সমকাল : ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, 'জনগণকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না দিলে দেশে মহাসংকটের সৃষ্টি হবে। এখনও সামনে সাত দিন সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানি বন্ধ করে, প্রচার-প্রচারণার সমান সুযোগ দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন। তা না করে ভাঁওতাবাজির নির্বাচন করলে কেউ তা মেনে নেবে না।'
শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল জানান, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী ২৭ ডিসেম্বর জনসভা করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এছাড়া ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর ১৫টি (ঢাকা-৪ থেকে ১৮ আসনে) নির্বাচনী আসনে একই সময়ে জনসভা ও গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
ড. কামাল হোসেন দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, 'জনগণকে ভোট দিতে না দেওয়াটা হবে দেশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। এই আঘাত কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আর তখন সংবিধান লঙ্ঘনের মতো চরম অপরাধের জন্য দায়ী হবে এ সরকার।'
বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, 'বিগত ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, এভাবে পরিকল্পিতভাবে পুলিশকে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া, পুলিশ ও সরকারি দল মিলে যারা ভোট চাইতে যাচ্ছে, তাদের ওপর আক্রমণ করার মত ঘটনা আর কখনো হয়নি। এমন আর কখনো দেখিনি। কল্পনাও করা যায় না... যেভাবে নির্বাচনী পরিবেশকে ধ্বংস করা হয়েছে, এটা যেন অবিলম্বে বন্ধ করা হয়। না হলে সংবিধান লঙ্ঘন করার জঘন্য অপরাধ হবে।'
ড. কামাল হোসেন বলেন, 'অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুযোগ না দেওয়া হলে যারা নির্বাচিত দাবি করবে, তাদের কোনোভাবেই নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যাবে না। তখন মহাসংকট সৃষ্টি হবে। জনগণ দেশের ক্ষমতার মালিক।'
সংবাদ সম্মেলনে কলারোয়া ও ইটনা থানার ওসিসহ নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, 'সরকার সারাদেশে ঐক্যফ্রন্ট নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে নামিয়ে দিয়েছে। এটা তাদের পরিকল্পিত কর্মকাণ্ড। দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান অন্তরায় এখন পুলিশ ও সরকারি দল। দেশের স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর আজ এ ঘটনা দেখতে হচ্ছে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। আশা করবো, এই সংবাদ সম্মেলনের পর থেকেই সরকার এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করবে। অন্যথায় এক মহাসংকটে পড়বে দেশ।'
তিনি অভিযোগ করেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে সারাদেশে ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত বাধা ও মারধরের সম্মুখীন হচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসন বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শুক্রবারও যশোর-২ আসনের প্রার্থী আবু সাঈদ মো. শাহাদৎ হোসাইনকে গ্রেফতার করা হয়। এ পর্যন্ত ধানের শীষ প্রতীকের ১৬ জন প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভুতুড়ে মামলায় আরো ২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
গণফোরাম সভাপতি বলেন, নির্বাচন কমিশন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আইন করে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রদের ক্ষেত্রে পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিধান করেছে। অন্যদিকে উচ্চ আদালত একে একে তাদের প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করে চলেছেন। এতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীদের নির্বাচনের আগেই নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যেতে হচ্ছে এবং এর সুবিধা নিচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। নানাভাবে ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা হচ্ছে, যা ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনের বাইরে ঠেলে দেওয়ার শামিল।
এ সময়ে তিনি যেসব নির্বাচনী এলাকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে, সেসব নির্বাচনী এলাকায় পুনঃতফসিলের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, দলটির কার্যকরি সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, গণফোরাম নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।