শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২০ জুলাই, ২০১৮, ০৭:৫৭ সকাল
আপডেট : ২০ জুলাই, ২০১৮, ০৭:৫৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নির্বাচনে আলোচিত নাম নওয়াজ ও সেনাবাহিনী

ডেস্ক রিপোর্ট : সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের অভিযোগ, চরমপন্থার পৃষ্ঠপোষকতা ও সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়েই ২৫ জুলাই পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার পালাবদলের আশা করা হলেও উদ্বেগের কারণ আছে। গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতার হাতবদল দেশটির ইতিহাসে খুব অল্প সময়েই ঘটেছে।

বিশ্বকাপজয়ী সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কারাগারে থাকা তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফকে রুখতেই সেনাবাহিনীর তৎপর বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে কয়েকটি প্রাণঘাতী হামলা ভোটের মেজাজে কালো ছায়া ফেলেছে এবং উচ্চ নিরাপত্তা থাকার পরও হামলার ঘটনায় সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা ক্রমেই ফিকে হয়ে আসছে। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এসব কথা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বর্তমান দুই আলোচিত নাম নওয়াজ শরিফ ও তাঁর প্রতিপক্ষ সেনাবাহিনী।

বিপুল জনসংখ্যার পাকিস্তানে নিরাপত্তার মান নিয়ে ভীতি সব সময় কাজ করে। পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক হুসেইন হাক্কানি বলেছেন, ‘নির্বাচনে ফল যা-ই হোক না কেন, ২৫ জুলাইয়ের নির্বাচন পাকিস্তানে শুধু অস্থিতিশীলতা বাড়াবে। এ নির্বাচন হবে এমন, যাতে আসলে কেউই জিতবে না। এটি বিজয়ী ছাড়া একটি নির্বাচন হবে।’

তবে নির্বাচনে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তার হস্তক্ষেপের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করে আসছেন আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর।

প্রায় দুই কোটি নতুন ভোটারসহ ১০ কোটি ৬০ লাখ পাকিস্তানি পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) উত্তরসূরি বাছাই করবেন। জনসংখ্যাধিক্য পাঞ্জাব প্রদেশে পিএমএল-এনের শক্ত ঘাঁটি থাকায় আশা করা হচ্ছে, জনগণের রায় শাহবাজের পক্ষেই যাবে। পাকিস্তানে ক্ষমতার মূল নিহিত রয়েছে এ প্রদেশেই। কারণ, দেশটির জাতীয় পরিষদ বা পার্লামেন্টের ৩৪২ আসনের মধ্যে পাঞ্জাবেই ১৪১টি।

নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় এসেছিলেন ২০১৩ সালে। এবারও দলটি আশা করছে, নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরিফের অধীনেই আবার জনগণের ম্যান্ডেট পাবে। অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নওয়াজের দলের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দুর্নীতির মামলায় নওয়াজ শরিফ কারাগারে। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সহসভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির নামও জড়িয়ে আছে তিনটি ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ উপায়ে লেনদেনের সঙ্গে। সাবেক স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফ রাজনৈতিক দল দাঁড় করালেও তিনি আছেন স্বেচ্ছা নির্বাসনে। ফলে পাকিস্তানের রাজনীতির মাঠ বলতে গেলে খেলোয়াড়শূন্য। এ অবস্থায় ইমরান খানের জন্য ‘ছক্কা’ মারা বা বোলিংয়ে বোল্ড আউট করাটা খুব সহজ হতে পারে। যদি ইমরান তা না পারেন, তাহলে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো পিপিপিকে নিয়ে কিং মেকারের ভূমিকায় চলে আসতে পারেন। বিজয়ীদের নিয়ে তিনি জোট গঠনের দিকে যাবেন বলেই ধারণা করনা হচ্ছে।

‘নীরব অভ্যুত্থান’
পাকিস্তানের বর্তমান দুই আলোচিত নাম নওয়াজ ও তাঁর প্রতিপক্ষ সেনাবাহিনী। বিভিন্ন সময় একে অপরের বিরুদ্ধে তারা সমালোচনায় মত্ত। নওয়াজ আসন্ন নির্বাচনে পিএমএল-এনের প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখানোর জন্যও সেনাবাহিনীর জেনারেলদের ওপর দোষ চাপিয়েছেন।

নওয়াজ শরিফ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে বিরোধ এ মাসের শুরুতে চরমে ওঠে, যখন তাঁর অনুপস্থিতিতে দুর্নীতির দায়ে ১০ বছরের সাজা হয়। নওয়াজের স্ত্রী কুলসুম নওয়াজ লন্ডনে ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখান থেকে এক সপ্তাহ আগে নওয়াজ পাকিস্তানে ফেরেন এবং তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামরিক বাহিনীর কারসাজির শিকার হয়ে তিনি নিজের ক্ষমতা কতটুকু দেখাতে পারবেন, তার ওপর নির্ভর করছে পিএমএলএনের পরিণতি। জেনারেলদের বিরুদ্ধে নওয়াজ শুধু অভিযোগই করেননি, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অপহরণ ও ভয়ভীতি দেখানো বেড়েছে বলেও জানিয়েছে প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলো ও অধিকারকর্মীরা। নির্বাচন সামনে রেখে নির্দিষ্ট কিছু দল ও বিষয় প্রচারে সেন্সরশিপ আরোপকে একটি থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠান ‘নীরব অভ্যুত্থান’ বলেছে।
প্রচারের ফোকাসে ফেলা হয়েছে নওয়াজের দলকে। বিলাওয়াল ভুট্টোও তাঁর প্রচারে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগ করেছেন। এমনিতেই পাকিস্তানে একটি দুর্বল বেসামরিক সরকার গঠিত হোক, তা সব সময় চায় সেনাবাহিনী। তারা কোনো সময়ই চায় না সরকার ও নিরাপত্তা বিভাগগুলোর মধ্যে ক্ষমতায় ভারসাম্য আসুক।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘সেনাবাহিনী স্পষ্টত নেতৃত্বের নতুন প্রজন্ম তৈরির চেষ্টা করছে।’ আর এটা হলে সুবিধা পাবেন ইমরান খান। এমনটাই মনে করা হচ্ছে। তাঁকে পাকিস্তানে অবাধে চলাচল করতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী দেখছে, দেশ শাসন করার জন্য তিনিই উত্তম বাছাই হতে পারেন।

পাকিস্তানের জন্য চ্যালেঞ্জ
হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান নিজেদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে ঘোষণা করেছে। নির্বাচনকে ভয়াবহভাবে, আগ্রাসীভাবে জালিয়াতির চেষ্টা রয়েছে এ নির্বাচনে। নির্ধারিত দিনে নির্বাচন হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদি সামান্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয়, যদি একটু পিছলে যায়, যদি কর্তৃত্বপরায়ণতা জেগে ওঠে, তাহলে পাকিস্তান বড় এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, ‘নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এর বৈধতা নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এটা কার্যকরী গণতন্ত্রের পথে পাকিস্তানের পরিবর্তনের ভয়ংকর নির্দেশনা।’

পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর অভিযানের পর থেকে ব্যাপকভাবে কমে যায় জঙ্গি হামলা। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের মূল উৎপাটনে ব্যর্থ হয়েছে দেশটি। জঙ্গিরা আত্মঘাতীসহ এখনো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে কয়েকটি হামলায় ১৪৯ জন নিহত হন, যা পাকিস্তানের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণঘাতী হামলা। এ অবস্থায় ইমরান খান উগ্রধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ও তাঁর নেতৃত্ব চরমপন্থীদের হাতকেই শক্তিশালী করতে পারে।
সূত্র : প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়