আমিন মুনশি: অন্যকে পীড়া দেয়া, কষ্ট দেয়া ইসলামের শিক্ষা নয়। তাই যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দেয়, তাকে শাব্দিক অর্থে মুসলমান বলা গেলেও একজন সাচ্চা মুসলমান হওয়ার ক্ষেত্রে সে অনেক দূরে। নবীজী তাঁর বাণীর শুরুর অংশে বলেছেন- ‘মুসলমান তাকে বলা হবে, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।’ এর পরের অংশে তিনি বলেছেন- ‘তার দ্বারা মানুষের জান-মালের কোনো শঙ্কা থাকবে না।’ নবীজীর এ কথা থেকে আমরা বুঝতে পারি- মুসলমানের কাজ হল এই যে, সে কোনো মানুষকেই কষ্ট দেবে না। চাই ওই ব্যক্তি মুসলমান হোক বা অমুসলিম।
নবীজী তাঁর বাণীতে হাত ও মুখের কথা উল্লেখ করার বিশেষ কারণ হল- সাধারণত মানুষ অন্যকে এই দুই উপায়েই বেশি কষ্ট দিয়ে থাকে। অন্যথায় তাঁর বাণীর উদ্দেশ্য হল- মানুষকে কোনোভাবেই কোনো ধরনের কষ্ট দেয়া যাবে না। হাতের দ্বারা ও মুখের দ্বারা তো নয়ই, বরং কোনো পন্থাতেই তার মনকে ব্যথিত করা চলবে না। হাতের দ্বারা কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্য সহজে বুঝা যায়- অন্যায়ভাবে মারপিট করা। কিন্তু মুখের দ্বারা কষ্ট দেয়ার মধ্যে অসংখ্য অপরাধ জড়িত রয়েছে। যেমন- মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, পরনিন্দা করা, গালমন্দ করা বা এমন কোনো আচরণ করা যার দ্বারা অন্যের অন্তর ভেঙ্গে যায়। এছাড়াও কষ্ট দেয়ার যত পদ্ধতি আছে তা এই হাদীসে হারাম করা হয়েছে। যেমন- চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার, সুদ, ঘুষ এগুলো দ্বারা অন্যের অধিকার লুণ্ঠিত হয়।
এসব অপরাধ ছাড়াও মানুষকে কষ্ট দেয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে যেমন- রাস্তায় ফলফলাদির ছিলকা ফেলে রাখা। ওই ছিলকায় পা পিছলে পড়ে গিয়ে যদি কেউ আহত হন, তাহলে এর সমুদয় গোনাহ ওই ব্যক্তির হবে যিনি ফলের ছিলকাটি রাস্তায় ফেলেছেন। এভাবে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা, অনির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং করা, মাইকের অপব্যবহার করে মানুষকে কষ্ট দেয়া এ কাজগুলো শুধু সভ্যতা পরিপন্থীই নয়; বরং এই হাদীসের আলোকে তা গোনাহের কাজ। তাই ইসলাম তার প্রতিটি নির্দেশে অন্যকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছে।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে তিরমিযী ও নাসায়ী শরীফের এক বর্ণনায় এসেছে, নবী করীম (সা.) ইরশাদ ফরমান- ‘মুসলমান সেই ব্যক্তি যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে এবং মু’মিন তাকে বলা হয় যার পক্ষ হতে অন্য মানুষের জান-মালের কোনো শঙ্কা থাকে না।’
নবীজীর (সা.) উপরোক্ত মুখনিঃসৃত বাণী আমাদের জীবন ব্যবস্থার পূর্ণ একটি চিত্র অঙ্কন করে দিয়েছে। সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে ইসলাম যত বিধিবিধান দিয়েছে, তার চ‚ড়ান্ত ও সর্বশেষ উদ্দেশ্য হল, আপন সত্তা দ্বারা কোনো মুসলমান এমনকি কোনো মানুষের যেন কোনো ধরনের কষ্টের সম্মুখীন না হতে হয়।