টিভিএনএ প্রতিবেদন : যে কোনো পরিমান অ্যালকোহল তথা মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। স্বল্প পরিমাণে মদ্যপান উপকারী বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে তা ভুল প্রমাণ করেছে বিশ্বের ২৪৩টি প্রতিষ্ঠানের ৫১২জন বিজ্ঞানী।
সম্প্রতি এই গবেষণা রিপোর্টটি বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রচারিত হলেও আমাদের দেশে এই খবরটি তেমন গুরুত্ব পায়নি।
বিবিসি, সিএনএন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, গার্ডিয়ান সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়, ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৯৫ টি দেশে মানুষের মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব সম্পর্কে গবেষণা করে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষকরা এক হাজারেরও বেশি মদ সম্পর্কিত গবেষণা ও তথ্যসূত্র থেকে একটি ডাটাবেজ তৈরি করেছেন। মদ্যপান ২৩টি অসুখের ঝুঁকি বৃদ্ধিতে কতটা প্রভাব ফেলে তা খতিয়ে দেখতে এই তথ্য সংগ্রহ করেন তারা।
গবেষকরা দেখতে পান, যত কম পরিমাণেই মদ খাওয়া হোক, তা অসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। একমাত্র মদ্যপান না করলে এই প্রভাব থেকে আপনি মুক্ত থাকতে পারবেন।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের অধ্যাপক ইমানুয়েলা গাকিডু এই গবেষণাপত্রের একজন অন্যতম সদস্য। তিনি বলেন, যে কথাটা কেউ বিশেষ খেয়াল করে না, তা হলো কোনো পরিমাণে মদ্যপানই আপনার জন্য নিরাপদ নয়। দিনে একবার বা দুইবার মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এটা ভাবা এখন আর ঠিক নয়। আপনার জন্য যেটা সবচেয়ে ভালো তা হচ্ছে- মোটেও মদ্যপান না করা।’
এবিষয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদউদ্দিন উদ্দিন মাসঊদ বলেন, ইসলাম একফোটা মদকেও হারাম ঘোষণা করেছে। এখন বিজ্ঞানীরাও গবেষণা করে একই রিপোর্ট দেয়ায় আনন্দিত হলাম।
তিনি বলেন, সমাজের যেকোন অপরাধের পেছনে নেশার প্রভাব রয়েছে। যদি সমাজ থেকে নেশা বা মদ, গাঁজা, হিরোইনসহ সব মাদক বন্ধ করা যায় তাহলে সমাজ হবে শান্তিপূর্ণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক বলেন, মদ কখনই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে না। মদ লিভার, কিডনির জন্য মারাত্তক ক্ষতিকর। সেটি পরিমাণে কম বা বেশি হোক।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৬ সালে বিশ্বের ২৮ লাখ মানুষ মদ্যপান জনিত কারণে মারা গেছেন। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মানুষদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় প্রধান ঝুঁকির কারণ হচ্ছে মদ্যপান।
বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ মদ্যপান করে থাকেন, যাদের জন্য এই গবেষণাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী পরিমিত মাত্রায় মদ্যপান নিশ্চিতভাবেই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু এখন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মদ্যপানের অভ্যাস নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
১৯৯০-এর দশকে ‘ফ্রেঞ্চ প্যারাডক্স’-এর উপর কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর এই ধারণা মানুষের মনে বদ্ধমূল হয়। ফরাসিরা প্রচুর তৈলাক্ত খাবার খেলেও তাদের হৃদরোগ কম হয়, এই বিষয়টি ‘ফ্রেঞ্চ প্যারাডক্স’ অভিহিত করা হয়। কয়েকটি গবেষণায় দেখা যায়, মদ্যপানের কারণে চর্বিযুক্ত খাবার শরীরের বেশি ক্ষতি করতে পারে না।
কিন্তু নতুন গবেষণাটি থেকে জানা যাচ্ছে, পরিমিত মদ্যপানে হৃদরোগের ঝুঁকি কমলেও অন্যান্য বহু স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি পায় এবং এতে লাভের চেয়ে স্বাস্থ্যের ক্ষতিই হয় বেশি।
এসব ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে স্তন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, স্ট্রোক, যক্ষ্মা, সহিংস মনোভাব, নিজের শরীরে আঘাত করা এবং গাড়ি দুর্ঘটনা।