অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে নাগরিক জীবনে স্থূলতা, ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপের মতো যেসব সমস্যা তৈরি হচ্ছে তাকে মোকাবেলা করার জন্যই নারীরা স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে ঝুঁকছেন বলে পুষ্টিবিদরা মনে করছেন।
পুষ্টিবিদরা মনে করছেন নারীদের মধ্যে ডায়েটের ব্যাপারে সচেতনতা বেড়েছে। এজন্য তারা পুষ্টিবিদদের কাছে যাচ্ছেন। হাসপাতালে গিয়েও নিজের বা পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য সম্মত খাবারের ব্যাপারে পরামর্শ চাইছেন।
ঢাকার বনানীর একটি খাদ্য ও পুষ্টি পরামর্শ কেন্দ্র এমএমডিসি’র বিশেষজ্ঞ মাসুমা আখতার জানান, এখন মানুষ আধুনিক জীবনযাপনে ব্যস্ততার কারণে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তেমনি অনেকেই খাবার নিয়ন্ত্রের ব্যাপারেও সচেতনও হয়ে উঠছে। এদের বড় অংশটিই নারী এবং এই প্রবণতা দিনে দিনে বাড়ছে।
তিনি জানান, কিছু রোগী আসেন যাদের বয়স পঞ্চাশের ঊর্ধ্বে। তাদের ডায়াবেটিস, কিডনি, হার্ট বা প্রেশারের সমস্যা আছে। পঞ্চাশ ভাগ রোগীই এ ধরণের সমস্যা নিয়ে আসেন। এর সঙ্গে আছে অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা, যারা ওজন কমাতে চান। এর মধ্যে বাচ্চারাও আছে। ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী অনেক নারীরা আসেন, যাদের হয়তো ওজনের জন্য বিয়ে হচ্ছে না, বাচ্চা হচ্ছে না। এরকম বড় একটি অংশ আমাদের পরামর্শ নিতে আসেন। আর একটি অংশ আছে যারা আসলে স্বাস্থ্য সচেতন, আরো ভালো বললে সৌন্দর্য সচেতন। তারা সৌন্দর্য রক্ষা করার জন্য আমাদের পরামর্শ নিতে আসেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর বাইরেও অনেক নারী রয়েছেন, যারা হয়তো কোন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেননি, কিন্তু ইন্টারনেট দেখে বা পত্রিকা পড়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
বাংলাদেশের জাতীয় পুষ্টি সেবা কেন্দ্রের পরিচালক এসএম মুস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রতিমাসে কত নারী পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেন বা এ ধরণের সমস্যায় ভোগেন, এ নিয়ে এখনো তাদের কাছে কোন তথ্য উপাত্ত নেই, তবে বেশি খাবার খাওয়া আর অপুষ্টির খাবার, এই দুই সমস্যা নিয়েই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। একটা সময়ে পুষ্টির অভাব আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা ছিল। কিন্তু এখন অতিরিক্ত পুষ্টিও একটি সমস্যা হয়ে উঠছে। ফার্স্ট ফুড বা তৈলাক্ত খাবার, বাইরের খাবার অনেকের জন্য স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করছে,যা এখন অনেকের উদ্বেগের বিষয়।
তিনি জানান, রোগব্যাধি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এখন অনেক নারী-পুরুষ স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠছেন। এ কারণে তারা খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে চান। অনেকে এজন্য যেমন চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন, অনেকে নিজেদের মতো করে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও করছেন।
বনানীর এক খাদ্য ও পুষ্টি সেন্টারের তত্ত্বাবধানে প্রতি মাসে যে সাত হাজার মানুষ খাদ্য পরামর্শ নিচ্ছেন, তাদের অর্ধেকের বেশি নারী।
তাদের একজন জারিন তাসলিমা জানান, অতিরিক্ত ওজনের কারণে একসময় আমি লক্ষ্য করলাম যে, আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি, হরমোন সমস্যাও হচ্ছে। তখন মনে হলো যে আমার খাদ্য বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। তবে এখনো এ ধরণের মানুষজনের সংখ্যা কম থাকলেও আস্তে আস্তে বাড়ছে। আমাকে দেখে আমার দুজন বান্ধবী তারাও খাদ্য নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ নিয়েছেন। তাদের কিন্তু কোন শারীরিক জটিলতা নেই।
চিকিৎসকরা বলছেন, বিশেষজ্ঞ চেম্বারে এসে যারা নিয়মিতভাবে খাবার নিয়ন্ত্রণের বা পুষ্টি পরামর্শ নেন, তাদের বেশিরভাগই আসছেন শহর এলাকার উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো থেকে। সূত্র: বিবিসি