আসাদুজ্জামান সম্রাট : খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে অর্ধডজন আওয়ামী লীগ নেতার ভবিষ্যত। আগের নির্বাচনের মতো এ নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীতে অসহযোগিতা ও ভেতরে ভেতরে বিরুদ্ধাচারণ করে হারিয়ে দেয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ দু’টি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সরকারের জন্য এসিড টেস্টের মতোই। এ নির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় অবস্থান কেমন হবে। দলের পক্ষে নেতা-কর্মীরা কতোটা ঐক্যবব্ধভাবে কাজ করছেন তারও প্রমাণ মিলবে। এর ব্যতিক্রম ঘটলে দলীয়ভাবেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিগত নির্বাচনে খুলনায় দলীয় প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে দুর্ব্যাবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ করে অনেকেই নির্বাচনী মাঠে সরব ছিলেন না। দায়সাড়া দায়িত্ব পালন করে পেছনে পেছনে সমালোচনা করেছেন এসব নেতারা। দলীয় প্রধানে কাছে এ সম্পর্কিত রিপোর্ট আসার পরবর্তীতে অনেকেই সরকার ও দলীয় পদ-পদবি প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হয়েছেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধাচারণ করলে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেয়াসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
আরো পড়ুন : নারীর ক্ষমতায়নে ভর করে এগোচ্ছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী
বিগত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আজমত উল্লাহর পরাজয়ের পেছনে স্থানীয় দুই তরুণ নেতার ভূমিকাকে দায়ী করা হয়েছিল। ওই নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল সরকার গঠন করলেও তাকে কোনো পদপদবি দেয়া হয়নি। একই ঘটনা ঘটেছে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ক্ষেত্রেও। ওই নির্বাচনে তালুকদার আব্দুল খালেক পরাজিত হলেও স্থানীয় কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ ওঠে। ফলে পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে সরকার গঠনের পরেও মহানগরের কাউকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি।
এবারের নির্বাচনে এই দুই নির্বাচনী এলাকার কোনো সংসদ সদস্য বা নেতা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঠিকমতো কাজ না করলে এবং নির্বাচনের ফলাফল দলের পক্ষে না এলে ওইসব নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। এমনকি আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত করা হতে পারে। গাজীপুর ও খুলনার আসনগুলোতে ইতিমধ্যেই দলীয়ভাবেই বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল দলীয় প্রার্থীর পক্ষে না গেলে ওই আসনের বিকল্প প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে। ইতিমধ্যে খুলনা-২ আসনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে সাবেক ফুটবলার ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আরো পড়ুন : দুই সিটি নির্বাচনে ঝুলে আছে অর্ধডজন আ. লীগ নেতার ভাগ্য!
গাজীপুরে নির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলের ভবিষ্যত। গত নির্বাচনে অনেকেই অভিযোগের তীর তার দিকে তুললেও সে সময়ের সমসাময়িক জাতীয় রাজনীতির কারণে তিনি রক্ষা পেয়েছিলেন। এবার তারই সমর্থিত প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। একইভাবে মনোনয়ন না পেয়েও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলে আজমত উল্লাহকেও পুরস্কৃত করা হবে। তার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহানুভুতি রয়েছে।
আরো পড়ুন : ভারতে কমছেই না গণধর্ষণ
বিষয়টি সম্পর্কে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, আমরা দু’সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই দলের সবচে’ গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছি। দুটি সিটি করপোরেশনেই একাধিক প্রার্থী ছিল। সবার সঙ্গে আলোচনা করে সর্বসম্মত প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। ফলে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী হয়নি। দলীয় নেতাদের মধ্যে যদি কেউ বিরোধিতা করে তাদেরকে বহিস্কারসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, দুটি নির্বাচন দলীয়ভাবে কঠোর মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে। নেতারা কে কী ভূমিকা রাখছেন তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :