শিরোনাম
◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোট পড়েছে ৬০.৭ শতাংশ ◈ তীব্র তাপদাহে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত গণবিরোধী: বিএনপি ◈ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় কাজ করবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী ◈ বিএনপি দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে: ওবায়দুল কাদের ◈ উপজেলা নির্বাচনে হার্ডলাইনে বিএনপি, ৭৩ নেতা বহিষ্কার ◈ যুদ্ধ বন্ধের শর্তেই ইসরায়েলি জিম্মিদের ছাড়বে হামাস ◈ হরলিক্স আর স্বাস্থ্যকর পানীয় নয়  ◈ বাংলাদেশে চিকিৎসা সুবিধায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী ◈ যে কোনো ভিসাধারী পবিত্র ওমরাহ পালন করতে পারবেন 

প্রকাশিত : ০১ মে, ২০১৮, ০৭:৪৮ সকাল
আপডেট : ০১ মে, ২০১৮, ০৭:৪৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শ্রমিকের প্রয়োজন কত, পান কত টাকা?

ডেস্ক রিপোর্ট : একজন শ্রমিক সারামাস কাজ করে যে বেতন পান, তা দিয়ে তার প্রয়োজনের ৪৭ শতাংশের বেশি মেটানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সংস্থাটির গষেণায় বলা হয়েছে, একজন শ্রমিক একা নন। শ্রমিক বিবাহিত হলে তার স্ত্রী ও ২ সন্তান অথবা শ্রমিক অবিবাহিত হলে তার বাবা মা এবং একজন ভাই ও একজন বোন রয়েছে তার সংসারে। হিসাবটা এভাবেই করতে হবে। এই শহরে বসবাসের জন্য তার প্রকৃত চাহিদা মেটাতে বেতন হিসেবে যা পান, প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্তই কম।

অন্যদিকে শ্রমিকরা বলছেন, বর্তমান বাজারে বাসা বলতে যা বোঝায় তা নয়, রাতে থাকার জন্য একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ৪ থেকে ৫ জনের একটি সংসারের প্রকৃত চাহিদা মিটিয়ে ন্যূনতম চিকিৎসা এ শিক্ষা ব্যয় মেটাতে প্রয়োজন কমপক্ষে ১৬ হাজার টাকা। অথচ একজন শ্রমিকের মাসিক বেতন ওভারটাইমসহ পুরো মাসের আয় ১০ হাজার টাকার বেশি নয়। এই টাকা দিয়েই চলতে হয় একজন শ্রমিকককে।

দেশের অর্থনীতিবদরা বলছেন, একজন শ্রমিক সারা মাসের বেতন বাবদ যা পান, তা দিয়ে তার জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব নয়। বর্তমান বাজারে একজন শ্রমিকের পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে তার সারা মাসে প্রয়োজন হয় ১৪ থেকে ১৮ হাজার টাকা। অথচ দেশের অধিকাংশ শ্রমিকই এ টাকা আয় করতে পারেন না। তাদের প্রয়োজনের ৫০ শতাংশই মেটানো সম্ভব হয়ে ওঠে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, ‘একজন শ্রমিক এই শহরে একা থাকেন না। তিনি বিবাহিত হলে তার স্ত্রী ও ২ সন্তান থাকার কথা। আর অবিবাহিত হলে তার বাবা-মা এবং একজন ভাই বা বোন থাকার কথা।

এই শহরে বসবাসের জন্য তার প্রকৃত চাহিদা মেটাতে বেতন হিসাবে যা পান, প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্তই অর্ধেকের কম।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, একজন শ্রমিকের সারা মাসের বেতন দিয়ে তার প্রয়োজনের ৪৭ শতাংশ মেটে।’
এ প্রসঙ্গ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, ‘শ্রমিকরা যা আয় করে, তা দিয়ে তাদের সারা মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। হয়তো তারা মাস কভার করে। তবে তা হয় অমানবিক।

জানতে চাইলে শ্রমিক নেতা আমিরুল ইসলাম আমিন বলেছেন, ‘শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। বেতনভাতাসহ যা পান তা দিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব। এর ওপর শ্রমিকের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ তো রয়েছেই। তাই আমরা একজন শ্রমিকের জন্য সর্বনিম্ন বেতন চেয়েছি কমপক্ষে ১৬ হাজার টাকা।’

