ডেস্ক রিপোর্ট : মেয়াদ পেরিয়ে ‘চলন্ত বোমায়’ পরিণত হওয়া কয়েক হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা ধ্বংস করে সেগুলোর জায়গায় নতুন অটোরিকশা নামানোর কাজ চলছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে।
পহেলা এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএর ঢাকার ইকুরিয়া কার্যালয়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে পুরোনো অটোরিকশা। আর চট্টগ্রামের বালুচরায় বিআরটিএর কার্যালয়ে এ কাজ শুরু হয়েছে ১২ এপ্রিল থেকে।
অটোরিকশাগুলো ভেঙে ফেলার পর প্রতিটি অটোরিকশার মালিকদের নতুন অটোরিকশা নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক মো. মাসুদ আলম।
ঢাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ ফোরস্ট্রোক থ্রি-হুইলার স্ক্র্যাপকরণ কমিটির আহ্বায়ক মাসুদ শুক্রবার বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের’ মধ্যে এসব কাজ করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অটোরিকশা প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া শেষ করতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর থেকে ১৫ বছরের পুরোনো ১৩ হাজার অটোরিকশা তুলে দিতে গত ১৫ মার্চ বিআরটিএকে চিঠি দেয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এতে ঢাকায় আগামী সেপ্টেম্বর এবং চট্টগ্রামে জুলাইয়ের মধ্যে অটোরিকশা প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া শেষ করতে বলা হয়। প্রতিস্থাপন দ্রুত করতে প্রয়োজনে দুই মহানগরে একাধিক স্থানে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ওই চিঠি পাওয়ার পর ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুজন উপ-পরিচালককে প্রধান করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয় বিআরটিএ। এ কমিটির অধীনে পুরোনো অটোরিকশা প্রতিস্থাপন কাজ হচ্ছে।
বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানান, ঢাকায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি অটোরিকশা মালিক তাদের অটোরিকশা প্রতিস্থাপনের জন্য আবেদন করেছেন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৯২০টি অটোরিকশা ধ্বংসের প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। প্রতিদিন ৭০টি করে অটোরিকশা ধ্বংস করা হচ্ছে
তবে গাড়ির চ্যাসিস, ইঞ্জিন নম্বর ঠিকমতো বোঝা না যাওয়ায় কিছু অটোরিকশা ধ্বংস করা হয়নি। বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়ার পর সেগুলো ধ্বংস করা হবে।
পুরনোগুলো ধ্বংসের পাশাপাশি নতুন অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়াও চলছে একইসঙ্গে। ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত মিরপুর কার্যালয় থেকে ১৫০টি এবং ইকুরিয়া কার্যালয় থেকে ৬৩টি নতুন অটোরিকশা নিবন্ধন করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৫৫৪টি অটোরিকশা ধ্বংস এবং নতুন ১৫টি অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে বলে বিআরটিএর চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক মো. শহীদুল্লাহ কায়সার জানিয়েছেন।
বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানান, প্রতিস্থাপনের জন্য মালিকদের আবেদনের পর অটোরিকশার নম্বর অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। মালিকরা তাদের অটোরিকশা নিয়ে বিআরটিএ কার্যালয়ে হাজির হন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের অটোরিকশা ধ্বংস করা হয়।
