মুফতী আজীজুল্লাহ আশরাফ কাসেমী: চলছে আরবি মুহাররাম মাস। মহিমান্বিত ক’টি মাসের একটি হলো এ মুহাররাম। মর্যাদার বিচারে এটি বিগত হজ্বের মাস জিলহজ্ব মাসের মতই। কুরআন বলছে: ‘চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ, সম্মানিত। (জিলকদ, জিলহজ্ব, মুহাররাম ও রজব)... তোমরা তাতে নিজেদের (কারো) প্রতি জুলুম করোনা’।
ইসলামপূর্ব ইতিহাস বলে, জালিমরাও এসব মাসে জুলুম করতো না। লুট-তরাজ গুম-খুন বন্ধ থাকতো এ মাসগুলোতে। মানুষ সফর করতো নিরাপদে। বাণিজ্যিক কাফেলা রাত্রি নিশিতে যাত্রাবিরতি করতে পারতো যেখানে সেখানে; সহায় সম্পদ নিয়ে দোটানায় থাকতে হতোনা তখন। ইসলাম এসে তাদের উক্ত সম্মান প্রকাশের নীতিকে শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করেছে। বলেছে অন্যান্য মাসের মত এসব মাসের প্রতিও সম্মান পোষণ করতে, যাবতীয় অন্যায় অবিচার ও হত্যা পাপাচার বন্ধ রাখতে। সেমতে মুহাররামের এ মাসেও নিষিদ্ধ থাকবে এসব। আমাদের কলুষমুক্ত রাখতে হবে আরবী নববর্ষ ১৪৪০ এর অন্তত প্রথম এ মাসটি।নিরাপদ রাখতে হবে নিজেদের আমলনামা।
অন্যায় আনাচার থেকে নিজেকে মুক্ত করার পর মুমিনের রয়েছে আরো কিছু কর্তব্য। অতীতের পাপমোচন ও পরপারে নিজের মানোন্নয়নে যেসবের অবদান অসামান্য। রাসূল (সা.) বলেন, ‘রমযানের পর শ্রেষ্ঠ মাস হচ্ছে আল্লাহর মাস, মুহাররাম মাস’। সেমতে পূর্ণ মাস জুড়েই ঈমানদারের জন্য রয়েছে আমলের অফুরন্ত সুযোগ। এ মাসে অধিক পরিমানে রোজা রাখার জন্য উৎসাহিত করেছেন পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরাম। বিশেষত বিধান রয়েছে এ মাসের দশম তারিখের রোজার, আশুরার রোজার। রমাযান কেন্দ্রিক রোজার বিধান আসার পূর্বে এ দিনেই রোজা রাখতেন রাসূল সা.। সাহাবাদের বলতেন এ দিনে রোজা রাখতে। এক প্রকার আবশ্যিকরূপেই রাসূল (সা.) পালন করতেন রোজাটি। রমাযান কেন্দ্রিক রোজার বিধান অবতীর্ণের পর এ রোজায় নফল-শৈথিল্য এসেছে।তবু ফজীলত কমেনি কোন অংশেই। এই একটিমাত্র রোজা বিগত একটি বছরের পাপ মোচনে সাহায্য করে।
রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমার আশা, আশুরা দিবসে রোজা অতীতের এক বৎসরের গুনাহ মার্জনের কাজ করবে। সেজন্যেই তিনি রমাযানের রোজার মত গুরুত্ব সহকারে রাখতেন এ দিনের রোজা। আয়েশা রা. বলেন: ‘রাসূল সা. কে আমি দেখিনি কোন দিনের রোজাকে অন্য দিনের তুলনায় এতটা গুরুত্ব দিতে, আশুরার দিন আর রমাযান ব্যতিরেকে।
হযরত মূসা আ. তাঁর কওম সমেত কোন এক আশুরা দিবসে নীল দরিয়া পার হয়েছিলেন খোদার কৃপায়। ডুবেছিল ফিরআউন, ডুবেছিল তার দলবল। সে থেকে এ দিনে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে রোজা রাখত ইহুদীগণ। রাসূল (সা.) বললেন, ‘তোমাদের তুলনায় মূসার (আদর্শের) অধিক নিকটবর্তী হলাম আমরা’! এরপর তিনি রোজা রাখলেন, সাহাবাদেরকেও নির্দেশ দিলেন।
ইবনে আব্বাস রা. একবার বললেন, হে আল্লাহর নবী! এ দিনটিকে ইহুদীরা সমীহ পূর্বক রোজা রাখে। আমাদের রোজাও তাদের সদৃশ হয়ে যায়। রাসূল সা. বললেন: যদি আমি আগামী বৎসর জীবিত থাকি, তবে নবম তারিখটিকেও দশমের সাথে মিলিয়ে রোজা রাখব, ইনশাআল্লাহ’! পরের বৎসরটি আর আসেনি রাসূল সা. এর জীবনে। তবু তাঁর আগ্রহকে ভিত্তি করে বিধান এসেছে নবম দিবসটিকেও দশমীর সাথে মিলিয়ে রোজা পালনের, সেমতে এটিও মুস্তাহাব।
এদিন নিজ পরিবারস্থদের জন্যে একটু ভালো খোরপোষের ব্যবস্থা করার কথা বলেন অনেকে। হাদীসের দুর্বল একটি সূত্রকে কেন্দ্র করে এটিকে আমলে নেয়া হয়। এও করা যেতে পারে সাধ্যের সীমানায় থেকে। এছাড়া বাকি যত কাজ প্রচলিত আছে, আশুরা দিবসকে ঘিরে, সব’ই বর্জনযোগ্য কুসংস্কার। অসতর্ক কিছু মুসলমানের অপকীর্তী এসব, অথবা ইসলামের সুচতুর কোন শত্রুপক্ষ এসবের অনুপ্রবেশ করিয়েছে ইসলামী নীতি-সংস্কৃতির ক্ষতিসাধনের অসদুদ্দেশ্যে। সেমতে এসব হালুয়া-রুটি বিতরণ, অথবা শোকের র্যালীতে অংশগ্রহণ, মুমিনের জন্য কোনটিই কাম্য নয়। আল্লাহ তৌফিকদাতা!