শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০১৮, ১০:৪৫ দুপুর
আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০১৮, ১০:৪৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তাজউদ্দীন আহমদের মন

শুভ কিবরিয়া: তাজউদ্দীন আহমদ (১৯২৫-১৯৭৫), বাংলাদেশের যুদ্ধদিনের প্রধানমন্ত্রী। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশেরও প্রথম প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশে ফিরে সরকারের হাল তিনিই ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রীরূপে। এরপর ১০ জানুয়ারি ১৯৭১ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এলে যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন সেই সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব বর্তায় তাজউদ্দীন আহমদের কাঁধে। তাজউদ্দীন আহমদকে হত্যা করা হয় জেলখানার অভ্যন্তরে ৩ নভেম্বর ১৯৭৫। কাজেই তাঁর জীবন দীর্ঘায়ু হয়নি। মাত্র ৫০ বছর বয়সেই তাঁর জীবনের অবসান ঘটে। বলা যায়, এই স্বল্পায়ু জীবনেই এক মহত্তর কাজের সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন এবং তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সরকার বঙ্গবন্ধুর শারীরিক অনুপস্থিতিতে তার নামে পরিচালিত হয়েছে, প্রবাসে অবস্থিত বাংলাদেশের সেই প্রথম সরকারের প্রধানমন্ত্রীরূপে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে হয় তাজউদ্দীন আহমদকে। এটা পূর্ব নির্ধারিত কোনও বিষয় ছিল না। ইতিহাস তাঁকে এই দায়িত্ব দিয়েছিল ঘটনার প্রয়োজনেই। নয় মাসব্যাপী সেই অভূতপূর্ব সংগ্রামের বহুমাত্রিক লড়াইকে সংহত ও লক্ষ্যভেদী করে এক অসামান্য অর্জন তিনি সম্ভব করেছিলেন। শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনই নয়, স্বাধীন দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে আনার মতো কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিজয়ের পুরোভাগেও ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ ও তাঁর তৎকালীন সহকর্মীরা। যুদ্ধপূর্ব রাজনৈতিক জীবন, যুদ্ধকালীন জীবন এবং যুদ্ধপরবর্তী প্রশাসনিক-রাজনৈতিক জীবন সর্বত্রই তিনি রেখেছিলেন অসাধারণ প্রজ্ঞা, বিনয়, কর্মনিষ্ঠা, সততা, দূরদর্শিতা, নীতিনিষ্ঠতার এক বিরল ছাপ। তাঁর সব কাজের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে সত্যিকার ‘রাষ্ট্র’ ভিত তৈরির কাঠামোগত উন্নয়ন। এই গুণ বাঙালির জাতিগত বৈশিষ্ট্যের সাথে খুব মানানসই নয়। তাই আজও তাঁকে অনেকে অভিহিত করেন প্রচলিত রাজনীতির ‘মিসফিট’ হিসাবে। জেলখানায় তাঁকে খুন করা না হলে, জীবিত থাকলে তিনি এই রাজনীতির খোলনলচে কতটা বদলাতে পারতেন, কিংবা কতটা ‘ফিট’ হতেন সেই বিতর্ক আজ অবান্তর। তবে তাঁর সম্পর্কে যুদ্ধ চলাকালীন বিদেশি সাংবাদিকদের একটা পরিচিতি খুব হৃদয়গ্রাহী। ১৯৭১ সালের ২০ মার্চ বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন যুদ্ধরত বাংলাদেশকে নিয়ে এক প্রচ্ছদ কাহিনি রচনা করে। সেখানে তাজউদ্দীন আহমদ সম্পর্কে লেখা হয়..