বৃহস্পতিবার ইকুরিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, বিআরটিএ প্রাঙ্গণে সারিবদ্ধ অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। বিআরটিএর কর্মকর্তারা অটোরিকশার চ্যাসিস নম্বর, ইঞ্জিন নম্বর পরীক্ষা করে দেখছেন।
পরীক্ষার পর অটোরিকশার সিলিন্ডার খুলে রাখা হচ্ছে। পরে ইঞ্জিন নম্বর, চ্যাসিস নম্বর এবং অটোরিকশার নম্বরপ্লেট গ্যাস কাটার দিয়ে মুছে দেওয়া হচ্ছে।
পরে সেটিকে পাঠানো হচ্ছে এক্সকেভেটরে। এক্সকেভেটর দিয়ে অটোরিকশাগুলো দুমড়ে, মুচড়ে দেওয়া হচ্ছে।
অটোরিকশার ধ্বংসাবশেষ মালিকরা নিয়ে যাচ্ছেন। এর লোহাগুলো কেজি হিসেবে বিক্রি করবেন তারা।
অটোরিকশার সিলিন্ডার রেখে দেওয়া হচ্ছে বিআরটিএতে। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সহায়তায় এসব সিলিন্ডার পরবর্তীতে ধ্বংস করা হবে বলে জানান সংস্থাটির সহকারী পরিচালক শামসুল কবির।
সহকারী পরিচালক শামসুল কবির বলেন, নতুন অটোরিকশার নিবন্ধন পেলেও সেগুলো রাস্তায় নামাতে তার খরচ হয়ে যাবে প্রায় ১০ লাখ টাকা।
“দুইটা নতুন গাড়ি কিনা আছে। নম্বর লাগাইয়া নতুনগুলো চালু করুম। তয় এগুলা নতুন কইরা চালু করা দশ লাখ টাকার মামলা। বডিতে লাগব ৮ লাখ। রেজিস্ট্রেশন, গাড়ির ডেকোরেশন মিলাইয়া আরও দুই লাখ টাকা লাগব।”
তাদের কাছে সব অটোরিকশা মালিকের পূর্ণ তথ্যসহ তালিকা রয়েছে জানিয়ে বিআরটিএর ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক মো. মাসুদ আলম বলেন, “একটা অটোরিকশা স্ক্র্যাপ করার পর মালিকদের আর কোনো কাগজ দেওয়া হচ্ছে না।
আগের কাগজপত্র নিয়ে আমাদের কাছে আসলেই নতুন করে নিবন্ধন পাচ্ছেন।”
প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া শেষে ইতোমধ্যে প্রায় আড়াইশর মতো অটোরিকশা রাস্তায় চলাচল শুরু করেছে বলে জানান তিনি।
অটোরিকশা প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া শুরুর পর ঢাকার মগবাজার এলাকার অটোরিকশা বিক্রয়কেন্দ্র ও মেরামত কারখানায় ভিড় বেড়েছে।
ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মেরামত কারখানার কর্মীরা। সেখানে নতুন অটোরিকশার হুড, বাম্পার, লাইট কেসিংসহ ডেকোরেশনের কাজ চলছে পুরোদমে।
মগবাজারের ‘রুনা অটো সেন্টার’র মালিক বজলুর রহমান বলেন, “মালিকরা নতুন অটোরিকশা কিনছেন। কিনার পর তাতে হুড-বাম্পার লাগানোর জন্য এখানে আসছেন। আমাদের ব্যস্ততা বাড়ছে।”
নতুন অটোরিকশাগুলো পুরাতনগুলোর চেয়ে শক্তিশালী জানিয়ে তিনি বলেন, “আগেরগুলো ছিল ১৭০ সিসির ইঞ্জিন, এগুলো ২০৫ সিসির।”
ঢাকায় ১৩ হাজার ৬৫২টি এবং চট্টগ্রামের ১৩ হাজার মিলিয়ে ২৬ হাজার ৬৫২টি অটোরিকশা চলাচল করছে। এর মধ্যে ঢাকায় ২০০২ সালে পাঁচ হাজার ৫৬১টি এবং চট্টগ্রামে সাত হাজার ৪৫৯টির নিবন্ধন দেওয়া হয়। এই ১৩ হাজার ২০টি অটোরিকশার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। বাকীগুলোর মেয়াদ শেষ হবে এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর।
১৫ বছর পূর্ণ হওয়া অটোরিকশার মেয়াদ আরও বাড়াতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন মালিকরা। তবে এসব অটোরিকশার গ্যাস সিলিন্ডার ‘চলন্ত বোমায়’ পরিণত হয়েছে অভিযোগ করে সেগুলো প্রতিস্থাপনের দাবি জানান চালকরা।
দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে অটোরিকশাগুলোর মেয়াদ বাড়ানো যায় কি না তা জানতে গত বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে চিঠি দেয় বিআরটিএ।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বুয়েট কর্তৃপক্ষ গত ৬ মার্চ বিআরটিএকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়, এসব অটোরিকশার মেয়াদ আর বাড়ানো যাবে না। সুত্র : বিডি নিউজ