নিশ্চিত করতে। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথের নির্মাণকাজ গত অক্টোবরে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। কাগজে-কলমে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। কাজ শুরুর আগেই এক দফা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পটির। বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

পদ্মা সেতু চালুর দিন থেকে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানোর লক্ষ্যে মাওয়া থেকে ভাঙা পর্যন্ত অংশটির কাজ আগে করা হচ্ছে। অন্যদিকে মাওয়া থেকে ঢাকা পর্যন্ত অংশটির কাজ পরে সম্পন্ন হবে।

মেট্রোরেল: ঢাকার যানজট নিরসনে মেট্রোরেল প্রকল্পকেও অগ্রাধিকার দিয়ে ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রথমে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি (ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট) লাইন-৬-এর কাজ চলমান। নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। লাইনটির কাজ দুই অংশে বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রথম অংশ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। দ্বিতীয় অংশ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। ২০২৪ সাল পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও প্রথম অংশটি (উত্তরা-আগারগাঁও) ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই চালু করতে চায় সরকার।

প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত এ অংশটির কাজ এগিয়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এক বছরের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ শেষ করে মেট্রোরেল চালু করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকল্পটি পরিদর্শন করে একই ধরনের পর্যবেক্ষণ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগও (আইএমইডি)।

দোহাজারী-রামু ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ: ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইনের ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করছে রেলওয়ে। শুরুতে ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। পরবর্তী সময়ে নকশায় পরিবর্তন এনে বাস্তবায়নের নতুন মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২২ সাল পর্যন্ত।

তবে ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় প্রকল্পটি ধীরগতিতে এগোচ্ছে। জানা গেছে, প্রকল্পের জন্য ৩৬৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা প্রয়োজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৭ একর অধিগ্রহণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। দোহাজারী-রামু রেলপথটি যৌথভাবে নির্মাণ করছে চীনা রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি), চীনা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি), তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ১৩ শতাংশ।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছে। অগ্রাধিকারযুক্ত বেশির ভাগ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, কাজের গতিও এসেছে। দৃশ্যমান অগ্রগতি শিগগিরই নজরে আসবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: আর্থিক ব্যয়ের আকারে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ঈশ্বরদীর রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রকল্পে আন্তঃসরকার ঋণ চুক্তির মাধ্যমে রুশ সরকারের কাছ থেকে নেয়া হবে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ লন্ডন আন্তঃব্যাংক সুদহারসহ (লাইবর) এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের ৩০ নভেম্বর প্রথম ইউনিটির ফার্স্ট কংক্রিট পোরিং কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর চলতি বছরের ১৪ জুলাই দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট পোরিং করা হয়।

২০২১ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিটটি চালুর পরিকল্পনা থাকলেও কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় এখন তা পিছিয়ে ২০২৪ সাল নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সর্বশেষ তথ্য মতে, প্রথম ইউনিটের কাজ ৩০-৩৫ শতাংশ হয়েছে বলে জানা গেছে।

যদিও মোট ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আমরা বছরভিত্তিক বিভিন্ন লক্ষ্য স্থির করেছি। সেগুলো খুব সুন্দরভাবেই এগিয়ে চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পটি চালু হবে বলে আশা করছি।

রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র: ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপালে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। দুটি ইউনিটের মাধ্যমে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতাসম্পন্ন এ কেন্দ্রের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে ভারতের এক্সিম ব্যাংক ৭০ শতাংশ ঋণসহায়তা দিচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পটি চালুর কথা। কিন্তু গত আগস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত মাত্র ১১ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি সম্পন্ন হয়েছে। ফলে এ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট দুই বছর পিছিয়ে এখন ২০২১ সাল পুনর্নির্ধারণ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র: বিদ্যুৎ খাতে গৃহীত সরকারের আরেকটি মেগা প্রকল্প কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ প্রকল্পে ৬০০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। ব্যয়ের মধ্যে জাপান দেবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। যদিও চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এ প্রকল্পের মোট ভৌত অগ্রগতি মাত্র ১৮ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ১৭ শতাংশ। কাজে ধীরগতির কারণে এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকালও দুই বছর পিছিয়ে ২০২৪ নির্ধারণ করা হয়েছে।

সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর: সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয় এ সরকারের গত মেয়াদে। প্রকল্পটির গুরুত্ব বিবেচনায় এটিকে ফাস্ট ট্র্যাকের আওতায় আনা হয়েছিল। প্রকল্পটির সমীক্ষা যাচাইসহ প্রারম্ভিক সব কাজই সম্পন্ন করেছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির চূড়ান্ত বাস্তবায়নের জন্য সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়েরও কথা ছিল। তবে ভূরাজনৈতিক কারণে শেষ মুহূর্তে সেটি আর সই করা সম্ভব হয়নি। এরপর সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প এক প্রকার ফাইলবন্দিই হয়ে পড়ে। তবে গত ৭ জুন বাজেট বক্তৃতায় সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটিকে মেগা প্রকল্পের তালিকায় ফাস্ট ট্র্যাকে রেখেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের গভীর সমুদ্রবন্দর সেল সূত্র জানায়, প্যাসিফিক কনসালটেশন ইন্টারন্যাশনালের সমীক্ষা অনুযায়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রথম পর্যায়ে ২২৩ কোটি ডলার প্রয়োজন। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে মোট ৫৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়। তিন পর্যায়ে এ বন্দর নির্মাণের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে লক্ষ্যে ২০১০ সালের ২৬ আগস্ট ‘গভীর সমুদ্রবন্দর সেল’ নামের একটি সেলেরও উদ্বোধন করা হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১৬ সাল নাগাদ প্রথম পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়। প্রথম পর্যায়ের নির্মাণকাজ শেষ করতে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০৩৫ সাল নাগাদ দ্বিতীয় পর্যায়ের এবং আগামী ২০৫৫ সাল নাগাদ নির্মাণ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

কর্ণফুলী টানেল: সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহু লেন সড়ক টানেল নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা-আনোয়ারায় নির্মাণ করা হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।

কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেতু বিভাগ। ২০১৫ সালে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ২৪ শতাংশ। ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে না প্রকল্পটির। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির জন্য ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) সংশোধনের উদ্যোগও নিয়েছে সেতু বিভাগ। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা ও মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ সম্পর্কে সেতু বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শিডিউল মেনেই সব কাজ এগিয়ে চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে। প্রকল্পে কোনো ধীরগতি নেই।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর: পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের ভিত্তিফলক উন্মোচন করা হয় ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্ব্বর। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের জুনে। পরবর্তী সময়ে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ২০২৩ সাল নাগাদ শেষ হবে বলে লক্ষ্যস্থির করা হয়েছে। বন্দরটিকে পূর্ণাঙ্গভাবে গড়ে তুলতে তিনটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এগুলো হলো বন্দরের বহির্নোঙরে ক্লিংকার, সার ও অন্য বাল্ক পণ্যবাহী জাহাজ আনা ও লাইটার জাহাজের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে পরিবহন করা, ২০১৮ সালের মধ্যে পায়রা বন্দরে অন্তত একটি কনটেইনার টার্মিনাল ও একটি বাল্ক টার্মিনাল প্রস্তুত করা এবং ২০২৩ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে বন্দরের অন্য আনুষঙ্গিক পূর্ণাঙ্গ সুবিধা গড়ে তোলা।

মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, যেকোনো ধরনের সিভিল ওয়ার্কে এক ধরনের অনিশ্চয়তা থাকে। কাজ শুরুর পর প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে শেষ হতে বাড়তি সময় লাগতে পারে। বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোতেও, বিশেষ করে পদ্মা সেতু প্রকল্পটি এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে বলে আমি মনে করি। অন্যদিকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, আমাদের দেশে বড় প্রকল্পগুলো সমাপ্তির সময় নির্ধারণ করা হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। দেখা যায়, পরামর্শক প্রকল্প সমাপ্তির জন্য যে সময় বেঁধে দিয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়ে সমাপ্তির তারিখ নির্ধারণ করা হচ্ছে তার দেড়-দুই বছর আগে। সমাপ্তির সময় এগিয়ে আনলেই তো কাজ দ্রুত শেষ হবে না। যতটা সময় দরকার, ঠিক ততটাই লাগবে।

তিনি বলেন, বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের দক্ষ জনবলের ঘাটতিও প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কমিয়ে দেয়। আবার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে কর্ণফুলী টানেলের কথা বলা যায়। এসবের বাইরে ঠিকাদারদেরও গোপন এজেন্ডা থাকে প্রকল্পকে দীর্ঘায়িত করার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়