তাজউদ্দীন আহমদের রাজনীতির সবচেয়ে বড় গুণ তিনি কখনই দলের মধ্যে বা দলের বাইরে কোনও দলীয় উপগ্রহ বা নিজস্ব বলয় তৈরি করেননি । বলা চলে করতে চাননি। সেটা তাঁর চরিত্রের অংশও নয়। সে কারণে তাঁর মৃত্যুর পর তিনি ততটা বন্দিত নন তাঁর নিজ রাজনৈতিক দলেও। তবু এক অনিবার্য প্রয়োজনে তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত। যখনই রাজনীতি বা রাষ্ট্রে কোনও সংকট আসে তখন চিন্তাশীল, ইতিহাসমনস্ক, যুক্তিবাদী মানুষদের একটা বড় অংশ মনে করেন সংকট কাটাতে তাজউদ্দীন আহমদের মতো রাজনৈতিক নেতার বড় প্রয়োজন। তাজউদ্দীন আহমদ তো আর জীবিত ফিরবেন না, তাই ধারণা করা হয় তাঁর মতো চিন্তার, ন্যায্যতার ধারার মানুষরা বাংলাদেশের দুঃখদিনে জেগে উঠবেন। এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে কল্যাণ রাষ্ট্র উঠবার যাত্রাপথে ধাবিত করবেন। তাজউদ্দীন আহমদ মানুষ হিসেবে তো বটেই, রাজনীতিক হিসেবে যাতে আলোচিত না হন, সেই বাধা তাঁর জীবদ্দশাতেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। কেননা, তাজউদ্দীন আহমদ যে বিবেচনায় রাষ্ট্রকে দেখতেন তাতে জনভাবনা ছিল সর্বাগ্রে। তিনি মনে করতেন ‘রাষ্ট্র’ নিপীড়ক নয়, জনগণের আশ্রয় হবে। সেই রাষ্ট্র তো আর এমনি এমনি দাঁড়িয়ে ‘আমার দেশের উন্নয়ন আমি করব। সে ব্যয় আমাকে বহন করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেই ব্যয়কে একটা কষ্টিপাথরে যাচাই করতে হবে যে, এই ব্যয়ে দেশের উপকার হবে কি হবে না। এই ব্যয় এইজন্য করতে চাই যে, এই ব্যয়ের ফলে এ দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণ হবে। চারপাশের অবনতিশীল পরিস্থিতি তাঁর দৃষ্টি কেড়েছিল । তাই হয়তো ওই একই বক্তৃতায় আক্ষেপ নিয়েই বলেছিলেন,‘আমরা যদি গাব গাছ লাগিয়ে ফজলি আম চাই, তাহলে আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। ফজলি আম পেতে হলে আমাদের ফজলি আমের চারা লাগাতে হবে।’বলা যায় এই কাজে তিনি সফল হননি। তাঁর ব্যর্থতা শুধু তাঁকেই নয়, মুক্তিযুদ্ধের কাক্সিক্ষত বাংলাদেশকে ব্যর্থ করে দেয় অবশেষে। তবু তাজউদ্দীন আহমদ আমাদের নমস্য। কারণ, তাঁর মতো করে এই দেশ, রাষ্ট্র নিয়ে ভাবনার লোক খুব কম জন্মেছে এই ভূখ-ে। তিনি আবেগ-কল্পিত স্বপ্ন রাজ্যের মানুষ ছিলেন না, এই জল-কাদায় বেড়ে ওঠা বাস্তবানুগ রাজনীতিক ছিলেন। তাঁর চিন্তা ছিল পরিষ্কার। কর্ম ছিল স্বচ্ছ। সততা ছিল তাঁর ভাবনার অলংকরণ। পরিশ্রম আর নিষ্ঠার সাথে মেধাবী এই মানুষটির হৃদয় মিশেছিল এই রাষ্ট্রটিকে জনকল্যাণমুখী, জনমানুষের দেশ বানানোর নিদ্রাহীন সাধনায়। ২৩ জুলাই ১৯২৫ সালে আজকের গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার দরদরিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখাটি শেষ করতে চাই অর্থনীতিবিদ আনিসুর রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, সাপ্তাহিক/ সম্পাদনা : মো.এনামুল হক এনা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়