মতিনুজ্জামান মিটু : দেশের আম উৎপাদনকারি প্রতি জেলায় অন্তত একটি করে ইথিলিন বা ইথোফেন চেম্বার গড়ে তোলার পরামর্শ নিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট(বারি) এর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত¡ গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আম পাকানোর জন্য ইথোফেন বা ইথিলিনসহ রসায়নিক ব্যবহারের ব্যাপকতায় দেশ জুড়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এতে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে সরকার আমে সব ধরণের রাসায়নিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়। শুরু হয় অভিযান। বিভিন্ন বাজারের অভিযানে নষ্ট করা হয় আম ও কলা। সৃষ্টি হয় আমের বাজারে অস্থিরতা। আম উৎপাদনকারি বা চাষিদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে হতাসা।
আম বা কলা পাকানোর জন্য অতিমাত্রায় ইথিলিন বা ইথোফেনসহ অন্যান্য রাসায়নিকের ব্যবহারে ফলের স্বাদ ও মিষ্টতা নষ্ট হয়ে থাকে। এই ফল কিনে মানুষ প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি শারিরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তবে আম ও কলাসহ অন্যান্য ফল পাকানোর জন্য অনুমোদিত বা সহনশীল মাত্রায় ইথিলিন বা ইথোফেন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ঢালাও বা খোলামেলা ব্যবস্থা থাকলে হবেনা। এজন্য একটি সমন্বিত পদ্ধতি গড়ে তোলা যেতে পারে। দেশে ২২ থেকে ২৩ টি জেলায় বনিজ্যিকভাবে আম উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব জেলায় জরুরী ভিত্তিতে অন্তত একটি করে ইথিলিন বা ইথোফেন চেম্বার গড়ে তোলা দরকার। এসব চেম্বারে চাষিদের আম আনার ব্যবস্থা করে তাতে পরিমিত মাত্রায় ইথিলিন বা ইথোফেন স্প্রে করে দেয়া যেতে পারে। এতে ভোক্তা ও আম চাষি উভয়েরই কল্যাণ হবে। দেশে বাড়বে আমের উৎপাদন।
চুয়াডাঙ্গার আম চাষি আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশে উৎপাদিত আম বাজারজাতকরণ নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে এক অনভিপ্রেত পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে না জেনে না বুঝে নানা ধরনের কথা বলা হয়েছে। পরিচালনা করা হচ্ছে অভিযান। আর বেশিরভাগ অভিযানই হচ্ছে আম ও কলাসহ দেশে উৎপাদিত ফলের ওপর। সারা বিশ্বে ফল পাকানোর জন্য সহনশীল মাত্রায় রাসায়নিকের ব্যবহার হয়ে থাকে। এখানে ফলে রাসায়নিকের পরিমাণ নির্ণয়ের ঠিক গুণমান সম্পন্ন মেশিনও নেই। এনিয়ে মামলা মোকদ্দমাও হয়েছে। দেশে আমসহ ফল উৎপাদনের স্বার্থে এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আচমকা মনগড়া ধারণা দিয়ে দেশের আমচাষকে রক্ষা করা যাবেনা।
এদিকে আজ সাতক্ষিরা, খুলনা ও খাগড়াছড়িতে গাছ থেকে লক্ষণভোগ, ল্যাংড়া, মোম্বাই ও বারি আম পাড়া শুরু হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি তথ্য সার্ভিসের জাতভিত্তিক আম পরিপক্কতার সম্ভাব্য সময়কালের হিসেবে এদিন আমপাড়া শুরু হচ্ছে। আবহাওয়া ও জমির ধরণের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে পাকার উপযোগি বা বতি হয়। এই হিসেবে লক্ষণভোগ, ল্যাংড়া, মোম্বাই ও বারি আম গাছ থেকে পাড়া হবে যশোর, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ায় আগামী ৩জুন। পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ ও রাজশাহীতে ৭জুন। চাপাইনবাগঞ্জ, নওগাঁ(পোরেশা সাপাহার) জেলায় এবং রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ ও পঞ্চগড়ে লক্ষণভোগ, ল্যাংড়া, মোম্বাই ও বারি আম গাছ থেকে পাড়া হবে।