শিরোনাম
◈ শ্রীলঙ্কার কা‌ছে আফগা‌নিস্তান হে‌রে যাওয়ায় সুপার ফো‌রে খেলার সু‌যোগ পে‌লো বাংলাদেশ ◈ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে টিউলিপের মিথ্যাচার, নতুন সংকটে স্টারমার: ডেইলি এক্সপ্রেসের রিপোর্ট ◈ শুধু অতীতের নয়, বর্তমানের দুর্নীতি থামাতেও নজর দিতে হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ◈ বাংলাদেশ ও চীন সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে একসাথে এগিয়ে যাবে : প্রধান উপদেষ্টা  ◈ সাফ চ‌্যা‌ম্পিয়নশী‌পে নেপালকে ৪-০ গো‌লে হারা‌লো বাংলাদেশ ◈ শ্রীলঙ্কার প্রতি বাংলা‌দে‌শের সমর্থন, চোখ এড়ায়নি লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের ◈ আফগানিস্তান-শ্রীলংকা ম্যাচের ফল যেমন হলে লাভ বাংলাদেশের ◈ নির্বাচনী দায়িত্বে অপরাধের সাজা বাড়ছে: অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন ◈ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সম্পূর্ণভাবে পৃথক করলো সরকার ◈ কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয় বিএনপি : সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ১২ জুলাই, ২০১৮, ০৩:২৭ রাত
আপডেট : ১২ জুলাই, ২০১৮, ০৩:২৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বন্দি ছিল মানিকগঞ্জ কারাগার

ডেস্ক রিপোর্ট : প্রবাদ আছে, যেমন বাপ তেমন বেটা। নুরশেদ আহমেদ ভূঁইয়া ও মো. আলী আফজালের বেলায় বলা যেতে পারে যেমন শ্বশুর, তেমন জামাই। মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে জেল সুপার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন নুরশেদ আহমেদ ভূঁইয়া। একই সময়ে একই জেলের ডেপুটি জেলার ছিলেন মো. আলী আফজাল।

কারা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানে দায়িত্ব পালনকালে হেন কোনো দুর্নীতি নেই, যা শ্বশুর-জামাই মিলে করেননি। তাদের দুর্নীতি নিয়ে কারা অধিদপ্তর গঠিত একটি কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই কারাগারে থাকাকালে শ্বশুর-জামাই মিলে ১৫ ধরনের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের এসব দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে এখন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে।

জেল সুপার নুরশেদ আহমেদ ভূঁইয়া বর্তমানে কারা অধিদপ্তরে সংযুক্ত এবং তার জামাই মো. আলী আফজাল কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ডেপুটি জেলার হিসেবে কর্মরত। মানিকগঞ্জ জেলে থাকাকালে তারা লাগামহীন দুর্নীতি করেছেন। শ্বশুরের নির্দেশে মৌখিকভাবেই কারারক্ষীদের ছুটি দিতেন জামাই। আবার জামাই ডেপুটি জেলারের ৭ মাস বয়সী ছেলেকে (জেল সুপারের নাতি) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ানোর নামে শিক্ষা ভাতা আবেদনে স্বাক্ষর করেন শ্বশুর।

কারাবিধির তোয়াক্কা না করেই ৬৩ জন কারারক্ষীকে ছুটি প্রদান করেন দুজন মিলে। ঘুষের বিনিময়ে রেজিস্টারবিহীন ছুটিতে একেকজন কারারক্ষীকে বছরে সর্বোচ্চ ১৫৯ দিন ছুটি প্রদান করেন তারা। এ ছাড়া বন্দি ও তাদের স্বজনের মধ্যে সাক্ষাতের জন্য অবৈধভাবে টাকা নিতেন। টাকার বিনিময়ে বন্দিদের নানা সুযোগ সুবিধা দিতেন। সরকারি গাড়ির তেল চুরিতেও নাম এসেছে জামাই-শ্বশুরের।

কারা অধিদপ্তর গঠিত কমিটি গত বছর থেকে দুজনের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত শুরু করে। তদন্ত চলাকালে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলারসহ ১৮ জনের জবানবন্দি রেকর্ড করে কমিটি।

ঢাকা বিভাগীয় কারা উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, গোপালগঞ্জের জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন এবং টাঙ্গাইলের জেলার রীতেশ চাকমার নেতৃত্বে তদন্ত দল ব্যাপক অনুসন্ধান শেষে কারা অধিদপ্তরে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। সম্প্রতি সেই প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছয়। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নুরশেদ আহমেদ ভূঁইয়া ও আলী আফজালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে শাস্তি এড়াতে শ্বশুর-জামাইও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেশ দৌড়ঝাঁপ করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে মো. আলী আফজাল বলেন, জামাই-শ্বশুর একই কারাগারে ছিলাম এটা আমাদের ভেতরে থাকা কিছু কারা সদস্য ভালো চোখে দেখেনি। আবার যারা নানাভাবে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে, তারা মিলে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। এটা অনেক আগেই মিটমাট হয়ে গেছে।

