আক্তারুজ্জামান : চলমান বিশ্বকাপে আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই, শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। হাসি-কান্না আর আনন্দ-বেদনার পর্ব অর্থাৎ বিশ্বকাপের নকআউট পর্ব শুরু হচ্ছে আজ থেকে। দুইবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও শক্তিশালী ফ্রান্সের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে এ পর্ব। যে দল হেরে যাবে, তারা বিদায় নেবে বিশ্বকাপ থেকে। বিশ্বব্যাপী ফ্রান্সের খুব একটা সমর্থক না থাকলেও কোটি কোটি ভক্ত রয়েছে আর্জেন্টিনার। আজকের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচটি হৃদয় ছুঁয়ে যাবে ভক্তদের। একদল হাত তুলবে আর্জেন্টিনার পক্ষে, আরেক দল ফ্রান্সের সমর্থনে। ৯০ মিনিট পর কেউ উল্লাসে মাতবে, কেউ আড়ালে অলক্ষ্যে চোখের জল ঢালবে। বিশ্বব্যাপী ফুটবল এভাবেই চলছে চলবে।
গ্রুপ পর্বে যেখানে একটি ম্যাচ হেরে গেলেও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকে এবার আর সেই সুযোগটি নেই। কোন রকম ভুল করলে বা পা ফসকে গেলেই বেজে যাবে বিদায় ঘণ্টা। যেন মৃত্যুকূপের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার মতো ব্যাপার। বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় কাজানের মাঠে শক্তিশালী ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে সাম্পাওলির শিষ্যরা। দিনের অপর ম্যাচে রাত ১২টায় মাঠে নামবে উরুগুয়ে ও পর্তুগাল।
মাঠে নামার আগে বেশ বিপদে আছে লিওনেল মেসিরা। উড়ন্ত ফ্রান্সের মুখোমুখি হওয়ার দিনে তাদের শত্রু ‘হলুদ কার্ড’। মেসি, মাশ্চেরানো, বানেগা, মার্কাদো, ওতামেন্দি ও অ্যাকুনিয়া টুর্নামেন্টে ইতিমধ্যে একটি করে হলুদ কার্ড দেখে ফেলেছেন। আর একটি হলুদ কার্ড দেখলেই বসে থাকতে হবে কোয়ার্টার ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে। তাই মাঠে নামার আগে খেলার কৌশল নিয়েও বেশ ভাবতে হচ্ছে মেসিদের।
[caption id="attachment_590932" align="alignleft" width="806"] নিজ নিজ দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলতে মাঠে বেশ ঘাম ঝরাবেন দু’দলই। তবে নজর থাকবে মেসি ও গ্রিজম্যানের দিকে। ছবি: ইন্টারনেট[/caption]
এবারের আসরের শুরু থেকে একটি ম্যাচ ছাড়া বাকি দুটি ম্যাচে চেনা আর্জেন্টিনাকে দেখা যায়নি। শুরুতেই দুর্বল আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে ড্র। এরপর ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে লজ্জাজনক হারে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কা জাগে। তবে প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে ২-১ গোলে জয় নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করে। দলের মধ্যে বোঝাপড়ায় কিছু ঘাটতি ছিল যা নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে কাটিয়ে উঠতে পেরেছে মেসিরা। তবে এর জন্য একাদশে বেশ পরিবর্তন আনতে হয়েছে।
অন্যদিকে টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই বেশ চনমনে দল ফ্রান্স। গ্রিজম্যান, পল পগবা, ওসমান ডেম্বেলে, কাইলান এমবাপের মতো তারকাদের নিয়ে গড়া দলটি দাপট দেখিয়েই শেষ ষোলোতে জায়গা করে নিয়েছে। আক্রমণভাগ ছাড়া দলের রক্ষণভাগও বেশ শক্তিশালী করেছেন কোচ দিদিয়ের দেশম। শিষ্যরাও বেশ অনুগত গুরুর প্রতি। গুরুর আস্থার প্রতিদানও এ পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই দিয়ে যাচ্ছে শিষ্যরা। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে তিনটি গোল প্রতিপক্ষের জালে পাঠিয়ে খেয়েছে মাত্র একটি। দুইটি জয় পেলেও ডেনমার্কের বিরুদ্ধে ড্র নিয়ে মাঠে ছাড়তে হয়েছিল যা তাদের ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
শক্তির বিচারে ফ্রান্স এগিয়ে থাকলেও ইতিহাস কথা বলছে আর্জেন্টিনার হয়ে। কেননা দু’দল মোট ১১ বার মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে আর্জেন্টিনা ৬ বার জয় পেলেও ২ টি ম্যাচে জিততে পেরেছে ফ্রান্স। ড্র’তে শেষ হয়েছে বাকি ৩টি ম্যাচ। বিশ্বকাপ পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে ফ্রান্সের অবস্থা আরো করুণ। বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে দুইবার আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়ে দুইবারই পরাজয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ফরাসিরা।
তবে সব পরিসংখ্যান ও শক্তির বিচার বাদ দিয়ে লড়াই হবে মাঠে। দু’দলের বিদায় ঘণ্টা বাজাতে চাইবে দু’দলই। মাঠের লড়াইয়ের ফলাফলই বলবে কে টিকবে আর কে বিমান ধরবে।