শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ১৪ অক্টোবর, ২০১৮, ০৩:১৪ রাত
আপডেট : ১৪ অক্টোবর, ২০১৮, ০৩:১৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চাপাতি আন্দোলন : রুটি যখন ঘোল খাইয়েছিল ব্রিটিশ শাসকদের

সালটা ১৮৫৭। সময়টা সিপাহী বিদ্রোহের ঠিক আগে। হঠাৎ উত্তর ভারতের কিছু গ্রাম থেকে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো, ‘চাপাতি’ নামে পরিচিত একধরনের রুটি। সে রুটি মানুষের হাত ঘুরে ঘুরে ছড়িয়ে যেতে লাগল হাজার মাইল দূরে। কেন বিতরণ হচ্ছে এই রুটি? কে রয়েছে এর পেছনে? এ রুটি কি কোনো গোপন বার্তা পৌঁছাচ্ছে? নাকি পেছনে রয়েছে কোনো বড় ষড়যন্ত্র? ইংরেজ শাসকদের কপালে পড়ল চিন্তার ভাঁজ। ‘চাপাতি’ নামক নিরীহ দর্শন রুটিই হয়ে গেল ব্রিটিশ শাসকদের ঘুম নষ্টের কারণ। ইতিহাসে এ ঘটনাকে ডাকা হয় ‘চাপাতি আন্দোলন’ নামে।

‘চাপাতি’ বৃত্তান্ত

‘চাপাতি’ মূলত গমের আটা দিয়ে তৈরি একধরনের খামিরবিহীন রুটি। এটি সাধারণত তাওয়ায় ভেজে কিংবা খোলা আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করা হয়।

চাপাতি আন্দোলন : যেভাবে শুরু

প্রথম ‘চাপাতি’ বিতরণ ঠিক কোথা থেকে শুরু হয়েছিল, ইতিহাসে তা নিয়ে যদিও ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে রুটির এই অস্বাভাবিক ভ্রমণের বিষয়টি, ১৮৫৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ প্রসাশনের নজরে আনেন মাথুরার ম্যাজিস্ট্রেট মার্ক থ্রনহিল। থ্রনহিল ফেব্রুয়ারির কোনো এক সকালে অফিসে এসে, তার টেবিলে আবিষ্কার করেন, এক টুকরো ময়লা রুটি! অনুসন্ধানে তিনি জানতে পারেন, রুটিটি এখানে এনেছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা, সেই পুলিশ কর্মকর্তা সেটা পেয়েছেন একজন গ্রামের চৌকিদারের কাছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো চৌকিদার পেয়েছেন কোথা থেকে? জানা গেল, জঙ্গল থেকে কেউ একজন এসে প্রহরীদের কারো হাতে তুলে দেন এই রুটি, আর সাথে এটাও বলে দেন যে, আরো চারটি রুটি বানিয়ে যেন সকলকে বিতরণ করা হয়, এবং সে চারজনকেও যেন বলে দেওয়া হয়, তারাও যেন প্রত্যেকে আরো চারটি করে রুটি বানিয়ে বিতরণ করে। এ বিষয়ে ১৮৫৭ সালের মার্চে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন সেনা কর্মকর্তা গিলবার্ট হেডো তার বোনকে লেখা চিঠিতে লেখেন, ‘এখানে রুটি বিতরণের একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে চলছে। মনে হচ্ছে, কেউই এই ঘটনার প্রকৃত কারণ জানে না। কোথা থেকে শুরু, এর পেছনে কারা রয়েছে, কী উদ্দেশ্য রয়েছে কিছুই স্পষ্ট নয়। চাপাতিগুলোও ছিল স্বাভাবিক আকারের।

ধীরে ধীরে শ শ চাপাতি বিতরণ হতে লাগল ভারতের বিভিন্ন জেলাগুলোতে। রুটি বিতরণ অস্বাভাবিক রকমে বেড়ে গেলে, অচিরেই ব্রিটিশ প্রশাসনের ঘুম কেড়ে নেয় এই নিরীহ দর্শন চাপাতি।  রুটি বিতরণের সাথে জড়িত ছিলো অধিকাংশ পুলিশ সদস্য ও গ্রাম চৌকিদার। ব্রিটিশরা যদিও বিষয়টিকে গুরুতরভাবেই সন্দেহ করছিলো, কিন্তু রুটি বিতরণ প্রতিরোধ করতে তারা কোনো কার্যকর ব্যবস্থাই নিতে পারছিল না, কারণ যেহেতু রুটি বিতরণ অবৈধ কিছু নয়, কিংবা এর মধ্যে কোনো বার্তাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কাজেই রুটি বহনকারীদের কাউকে গ্রেফতার, কিংবা আইনের মুখোমুখিও করাও সম্ভব হচ্ছিল না। রুটি নিয়ে যত রটনা রুটি বিতরণকারীদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কিছু জানা সম্ভব হয়নি, কারণ তারাও ঠিক করে কিছু বলতে পারছিল না, কেন তারা রুটি বহন করছে। ব্রিটিশ প্রশাসন নানাভাবে অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদ করেও সঠিক কোনো উপসংহারে পৌঁছতে পারছিল না। তবে তারা ঠিকই অনুমান করতে পারছিল, এর আড়ালে কিছু না কিছু ঘটে চলছে। অনেকে শক্তভাবেই অনুমান করছিল, হয়তো কোনো গোষ্ঠী কোন গোপন বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করছে রুটির মাধ্যমে। তবে রুটির মধ্য থেকে কোনো বার্তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বার্তা পাঠানোর সাথে, রুটি বিতরণের উদ্দেশ্যের আসলেই কোনো সংযোগ ছিল কিনা। কেউ কেউ অবশ্য মনে করেছিল, রুটি বিতরণের উদ্দেশ্য ছিল কলেরা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ফসল রক্ষায় ভারতীয় কুসংস্কারের অংশ। আর কেউ কেউ একে ভেবেছিল নিতান্তই কাকতালীয় ঘটনা! যা-ই হোক, পরবর্তীতে সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাস অনুসন্ধানে, এই চাপাতি বিতরণের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে প্রায় সকলেই নিশ্চিত হন।

অভিনব মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধকৌশল জে ডব্লিউ শিরার গ্রন্থে রুটি বিতরণ সম্পর্কে মন্তব্য করেন, ‘যদি রুটি বিতরণের উদ্দেশ্য সত্যিকার অর্থেই বিদ্রোহকে ছড়িয়ে দেওয়ার মানসে হয়ে থাকে তবে বলা যায় এটি ছিল অত্যন্ত একটি সফল কূটচাল।’ বড় ধরনের একটি বিদ্রোহের প্রাক্কালে চাপাতি বিতরণের মতো একটি অভিনব কৌশল একদিকে যেমন ইংরেজদের বিভ্রান্ত করে, অপরদিকে এর আড়ালে সশস্ত্র প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হয় বিদ্রোহের জন্য। সেইসাথে চাপাতি বিতরণ ছিল, আসন্ন বিদ্রোহের একটি বার্তা। সেই সময়টাতে একটি বিশ্বাস প্রচলিত হয়ে উঠেছিল যে, ইংরেজ শাসনের শত বছর পূর্ণ হলে তাদের পতন অনিবার্য! সেই সময়টাতে চাপাতি বিতরণের মাধ্যমে, রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিল বিদ্রোহীরা, এবং সাধারণ মানুষও এটিকে সেই অর্থেই নিয়েছিল যে, অচিরেই কিছু ঘটে চলেছে। রোয়ার মিডিয়া

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়