কারা অধিদপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধার জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে কারা সদস্যদের ছুটি প্রদানে নিয়ম অনুযায়ী তার সুপারিশ নেওয়া হতো না। কারা সদস্যরা সরাসরি জেল সুপার বা ডেপুটি জেলারের কাছ থেকে টাকা দিয়ে ছুটি নিতেন। রেজিস্টার বুকে ছুটির তথ্য লিপিবদ্ধ না করেই মৌখিকভাবে অনেক কারারক্ষী বছরের অধিকাংশ সময় বাড়িতে থাকতেন। আবার ছুটিকালীন সময় বেতন ও রেশন নিয়ে কে কোথায় থাকতেন, রেকর্ড বুকে সেসব তথ্যের উল্লেখ থাকত না। এসব বিষয়ে নূর মোহাম্মদ মৃধা জেল সুপারকে প্রশ্ন করলে উল্টো তাকে অশালীন ভাষায় গালাগাল এবং তার এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন) খারাপ দেওয়ার হুমকি দিতেন জেল সুপার।

চলতি দায়িত্বে থাকা জেলার আবু মুছা তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, কারারক্ষীদের ছুটি প্রদানের ক্ষেত্রে জেলারের স্বাক্ষরের স্থানে জেল সুপার নিজেই স্বাক্ষর দিতেন। তেল চুরিসহ নানা অনিয়মের কথা তুললে তাকেও এসিআর খারাপ দেওয়ার ভয় দেখানো হতো।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কারাগারের গাড়ির বিপরীতে ভুয়া লগবই ও ভাউচার তৈরি করে তেল খরচ-মেরামতে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেন জেল সুপার ও ডেপুটি জেল সুপার। তারা কারা চিকিৎসকের জন্য নির্ধারিত বাসায় বসবাস করলেও সরকারি হারে ভাড়া প্রদান করতেন না। কারাগারে বন্দি ও তাদের স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতে ঘুষ আদায়সহ নানা ধরনের অনিয়মের বিষয়ে যিনিই কথা বলতেন, তাকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করা হতো।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জেল সুপার নুরশেদ আহমেদ ভূঁইয়া অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বন্দিদের অপরাধ মাফ করে দিতেন। আর টাকা না পেলেই শাস্তি দেওয়া হতো বন্দিদের। হাজতি নং-৩৬৪৮/১৬ আবদুল হক ওরফে কালামের শারীরিক চিহ্ন হিসেবে ‘ডান পা কাটা বা নাই’ লেখা সত্ত্বেও তাকে ৭ দিন ডা-াবেড়ি পরানোর নির্দেশ দেন জেল সুপার। বাস্তবে ডা-াবেড়ি পরানো হয়নি। টাকার বিনিময়ে কারাগারে বলাৎকার, ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায় জড়িতদের সাধারণ ক্ষমা করে দিতেন জেল সুপার।

আবার সাজার রেজিস্টার ও টার্মিনেশন খাতায় ঘষামাজা/ফ্লুইড ব্যবহার করতেন। জেলের খাদ্যগুদামের রক্ষক জেলার হলেও তাকে সেখানে যেতে দেওয়া হতো না। অজ্ঞাত কারণে বিধিবহির্ভূতভাবে কিশোর ও বয়স্ক বন্দিদের একই ওয়ার্ডে রাখা হতো। এ ছাড়া জেল সুপার নিয়ম অনুযায়ী কারাগারের ভেতরে পরিদর্শনে যেতেন না। কারারক্ষীদের দরবার নিতেন না। ডেপুটি জেলার আলী আফজাল তার সাত মাসের শিশুকে স্কুলে পড়ানোর নামে মাসে সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে ভাতা উত্তোলন করতেন।

প্রধান কারারক্ষী মো. মোশারফ হোসেন মোল্লার জবানিতে বলা হয়, বিধি না মেনেই যেসব কারারক্ষীকে ছুটি দেওয়া হতো, তারা বলতেন টাকার বিনিময়ে ছুটিতে যাচ্ছি। ছুটি ভোগ শেষে একই ব্যক্তি আবার ছুটিতে যেতেন। প্রধান কারারক্ষী হিসেবে মোশারফ হোসেন তাদের কারণে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বছর রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জেল সুপারের বাড়ির নির্মাণকাজ চলছিল। তখন কারারক্ষী নং-১৩৩৮৮ মো. আবদুল মান্নানকে দিয়ে ৩ মাস ধরে বাড়ির নির্মাণকাজের তদারকি করানো হয়। এভাবে আরও অনেক কারারক্ষীকে দিয়ে শ্রমিকের কাজ করানো হয় তার বাড়িতে। জেল সুপার ও ডেপুটি জেলারের অনিয়ম-দুর্নীতি চক্রে কারারক্ষী মহিউদ্দীন, তুহিনুর রহমান, জসিম উদ্দিন, জ্যোতিশ চন্দ্র দাশসহ আরও অনেকে জড়িত। তদন্ত কমিটি তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে। দৈনিক আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়