শিরোনাম
◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোট পড়েছে ৬০.৭ শতাংশ ◈ তীব্র তাপদাহে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত গণবিরোধী: বিএনপি ◈ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় কাজ করবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী ◈ বিএনপি দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে: ওবায়দুল কাদের ◈ উপজেলা নির্বাচনে হার্ডলাইনে বিএনপি, ৭৩ নেতা বহিষ্কার ◈ যুদ্ধ বন্ধের শর্তেই ইসরায়েলি জিম্মিদের ছাড়বে হামাস ◈ হরলিক্স আর স্বাস্থ্যকর পানীয় নয়  ◈ বাংলাদেশে চিকিৎসা সুবিধায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী ◈ যে কোনো ভিসাধারী পবিত্র ওমরাহ পালন করতে পারবেন 

প্রকাশিত : ২০ মার্চ, ২০১৮, ০৪:০৩ সকাল
আপডেট : ২০ মার্চ, ২০১৮, ০৪:০৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভারতে ৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার কবর শনাক্ত

আবু সালেহ রনি : একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে ভারতীয় ভূখণ্ডে সমাহিত করা হয়েছে, এমন প্রায় চার হাজার মুক্তিযোদ্ধার কবর শনাক্ত করেছে সরকার। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সময় তাদের সমাহিত করা হয়। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে এসে তৃতীয় দফায় মুক্তিযোদ্ধাদের দেহাবশেষ দেশে এনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পুনরায় দাফন করতেই এই কবরগুলো শনাক্ত করা হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে দেহাবশেষ দেশে আনার কার্যক্রম শুরু করতে ভারতের সংশ্নিষ্ট রাজ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতাও চালাচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এর আগে দুই দফায় ২০০৬ সালের ২৫ জুন পাকিস্তানের করাচি থেকে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের দেহাবশেষ ও ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ভারত থেকে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ দেশে ফিরিয়ে আনে সরকার। পরে তাদের দেহাবশেষ নতুন করে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ভারতীয় ভূখণ্ডে সমাহিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দেহাবশেষ দেশে আনার বিষয়টি শহীদ স্বজনদের অনেক দিনের দাবি। সরকার এ ব্যাপারে আন্তরিক। যাদের দেহাবশেষ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বা আগে থেকেই শনাক্ত করা আছে, তাদের দেহাবশেষ দেশে এনে পুনরায় দাফন করা হবে। স্বাধীন দেশের মাটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের স্থান হবে- এটাই তো সবার প্রত্যাশা।

মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দল কয়েক দফা ওই সব কবরস্থান পরিদর্শন করেছে। এ নিয়ে তারা সংশ্নিষ্ট রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেছে, অর্থাৎ কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। আমরা আশা করছি, এ বছর থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দেহাবশেষ দেশে আনার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যখন বাংলাদেশ সফর করেন, তখন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দেহাবশেষ আনার বিষয়ে প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা কমিটিও এ বিষয়ে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তবে এর আগে থেকেই ভারতে সমাহিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরগুলো শনাক্ত করার দুঃসাধ্য কাজ শুরু করেন লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক। ২০০৩ সাল থেকে তিনি নিজ উদ্যোগে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সমাধিস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি এক দশকে প্রায় তিন হাজার শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর শনাক্ত করেন। পরে ২০১২ সালে তাকে নিয়েই যৌথভাবে কাজ শুরু করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার মুক্তিযোদ্ধার কবর চিহ্নিত করা হয়েছে। এদিকে, ভারতে সমাহিত মুক্তিযোদ্ধাদের কবর চিহ্নিত করা নিয়ে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীককে ২০১৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেছে সরকার।

ভারতে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর শনাক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে লে. কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের কবর শনাক্ত করা হয়েছে। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর এসব কবরের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ভারতের সংশ্নিষ্ট রাজ্য ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে শনাক্ত হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কবরগুলো ভারত সরকারের পক্ষ থেকেও পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে স্থানীয় রীতিনীতি, ধর্মীয় ফতোয়া, ভারত সরকারের বিধি-বিধানের কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের দেহাবশেষ দেশে আনার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আশা করছি, এ বছরের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের দেহাবশেষ দেশে এনে পুনরায় কবরস্থ করার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।

তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের দেহাবশেষ শনাক্ত করার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার জীবিত সহযোদ্ধা ও ভারতের সংশ্নিষ্ট এলাকার মানুষের সঙ্গে সহযোগিতায় দেহাবশেষ শনাক্ত করা হচ্ছে। প্রথমে নিজ উদ্যোগে এ কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিচ্ছে।

ভারতে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাহিত করার প্রসঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আহত হয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা সীমান্তবর্তী ভারতের হাসপাতালগুলোতে মারা গেছেন। অনেকে যুদ্ধক্ষেত্রেও মারা গেছেন। পরিস্থিতির কারণে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বজন বা সহযোদ্ধারা তাদের ভারতীয় ভূখণ্ডে সমাহিত করেছেন, আবার কিছু নো ম্যানস ল্যান্ডেও (দুই দেশের মধ্যবর্তী শূন্যরেখা) সমাহিত করেছে। এখন তাদের দেহাবশেষ দেশে এনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত ও সংরক্ষণ করা হলে তা হবে জাতির অনন্য একটি কাজ। এ ধরনের কাজ তরুণ প্রজন্মকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্র তৈরির পাশাপাশি অনুপ্রাণিতও করবে। সূত্র: সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়