এমন পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও এ বছর পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। এ বছরের মে দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—‘শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই, সোনার বাংলা গড়তে চাই’।
দিবসটি পালন উপলক্ষে মঙ্গলবার (০১ মে) বিকাল ৪টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে শ্রমিক দিবসের মূল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সভাপতিত্ব করবেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক। আলোচনা সভায় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থার (আইএলও) বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিসের অফিসার ইনচার্জ গগন রাজভাণ্ডারি, শ্রমিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ ও মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খান উপস্থিত থাকবেন।এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অক্ষম বা মৃত এমন ১০ জন শ্রমিকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ ছাড়া সকাল ৭টায় রাজধানীর মতিঝিলের শ্রম ভবনের সামনে থেকে র‌্যালি বের হয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হবে। ৩ মে সকাল ও বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে দু’টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এ দু’টি সেমিনারে প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক, সচিব আফরোজা খান, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক ও শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে দেশের তৈরি পোশাক (গার্মেন্টস), গ্লাস অ্যান্ড সিলিকেট, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ, বেকারি বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশনারি, অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্ড এনামেল এবং সিকিউরিটি সার্ভিস—এই ছয় শিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা সর্বনিম্ন বেতন দাবি করছেন ১৬ হাজার টাকা। তবে গার্মেন্টস কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সর্বনিম্ন বেতনের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকার ওপরে উঠতে চায় না। এ ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার গঠিত সর্বনিম্ন মজুরি বোর্ড।

কারখানার মালিক প্রতিনিধি তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, এ নিয়ে তাড়াহুড়ার কিছু নেই। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় আছে। এর মধ্যেই সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করা যাবে।
জানা গেছে, শ্রমিকরা তাদের সর্বনিম্ন বেতন ১৬ হাজার টাকা দাবি করছেন। সঙ্গে অন্যান্য সুবিধা। শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা ও তা বাস্তবায়ন করতে চায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই।

ইতোমধ্যেই সব শিল্পের শ্রমিক নেতারা একত্রিত হয়ে সর্বনিম্ন বেতন কত হবে এবং কী কী সুযোগ-সুবিধা চাওয়া হবে, তা মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছেন। ঠিক করে এর একটি প্রস্তাবও তারা মজুরি বোর্ডের কাছে পেশ করেছেন বলে জানা গেছে।

এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক সংগঠন উল্লেখযোগ্য। একাধিক সংগঠনের একটি জোট একটি স্মারকলিপি দিয়েছে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর। স্মারকলিপিতে তারা তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য মূল বেতন ১০ হাজার টাকাসহ মোট ১৬ হাজার টাকা দাবি করেছে। এর মধ্যে ন্যূনতম মজুরি হবে ১০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, স্থায়ীভাবে রেশনিং ব্যবস্থা চালু, ভেরিয়েবল ডিএ, কন্ট্রিবিউটর প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশের পোশাক শিল্পের মজুরি কাঠামো সর্বশেষ পর্যালোচনা হয় ২০১৩ সালে। সেই বছর ন্যূনতম মজুরি হার নির্ধারণ হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকা। ওই বছরের ডিসেম্বরে নতুন মজুরি কাঠামোর ঘোষণা দেওয়া হয়। শ্রম আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছর পরপর মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করতে হবে বলে আইনে বলা হয়েছে। যা ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান (অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ) সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘যে সব দাবি আসবে তা একত্রিত করে পর্যালোচনা করা হবে। সব কিছু বিচার বিবেচনা করেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি হবে।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি পোশাক খাতের মজুরি পর্যালোচনায় নিম্নতম মজুরি বোর্ড ঘোষণা করা হয়। বোর্ড গঠনের তিন মাস পর গত ১৯ মার্চ ওই বোর্ডের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের বিষয়ে বিদ্যমান শ্রম আইন ও বিধিতে যে সমস্ত বিধান আছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে মাত্র। একইসঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য কী কী সুযোগ-সুবিধা ও অসুবিধা তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে সরকারের হাতে কিছু নেই। মজুরি বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী সর্বনিম্ন বেতন কাঠামো ঠিক করা হবে।’ সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়