শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল, ২০১৮, ১০:৪৫ দুপুর
আপডেট : ২৯ এপ্রিল, ২০১৮, ১০:৪৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এত গাছ পড়ছে কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক : বেশ কয়েকটি গাছ সার বেঁধে ভেঙে পড়েছে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে। গোড়াসহ উপড়ে গেছে আরও কয়েকটি গাছ। ঘটনা গত ২১ এপ্রিল, শুক্রবারের। রাজধানীর ওপর দিয়ে কালবৈশাখী বয়ে গিয়েছিল সেদিন সন্ধ্যায়। দু'দিন পর গত ২৩ এপ্রিল, রোববার আরও একটি কালবৈশাখীতে পুরো লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন চন্দ্রিমা উদ্যান। এ ছাড়া রোকেয়া সরণি, ধানমণ্ডি সাতমসজিদ রোড, ধানমণ্ডি লেক, মানিক মিয়া এভিনিউ, বিমানবন্দর সড়কসহ রাজধানীর অনেক এলাকায় এমন অবস্থা হয় কয়েকশ' গাছের। ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশন সেসব গাছের অনেকটাই অপসারণ করেছে ইতিমধ্যে। তার পরও রয়ে গেছে সেই তাণ্ডবের চিহ্ন। চন্দ্রিমা উদ্যানে গতকালও পাতাহীন কঙ্কালসদৃশ গাছগুলো পড়ে থাকতে দেখা গেছে উদ্যানজুড়ে। কিন্তু ঝড় এলেই ঢাকায় এত গাছ পড়ছে কেন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবরি সেন্টারের পরিচালক মিহির লাল সাহা বলেন, 'অত্যধিক ঝড় হলে গাছপালা ভেঙে পড়াটা স্বাভাবিক। গত ২৩ এপ্রিল রাজধানীর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৮৩ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যায়। তাতে যে সংখ্যক গাছের ডাল ভেঙেছে ও উপড়ে পড়েছে, সেটা অস্বাভাবিক। ভেঙে পড়া গাছগুলোর কাণ্ড শক্ত নয়। আর রাজধানীতে কংক্রিটের দৌরাত্ম্যের কারণে উপড়ে পড়া গাছগুলোর শিকড় গভীরে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়নি। কিছু গাছের গোড়ার শিকড় একটি নির্দিষ্ট সময় পর পচে যায়; পোকাও ধরে। আবার গাছগুলো লাগানোর সময় প্রয়োজনীয় দূরত্ব রাখা হয় না। ফলে গাছগুলো ডালপালা ছড়াতে না পেরে লম্বাটে হয়ে যায়। এসব গাছ ঝড়ে সহজেই ভেঙে যেতে পারে। সেদিনের ঝড়েও সেটাই হয়েছে।'

পূর্ত বিভাগের আরবরি কালচার বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী খায়রুল আলম জানান, চন্দ্রিমা উদ্যানে গগনশিরিষ, ইউক্যালিপ্টাস, এলবেজিয়া, আকাশমনি ও বোতল ব্রাশ জাতীয় গাছ বেশি। এর মধ্যে ইউক্যালিপ্টাস গাছের বয়স ২০ বছর হলেই শিকড় পচতে শুরু করে। এ গাছের গোড়ায় পোকাও ধরে। এগুলোর শিকড় পাম জাতীয় গাছের মতো, গভীরে প্রবেশ করে না। ফলে স্বাভাবিক ঝড়েই সেগুলো উপড়ে পড়তে পারে। এগুলোর কাণ্ড খুব নরম হওয়ায় সহজে ভেঙেও যেতে পারে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সর্বশেষ কালবৈশাখীতে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যান ছাড়াও সড়ক বিভাজক ও ফুটপাতের প্রচুর গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেসব গাছ উপড়ে পড়েনি সেগুলো কঙ্কালসার হয়ে গেছে ডাল ভেঙে। কিছু স্থানে সড়ক বিভাগের গাছ গোড়াসমেত উপড়ে পড়ে যায় রাস্তায়।  সমকাল

বৃক্ষ নিয়ে গবেষণা করেন এমন কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফুটপাতে থাকা গাছগুলোর শিকড় গভীরে প্রবেশ করতে পারেনি। আর সড়ক বিভাজকগুলো এত অপ্রশস্ত যে, সেখানে পর্যাপ্ত মাটির অভাব। এত কম মাটিতে শিকড়গুলো গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। গভীরেও থাকে ইটপাটকেল। এসব গাছ সহজেই উপড়ে যেতে পারে।

অধ্যাপক মিহির লাল সাহা জানান, ঢাকা শহরের সড়ক বিভাজকগুলোর প্রশস্ততা খুব কম। ফলে সেখানকার গাছগুলো সহজেই ঝড়ে উপড়ে যায়। এসব জায়গায় কামিনীকাঞ্চন, কৃষ্ণচূড়া, বাগানবিলাস, নিমগাছ রোপণ করাই ভালো।

কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় সড়ক বিভাজকে বট, অশ্বত্থের মতো গাছও লাগানো হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে রোপণ করা এসব গাছ নগরবাসীর জন্য তৈরি করছে বিপদ।

খায়রুল আলম বলেন, সড়ক বিভাজকে বোতল পাম, রয়েল পাম, বকুল, সোনালু, নিমজাতীয় গাছও রোপণ করা যেতে পারে। এসব গাছের মাঝে নান্দনিক গুল্ম জাতীয় ফুলগাছ লাগানো যায়। নিচে মাটি দিয়ে শিকড়ের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটানো গেলে গাছগুলো উপড়ে পড়বে না।

বৃক্ষপ্রেমী ও লেখক মোকারম হোসেন বলেন, 'ঢাকায় গাছ লাগানোর জন্য যেসব নিয়ম অনুসরণ করা প্রয়োজন, তা করা হয় না। যেমন উঁচু ও লম্বা হয়, কাণ্ড নরম, বেশি বয়স বাঁচবে না- এ ধরনের গাছ সড়ক বিভাজকে লাগানো ঠিক নয়। অথচ ঢাকা শহরে সব ধরনের গাছই সড়ক বিভাজকে লাগানো হয়। এমনকি বটগাছও।'

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরতউল্লাহ বলেন, 'সিটি করপোরেশনের অর্গানোগ্রামে উদ্ভিদবিদের কোনো পদ নেই। উদ্ভিদবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা কোনো লোকও নেই। এ জন্য তারা রাস্তার মিডিয়ান করার সময় প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে গাছ লাগানোর কাজ করান। ১৯৮৯ সালের অর্গানোগ্রামের ৪৩ শতাংশ জনবল দিয়ে বর্তমানে সিটি করপোরেশন চলছে। অর্গানোগ্রামের ৫৭ শতাংশ জনবলই যেখানে নেই, সেখানে আরবরি কালচার বিষয়ের দেখভাল তো অনেক পরে।'

সংশ্নিষ্টরা জানান, সড়ক বিভাজকে গাছ লাগাতে গেলে বিভাজকের প্রশস্ততা অন্তত তিন ফুট রাখা প্রয়োজন। নিচে উপযোগী মাটি রাখতে হবে। এসব অনুসরণ করা হয়নি। উপরন্তু অনেক সময় চারপাশে বাঁধাই করে গাছের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করা হয়। পাশাপাশি যানবাহনের চাপে মাটিগুলো শিকড়ের সঙ্গে জমাট বেঁধে আঁকড়ে থাকতে পারে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়