মতিনুজ্জামান মিটু : আটটি বিভাগীয় শহরের সবগুলিতেই শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করেছে এবং বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ উভয় কানে শোনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ এর পক্ষে উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ এর দেয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, আকস্মিক তীব্র শব্দে মানুষ আংশিক বা সম্পূর্ণ বধির হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘদিন মাত্রাতিরিক্ত শব্দের মধ্যে অবস্থান করলে কানে শোনার ক্ষমতা লোপ পায়, যা আর ফিরে পাওয়া যায় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে বিশ্বের ৫ ভাগ মানুষ শ্রবণজনিত সমস্যার কারণে তাদের নিত্য জীবনে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং বাংলাদেশে ১১.৭ ভাগ মানুষ উভয় কানে শোনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
এই হিসেবে দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে এক কোটি ৮৭ লাখ ২০ হাজার মানুষ দুই কানে শোনার ক্ষমতা হারিয়েছে। এছাড়া শব্দদূষণের কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদস্পন্দনে পরিবর্তন, হৃৎপি- ও মস্তিস্কে অক্সিজেন কমে যেতে পারে। এজন্য শ্বাসকষ্ট, মাথাঘোরা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, দিক ভুলে যাওয়া, দেহের নিয়ন্ত্রণ হারানো, মানসিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা তৈরি করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একজন মানুষের প্রতিদিন বিভিন্ন মাত্রার শব্দের মধ্যে অবস্থানের মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে। একজন মানুষ যথাক্রমে ৯০ ডিবি শব্দের মধ্যে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট, ১০০ ডিবি শব্দের মধ্যে ১৫ মিনিট, ১১০ ডিবি শব্দের মধ্যে ৩০ সেকেন্ড, ১২০ডিবি শব্দের মধ্যে ৯ সেকেন্ড এবং ১৩০ ডিবি শব্দের মধ্যে ০১ সেকেন্ডের কম সময় অবস্থান করতে পারেন। যেখানে সর্বোচ্চ ৭৫ ডিবি শব্দকে সহনীয় হিসেবে ধরা হয়। শব্দ দূষণের ক্ষতির হাত থেকে জনসাধারণকে সুরক্ষা দিতে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ এ এলাকাভেদে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে রাত ও দিন ভেদে সর্বনিম্ন ৪০ ডিবি এবং সর্বোচ্চ ৭৫ ডিবি শব্দ অনুমোদিত রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে শব্দের মানমাত্রা পরিমাপ বিষয়ক একটি জরিপ করেছে। এতে দেখা গেছে সবগুলি স্থানেই শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করেছে। আকস্মিক শব্দের মাত্রার মধ্যে ঢাকায় সর্বোচ্চ ১৩২ ডিবি ও সর্বনি¤œ ৫১ডিবি, চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ১৩৩ ডিবি ও সর্বনি¤œ ৪৭ ডিবি, সিলেটে সর্বোচ্চ ১৩১ ডিবি ও সর্বনি¤œ ৫০ ডিবি, খুলনায় সর্বোচ্চ ১৩২ ডিবি ও সর্বনি¤œ ৪২ ডিবি, বরিশালে সর্বোচ্চ ১৩১ ডিবি ও সর্বনি¤œ ৫৪ ডিবি, রংপুরে সর্বোচ্চ ১৩০ ডিবি ও সর্বনি¤œ ৪৬ ডিবি, রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ১৩৩ ডিবি ও সর্বনি¤œ ৫৬ ডিবি, এবং ময়মনসিংহে সর্বোচ্চ ১৩১ ডিবি ও সর্বনি¤œ ৪৭ ডিবি রেকর্ড করা হয়। এ জরিপে যানবাহন এবং এর হর্ন শব্দের প্রধান উৎস হিসেবে উঠে এসেছে। হর্ন গণনায় লক্ষ্য করা যায়, অনেক স্থানেই মাত্র ১০ মিনিটে ৫০০ থেকে ১০০০ হাজার বারের মতো হর্ন বাজানো হয়। এছাড়া সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, নির্মাণ কাজ এবং কল-কারখানা থেকেও শব্দ দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে।
শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুসারে, নীরব এলাকা অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, উপাসনালয় রয়েছে এমন এলাকায় চলাচলকালে যানবাহনে কোন প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না। আবাসিক এলাকার শেষ সীমানা হতে ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে ইট বা পাথর ভাঙ্গার মেশিন ব্যবহার করা যাবে না এবং সন্ধ্যা ৭ (সাত) টা থেকে সকাল ৭ (সাত) টা পর্যন্ত মিকচার মেশিনসহ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য যন্ত্র বা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাবে না। কোন ধরনের অনুষ্ঠানে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী কোন যন্ত্রপাতি দৈনিক ০৫ (পাঁচ) ঘণ্টার বেশি সময়ব্যাপী ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা যাবে না এবং অনুমোদনের সময়সীমা রাত্রি ১০ (দশ) টা অতিক্রম করবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, কাল (২৫ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস। এ বছরের স্লোগান হল: প্রোটেক্ট দিয়ার হিয়ারিং, প্রোটেক্ট দিয়ার হেলথ। । ১৯৯৬ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর এপ্রিল মাসের শেষ বুধবার আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস পালিত হয়। বিগত দুই বছর পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। তবে, বাংলাদেশে এক যুগের বেশী সময় ধরে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।