শিরোনাম
◈ পারস্পরিক শুল্ক সংকট: চূড়ান্ত দর-কষাকষিতে বাংলাদেশ ◈ আরব আমিরাতের আবুধাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশির ভাগ্যবদল: লটারিতে জিতলেন ৮০ কোটি টাকা ◈ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত ১১৮, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনায় হামাস ◈ ‘মব এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে কঠোর পদক্ষেপ নেবে সেনাবাহিনী’ ◈ হোটেলে নারীকে মারধর করা বহিষ্কৃত যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারের চেষ্টায় পুলিশ ◈ বনানীর জাকারিয়া হোটেলে ঢুকে নারীদের ওপর যুবদল নেতার হামলা, ভিডিও ◈ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহালের গেজেট প্রকাশ ◈ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ দিবস পালনের নির্দেশ ◈ তিন দিনের ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, পাবেন না যারা ◈ উচ্চ ও নিম্ন আদালতকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে হবে: সালাহউদ্দিন

প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর, ২০১৮, ০৩:২৭ রাত
আপডেট : ০৭ নভেম্বর, ২০১৮, ০৩:২৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মন ও মননের উন্নয়নও জরুরি

মিঠুন মিয়া : ‘উন্নয়নের রোল মডেল, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ শ্লোগানে দেশব্যাপী চলছে উন্নয়ন মেলা। মেলায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের বিষয়াদি তুলে ধরা হচ্ছে। দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে, তা মেলায় গিয়েই দেখতে হবে না। উন্নয়ন এখন সর্বত্র দৃশ্যমান। ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গঠনে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এদিক থেকে সরকার প্রশংসার দাবিদার। এক সময় বাংলাদেশকে বলা হত তলাবিহীন ঝুড়ি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের উজ্জ¦ল দৃষ্টান্ত। এমনকি পাকিস্তান আমাদের পিছনে।

মানুষের মাথাপিছু আয়, ব্যাংকে রিজার্ভ এবং জীবনযাত্রার মান বাড়ছে। সকল সেক্টরে অগ্রগতি লক্ষ্যণীয়। আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জন থেকে পিছপা হওয়ার আর সুযোগ নেই বরং অগ্রসরমান। কিন্তু দৃশ্যমান আর্থিক, অবকাঠামোগত যাবতীয় উন্নয়নের সাথে আমাদের মানসিক, আত্মিক তথা মন ও মননের কতটা উন্নয়ন হচ্ছে, তা ভাবনার বিষয়। দৃশ্যমান উন্নয়ন মেলার আয়োজন করে দেখানো সম্ভব, কিন্তু মন ও মননের উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে দৃশ্যমান করা সম্ভব নয়। মানসিক, মন ও মননের উন্নয়নের প্রকাশ ঘটে আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের মাধ্যমে।

একটি সংস্কৃতির মাধ্যমে। ছোট একটি ঘটনা। উন্নয়ন মেলায় গান গাইতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বাউল সামসুল হক চিশতী। তার গানের কথাগুলো মেনে নিতে পারেনি কিছু মহল। ফলে মারধর। মনের এই সংকীর্ণতা, কৃপণতা, অমিল কিছু হলেই পেশিশক্তির ব্যবহারকে মনের উন্নয়ন বলা যায়? চারপাশে মানুষ খুন, হত্যা, রাহাজানি, ছিনতাই, প্রতারণা, হামলা, ধর্ষণ,স্বার্থ নিয়ে দ্বন্দ্ব সংঘাত, জঙ্গি তৎপরতার মতো নানা অপরাধমূলক এবং নৃশংস ঘটনাগুলো আর্থিক উন্নয়নের মাঝে বার্তা দেয় যে, আমাদের মনের উন্নয়ন হয়নি। বরং থমকে যাচ্ছে। মনের অধঃপতন স্পষ্ট যখন দেখি মায়ের হাতে সন্তান খুন, কিংবা সন্তানের হাতে পিতামাতা খুন, ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, স্ত্রীর হাতে স্বামী কিংবা স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন। বিকৃত মনের পরিচয় পাই পথেঘাটে, কর্মস্থল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে  যৌন হয়রানি, ধর্ষণের মতো পাশবিক নির্যাতন, অহরহ শিশু হত্যাযজ্ঞ, নারী যৌনতার বস্তু, পথচারীকে গাড়ি চাপায় হত্যা, ক্ষুদ্র স্বার্থে অন্যের ব্যাপক ক্ষতি, অন্যকে ঠকানো, খাদ্যে ভেজাল, বিশ্বাসহানি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অসঙ্গতি। তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর নানা অপরাধ প্রবণতা, সামাজিক অবক্ষয়, নীতি নৈতিকতার অধঃপতন সর্বত্র। তখন বলা কঠিন আমরা মনের দিক থেকে উন্নত জাতি হচ্ছি।

