মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে: জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদের এবছর ৭০তম বার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। এ সময়ে গত ৯ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র ও ইউএনওয়াচের বরাতে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন থেকে স্কুপ ওয়ার্ড ইন্ডিপেনডেন্ট নিউজ একযোগে বাংলাদেশ সম্পর্কে গভীর উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছে। মুখপাত্র রাভিনা সামদাশানি বাংলাদেশে প্রবর্তিত ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ বা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।
এতে বলেছেন, সংবিধিবদ্ধ বিষয়াবলি ও পরিসর নিয়ে নানা উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানুষের অধিকার থেকে মুক্ততার ক্ষেত্রে এই অবদমনমূলক আইনটি গত সোমবার বাংলাদেশে প্রবর্তন করা হয়েছে।
ফলে তা সাংবাদিক, ব্লগার, মতামতদাতা ও ইতিহাসবেত্তাদের কাজে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে এবং তাদের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আইনসিদ্ধ মতামত প্রকাশের অধিকার ও স্বাধীনতার চর্চায় দন্ডিত হবেন। এই আইনে যথেচ্ছভাবে পুলিশকে তল্লাশি ও গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাতে বিভিন্ন অপরাধগুলো জামিনবিহীন। সেটাই অতীব উৎকন্ঠার কারণ।
তিনি আরও বলেছেন, এই আইন নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাধ্যবাধকতা অর্থাৎ ‘ইন্টারন্যাশনাল কভন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস’ এবং মানবাধিকার সনদের অনুচ্ছেদ ৯, ১৭ ও ১৯ সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি, যথাক্রমে- ‘বিচারবিহীন গ্রেফতার’, ‘ব্যক্তিসত্ত্বায় হস্তক্ষেপ’ ও ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ খর্ব করেছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে সরকারের প্রতি তা পুর্নবিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (১২ অক্টোবর) ১৮ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সেখানে বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশ, যথাক্রমে- বাহরাইন, ক্যামেরুন, ইরিত্রিয়া, ফিলিপাইন ও সোমালিয়াকে ‘অযোগ্য’ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সেই অযোগ্যতা প্রতিপন্ন দেশগুলোর মানবাধিকার চিত্র ও মানবাধিকার বিষয়াবলিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জাতিসংঘে তাদের ভোট প্রয়োগটি তুলে ধরে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মানবাধিকার বিষয়ক এনজিও গ্রুপগুলো জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান রেখেছে, যাতে তাদের নির্বাচিত করা না হয়।
এক্ষেত্রে ইউএন ওয়াচ, হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন ও রাউল ওয়ালেনবার্গ সেন্টার প্রণীত ২১ পৃষ্টার একটি যৌথ প্রতিবেদনও প্রকাশ পেয়েছে, যা জাতিসংঘের কূটনীতিকদের দেওয়া হয়েছে। সংবাদটি আরও বলেছে, ২০০৬ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল গঠনের পর আসনের পর্যাপ্ততা থাকলেও এই প্রথম পাঁচটি আঞ্চলিক গ্রুপের মধ্যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না।
এতে জেনেভাভিত্তিক ইউএন ওয়াচের হিলেল নিউয়ার বলেন, ‘তৎকালীন জাতিসংঘ প্রধান কফি আনান গৃহীত ২০০৬ সালের ওই প্রয়াসের ক্ষেত্রে মানবাধিকার লংঘনকারী দেশগুলোকে চিহ্নিত করার লক্ষ্যটি থাকলেও দুঃখজনকভাবে সদস্যপদে নির্বাচিত সৌদি আরব, চীন, কিউবা, বুরুন্ডি ও ভেনিজুয়েলার কারণে তা করা যায়নি। এ বছর সেই নির্বাচনে গোলক ধাঁধাঁ বেঁধেছে।’
রাউল ওয়ালেনবার্গ সেন্টারের প্রধান ও কানাডার সাবেক আইনমন্ত্রী ইরউইন কটলার বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে জাতিসংঘই যখন মানবাধিকার লংঘনকারী দেশগুলোকে মানবাধিকার কাউন্সিলে নির্বাচিত করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা অপরাধ দমনের পরিবর্তে অব্যাহতির সংস্কৃতিটি গড়ে তোলে। তাই বিশ্বের গণতন্ত্রের উচিত কাউন্সিলের লক্ষ্যকে সমুন্নত রাখায় এগিয়ে আসা, যাতে পদস্খলন না ঘটে।’
এছাড়াও ওই প্রতিবেদনে বুরকিনা ফাসো, ফিজি, ভারত ও টগো-কে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ মানবাধিকার সম্পন্ন দেশ বলা হয়েছে, কেননা এই দেশগুলোতে সমস্যাপূর্ণ মানবাধিকার পরিস্থিতিসহ জাতিসংঘে তাদের ভোটপ্রয়োগ উন্নততর হওয়াও দরকার।
ওই পরিবেশিত সংবাদে হিলেল নিউয়ারের ভাষ্য, ‘সকল আলামত বলছে শুক্রবার রাবার-স্ট্যাম্পিং প্রক্রিয়ায় বাহরাইন, বাংলাদেশ, ক্যামেরুন, ইরিত্রিয়া, ফিলিপাইন ও সোমালিয়াকে নির্বাচন করা হবে, অথচ এই দেশগুলোর সরকার তার নিজ জনগোষ্ঠির মানবাধিকারই পর্যায়ক্রমিক খর্ব করছে।’