আবু সুফিয়ান রতন : ‘এই মন তোমাকে দিলাম’- গানটি শুনলেই মনের পর্দায় ভেসে উঠে চিত্র নায়িকা রোজিনার মুখ। ঢাকাই ছবির সোনালী দিনের নায়িকা তিনি। স্বাধীনতার পর যে কয়জন অভিনেত্রী এ বাংলার চলচ্চিত্রিকে রঙিন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম রাজবাড়ির এই মেয়ে। অভিনয় দিয়ে মাতিয়েছেন দর্শক। উপহার দিয়েছেন বহু সুপারহিট সিনেমা।
গেল ২০ এপ্রিল ছিলো রোজিনার জন্মদিন। একটা সময় জন্মদিন পালন করতেন অনেক আয়োজন করে। আজকাল নীরবে-নিভৃতেই পার করেন জীবনের বিশেষ এই দিনটি। তবে এবারে কাছের মানুষদের নিয়ে আয়োজন করেছেন এক ঘরোয়া আড্ডার।
রোববার সন্ধ্যা থেকে রোজিনার নিজ বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন। প্রিয় নায়িকাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হয়েছেন রোজিনার সিনেমার নায়ক -নায়িকারা। এতে উপস্থিত ছিলেন ফারুক, সোলেহ রানা, জাবেদ, উজ্জল, ইলিয়াস কাঞ্চন, নতূন, অঞ্জনা, অরুণা বিশ্বাস, দিলারাসহ আরও অনেকে। এছাড়াও নতুন প্রজন্মের তারকারা উপস্থিত ছিলেন রোজিনার আমন্ত্রণে। নতুন প্রজম্মের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জায়েদ খান, রিয়াজ,বাপ্পরাজ, স¤্রাট, আমিন খান, সায়মন সাদ্দিক, ইমন, মিশা সওদাগর, নিপুণসহ আরও অনেকেই। এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মিডিয়ার অনেক সাংবাদিক।
রোজিনা বলেন, ‘নানা কারণেই জন্মদিন নিয়ে এখন আর কোনো আয়োজন করি না। অনেকটা সময় চলচ্চিত্র থেকে দূরেও ছিলাম। তবে গেল বছর থেকে আবারও চলচ্চিত্রে আনাগোনা বেড়েছে। চলচ্চিত্রের নানা প্রজন্মের মানুষদের সঙ্গে সম্পর্কটা গাঢ় হয়েছে। ভাবলাম সবাইকে নিয়ে একটু বসি, গল্প করি। সেই ভাবনা থেকেই এই আয়োজন। জন্মদিনটা উপলক্ষ মাত্র।’
জন্মদিনে ভক্ত-দর্শকের কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি। আমৃত্যু চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে এর সঙ্গেই নিজেকে জড়িত রাখতে চান। অবদান রাখতে চান, মন্দার এই চলচ্চিত্র বাজারের সংকট কাটানোর পদক্ষেপে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৬ সালে ‘জানোয়ার’ সিনেমাতে সহনায়িকা হিসেবে অভিনয়ের সুযোগ পান। পরে তিনি এফ, কবীর পরিচালিত ‘রাজমহল’ সিনেমার মাধ্যমে একক নায়িকা হিসেবে অভিষিক্ত হন। এই ছবিটি সফল হলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রোজিনাকে।
সুঅভিনয় ও গ্ল্যামার দিয়ে তিনি প্রথম শ্রেণির নায়িকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অভিনয় করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক, ফারুক, আলমগীর, সোহেল রানাসহ সমসাময়িক প্রায় সব জনপ্রিয় নায়কদের বিপরীতে। ১৯৮০ সালে রোজিনা ‘কসাই’ ছবির জন্য জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি ‘জীবন ধারা’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে।
অশ্লীলতার সময়টাতে চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে যান অনেক তারকাই। রোজিনাও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। একটা সময় তাকে কলকাতার চলচ্চিত্রেও কাজ করতে দেখা গেছে। তারপর স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকেন লন্ডনে। সর্বশেষ শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে উপলক্ষ করে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং নির্বাচনে প্রার্থি হন। তিনি বিজয়ও লাভ করেন কার্য নির্বাহি পরিষদের সদস্য পদে।