কাজেই আর্থিক উন্নয়নের সাথে আমাদের মনের উন্নয়নও জরুরি। নতুবা দৃশ্যমান উন্নয়ন টেকসই হবে না, আমরা হীন জাতিতে পরিণত হব। মনের দিক থেকে আমরা গরিব থাকবই। অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি মানুষের মাঝে নীতি নৈতিকতা, মনুষ্যত্ববোধ, একে অপরকে সম্মান করা, অন্যের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া, নারী-পুরুষের সুসম্পর্ক, ভালোবাসা সৌহার্দ সম্প্রতির বন্ধন তথা একটি মানবিক সমাজের ভীত রচনা করতে হবে। মনের উন্নয়ন না হলে আর্থিক উন্নয়ন ভঙ্গুর হবে। যেকোন সময় ভেঙে পড়বে। কাজেই মানসিক উন্নয়ন সাধন ছাড়া আর্থিক উন্নয়ন টিকবে না। বিশ্বে অনেক রাষ্ট্র কেবল ডলারে উন্নত হয়েছিল, কিন্তু মানসিক ও চিন্তা জগতে উন্নয়ন হয়নি। ফলে সেসব দেশ এখন ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জন যতটা সহজ, মানসিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা ততটা সহজ নয় বৈকি। দেশজ উৎপাদন, রপ্তানি আয়, রেমিটেন্স, বৈদেশিক ঋণ সাহায্যসহ নানাভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়।

কিন্তু মানসিক বা আত্মিক উন্নয়ন হয় কিসে? এর জন্য দরকার সংস্কৃতি। কিন্তু এই সংস্কৃতি একদিনে গড়ে ওঠে না। দীর্ঘ সময়ের দরকার। সংস্কৃতিবান জাতি সকল উন্নয়নের অতন্দ্রপ্রহরী। তবে সমাজ থেকে সকল অসঙ্গতি দূর করা সম্ভব না আর হবেও না। তবে যত কমিয়ে আনা যায় ততোই ভালো। রুচি ও সংস্কৃতিবান জাতি গড়তে দরকার মানুষের মাঝে সুকুমার বৃত্তির চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকা-, নীতি নৈতিকতার শিক্ষা, শান্তি শৃঙ্খলার পথ দেখানো।

সকল সংকীর্ণতার উর্ধেŸ উঠে উদার মনমানসিকতার পরিচয় দিতে হবে। অন্যের মতামতকেও সম্মান দিতে হবে। আমরা মাঝে মধ্যেই চেতনা এবং আদর্শ হারিয়ে ভুল পথে পা বাড়াই। এই বাংলায় চিরদিন থেকে চলে আসা আদর্শ ও চেতনাকে উজ্জীবিত করতে হবে।

তবে এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। পারিবারিক এবং নৈতিক শিক্ষা জোরদার প্রয়োজন। এজন্য সুস্থ, সুন্দর এবং মানসিক প্রশান্তির পরিবেশও কাম্য। আর্থিক ও মানসিক উন্নয়ন এক সাথে ঘটাতে পারলে বিশ্বে আমরাই হবো উন্নত, সমৃদ্ধ এবং আধুনিক জাতি। প্রত্যেক মানুষের মাঝে গড়ে উঠুক একটি সুন্দর মন। যে মন পথ দেখাবে প্রশান্তি, মনুষ্যত্ব ও সত্য সুন্দরের। লেখক : শিক্ষক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সম্পাদনা : রেআ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়