রাশিদ রিয়াজ ভারতের দিল্লি ভিত্তিক ‘সোসাইটি ফর পলিসি রিসার্চ এন্ড এমপাওয়ারমেন্ট’ (এসপিআরই) এর এক সিনিয়র সদস্য আরতি বালি সিরিয়ায় মার্কিন হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, এধরনের হামলা পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে দশকের পর দশক অস্থিতিশীল করে তুলবে। ইরানের বার্তা সংস্থা ইরনাকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে আরতি বালি বলেন, সিরিয়াকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ক্রমশঃ যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে এবং সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলা কারা করছে তা তদন্তে মার্কিন ও রাশিয়ার উদ্যোগ পরস্পরের বিরোধিতায় আটকা পড়ে যাচ্ছে। এর ফলে সিরিয়ায় স্থিতিশীল পরিস্থিতির ব্যাপারে এক গভীর অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে এবং ট্রাম্পের সামরিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তা আরো জটিল ও সংকটজনক হয়ে পড়ছে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্য যে শুধু অশান্ত হয়ে উঠবে তা নয় বরং এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়বে এশিয়াতেও।
সিরিয়া প্রশ্নে মার্কিন নীতিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে উল্লেখ করে আরতি বালি বলেন, এধরনের নীতি সিরিয়া সংকটকে অবান্তর করে তুলেছে। এক বছর আগে সিরিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়, এ বছর চলতি মাসেই তিনি ঘোষণা দেন সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা ফিরিয়ে নেবার এবং পুনরায় তিনি দেশটিতে হামলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর এ হামলা করা হল যখন সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা ফিরিয়ে নিতে চাইলেও দামাস্কাসের স্থিতিশীলতায় রাশিয়া ও ইরানের আসাদ সরকারকে সহায়তার প্রেক্ষিতে পেন্টাগনের সেনা কর্মকর্তারা দেশটি থেকে তাদের সেনা ফিরিয় নিতে চায়নি। মার্কিন জেনারেল জোসেপ ভোটেলের কথায় তার প্রমাণ মিলেছে।
আরো পড়ুন : সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আবারও হামলার হুমকি, স্নায়ুযুদ্ধের আশঙ্কায় জাতিসংঘ
সিরিয়া সংকটের জন্যে মার্কিন ও দেশটির মিত্রদের দায়ী করে আরতি বালি বলেন, দেশটিতে সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, বিমান হামলা ও অন্যান্যভাবে সহায়তা করছে। সিরিয়ার ডুমা আসাদ বিদ্রোহীদের দখলে থাকা সত্বেও সেখানে রাসায়নিক হামলার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সিরিয়ায় রাসায়নিক বোমা তৈরির মত কোনো স্থান থাকলে বা এর সঙ্গে আসাদ বিদ্রোহীরা জড়িত আছে কি না কিংবা তারা পশ্চিমা সামরিক হামলার পটভূমি তৈরি করছে কি না তাও খতিয়ে দেখা দরকার। যখন ট্রাম্প তার সৈন্য সিরিয়া থেকে প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন তখন আসাদ কেন রাসায়নিক হামলা চালাবেন সেও এক প্রশ্ন।
এদিকে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরকে তেহরানের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে আরতি বালি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব তার প্রভাব হারাচ্ছে, ইয়েমেনে মার্কিন সহায়তায় আগ্রাসন চালানোর কারণে আন্তর্জাতিক বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি এবং সে কারণেই দেশটি ইরান ও সিরিয়ায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ইরাকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের হাত করতেও চেষ্টা করছে সৌদি আরব। ক্রাউন প্রিন্সের যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, মিসর ও ফ্রান্স সফর প্রতিফলিত হয়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সিরিয়ায় হামলার বিষয়টিতে। অন্যদিকে রাশিয়া, চীন ও ইরান সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্প ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন সৌদি আরব ও ইসরায়েল তার ঘনিষ্ট মিত্র হিসেবে কাজ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি অবিচল রাখতে কৌশলগত স্বার্থেই কাজ করছে তেলআবিব ও রিয়াদ। আর এর লক্ষ্যই হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাবকে খর্ব করা।
আরো পড়ুন : ফিরে দেখা: সিরিয়া যুদ্ধের সাত বছর
আপনার মতামত লিখুন :